ঢাকা (২৪জানুয়ারী) : বিচারকদের বেতন-ভাতা বাড়ানো সংক্রান্ত জুডিশিয়াল সার্ভিস পে-কমিশনের (জেএসপিসি) সুপারিশ বাস্তবায়নে সরকারকে আবারও সময় দিয়েছেন উচ্চ আদালত। আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে এবার সুপারিশ বাস্তবায়ন নিয়ে সরকারকে কড়া বার্তা দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার সকালে শুনানি শেষে বিরতির পর দুপুর ১২টায় আদেশ দেওয়ার সময় প্রধান বিচারপতি মো.মোজাম্মেল হোসেন বলেন, “আপনারা আদালতের আদেশকে বাইপাস করার জন্য কোনো ডিভাইস তৈরি করতে পারেন না। আপনারা কমিটি গঠন করেছেন, নথি দাখিল করেছেন। আপনাদের এসব নোটিশ আমরা আমলে নিচ্ছিনা। আমাদের আগের আদেশই এখন পর্যন্ত বহাল।”
সর্বোচ্চ আদালত একাধিকবার আদেশ দিলেও সরকার জেএসপিসি’র সুপারিশ বাস্তবায়ন করেনি উল্লেখ করে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আমরা ২০০৯ সালে আদেশ দিয়েছিলাম, ২০১২ সালে আদেশ দিয়েছিলাম। আপনারাতো কিছুই করেননি। আজ আপনি আট সপ্তাহ সময় চেয়েছেন। এতো সময় কিছুতেই দেওয়া যায় না। আমরা তারিখ দিয়ে দিচ্ছি। এসময়ের মধ্যে আদেশ কার্যকর করে নিয়ে আসবেন। আমরা অন্য কোনো কথা শুনতে চাই না।”
প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, “আশা করি আপনি আদালতের মনোভাব বুঝতে পেরেছেন। সুপারিশ বাস্তবায়ন না হলে এখানে আপনাদেরকে অন্যভাবে আসতে হবে।”
আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি এস কে সিনহা বলেন, “আশা করি এর আগেই আপনাদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে।”
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম।
এর আগে গত বছরের ১৯ জুলাই জুডিশিয়াল সার্ভিস পে কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী বিচারকদের স্বতন্ত্র পে-স্কেল ২৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কার্যকর করার নির্দেশ দিয়েছিলেন সর্বোচ্চ আদালতের আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে বিভিন্ন ভাতা নির্ধারণ করে তা পে-স্কেলে সংযুক্ত করারও নির্দেশ দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ।
এরপর সুপ্রিম কোর্টের ওই নির্দেশ কার্যকর করে ১ অক্টোবর হলফনামার মাধ্যমে আদালতকে জানাতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। পরে আরো তিন দফা সময় বাড়িয়ে ১০ জানুয়ারি পযন্ত সরকারকে সময় দেন আপিল বিভাগ। আবারও দুই সপ্তাহ বাড়িয়ে ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় বাড়ানো। সময় বাড়ানোর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার ফের সরকারকে আরো একমাস সময় দেন আদালত ।
প্রসঙ্গত, ঐতিহাসিক মাসদার হোসেন মামলার রায়ে বিচারকদের পৃথক বেতন কাঠামো নির্ধারণের জন্যে জুডিশিয়াল সার্ভিস ‘পে-কমিশন’ গঠনের নির্দেশ দিয়েছিলেন সর্বোচ্চ আদালত। এ নির্দেশনার আলোকে ২০০৭ সালের ১৭ জুন ‘বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পে-কমিশন’ গঠন করা হয়। এ কমিশন ২০০৮ সালের ১৩ এপ্রিল বিচারকদের আলাদা বেতন কাঠামো নির্ধারণ করে তা বাস্তবায়নের জন্যে সরকারকে সুপারিশ করে।
ওই কমিশন একই বছরের ২ জুন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের জন্য আলাদা বেতন স্কেল ও ভাতার বিষয়ে সুপারিশ করে। এতে জেলা জজ বা সমপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সর্বনিম্ন বেতন স্কেল ৪০ হাজার টাকা, অতিরিক্ত জেলা জজ বা সমপর্যায়ের কর্মকর্তাদের ৩৬ হাজার টাকা, যুগ্ম জেলা জজ ও সমপর্যায়ের কর্মকর্তাদের ৩৩ হাজার টাকা, জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ ও সমপর্যায়ের কর্মকর্তাদের ২৬ হাজার ৫০০ টাকা, সিলেকশন গ্রেডপ্রাপ্ত সহকারী জজ ও সমপর্যায়ের কর্মকর্তাদের ২১ হাজার ৫০০ টাকা এবং সহকারী জজদের সর্বনিম্ন বেতন স্কেল ১৬ হাজার ৫০০ টাকা করার সুপারিশ করা হয়।
এ ছাড়া সমপরিমাণ জুডিশিয়াল অ্যালাউন্স, মহানগর ও জেলাভিত্তিক বাড়িভাড়া, মূল বেতনের সমপরিমাণ বছরে দুটি উৎসব ভাতা, প্রতি তিন বছরে মূল বেতনের সমপরিমাণ বিনোদন ভাতা ও ১৫ দিনের বিনোদন ছুটি, ৭০০ টাকা হারে মাসিক চিকিৎসা ভাতা, মূল বেতনের ৩০ শতাংশ পাহাড়ি ও দুর্গম এলাকার ভাতা সর্বোচ্চ তিন হাজার টাকা, জেলা জজদের ৮০০ টাকা ও মুখ্য মহানগর হাকিম বা মুখ্য বিচার বিভাগীয় হাকিমদের ৪৫০ টাকা এবং জেলা জজদের জন্য এক হাজার ২০০ টাকা ডোমেস্টিক অ্যালাউন্স, প্রতি বছর পাঁচ হাজার টাকা পোশাক ভাতা, প্রতি মাসে এক হাজার টাকা কর্মভার ভাতা, গাড়ির সুবিধা ও যাতায়াত ভাতা, টেলিফোন সুবিধা, চৌকি স্টেশনের বিশেষ ভাতা, প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান ভাতা, শিক্ষা সহায়ক ভাতা, ভ্রমণ ভাতা, দৈনিক ভাতা ও আয়কর দেওয়ার বিষয়ে সুপারিশ করা হয়।
পে-কমিশনের এ সুপারিশ বাস্তবায়নে আপিল বিভাগ ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর ও ২০১০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি দু’দফা সরকারকে নির্দেশ দিলেও তা আজও পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি।
এ পরিপ্রেক্ষিতে মাসদার হোসেন মামলার প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম গত ১১ জুন পে-কমিশনের সুপারিশ পুরোপুরি বাস্তবায়নের দাবিতে একটি আবেদন করেন।
নিউজরুম