ঢাকা (২৪জানুয়ারী) : অক্টোবরেই দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে এমন ধারণা নিয়েই এগুচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ ধারণা থেকেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতিও শুরু করেছে।
এ জন্য সংসদীয় আসনের সীমানা পুনরায় নির্ধারণ, আরপিও সংশোধন, ভোটার তালিকা চূড়ান্তকরণ, মালামাল সংগ্রহ, প্রয়োজনীয় কাগজ মুদ্রণ, প্রয়োজনীয় সামগ্রী ও দ্রব্যাদি আমদানি ও মজুদসহ নির্বাচনের জন্য সব প্রস্তুতি নিয়ে এগুচ্ছে ইসি।
দশম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের এ বিশাল কর্মযজ্ঞের জন্য আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে ৫০০ কোটি টাকা।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সংবিধানের ১২৩ (৩) অনুচ্ছেদ অনুসারে, সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান রয়েছে। গত ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর তারিখে নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সংসদ অধিবেশন শুরু হয়েছিল ২০০৯ সালের ২৫ জানুয়ারি। এ হিসেবে চলতি বছরের ২৬ অক্টোবর থেকে আগামী বছরের ২৪ জানুয়ারির মধ্যে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী অক্টোবরে দশম নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্য নিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছে কমিশন। এর আগেই চারটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর উপজেলা নির্বাচন করতে চায় ইসি। দশম সংসদ নির্বাচন এবং চার সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য এই মুহূর্তে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংস্কার, নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন, ভোটার তালিকা প্রকাশ ও নির্বাচনী আসনে সীমানা নির্ধারণসহ প্রয়োজনীয় কাজগুলো গুছিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
এরই মধ্যে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। সীমানা পুনরায় নির্ধারণ বিষয়ে জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে বৈঠক শুরু হয়েছে। আগামী ১৫ মার্চের মধ্যে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ৩০০ নির্বাচনী এলাকার প্রাথমিক তালিকা অনুমোদন এবং এপ্রিলে এলাকার খসড়া প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করে দাবি, আপত্তি, সুপারিশ নিষ্পত্তি করা হবে। আগামী জুনে ৩০০ নির্বাচনী এলাকার সীমানা চূড়ান্ত করে গেজেট আকারে প্রকাশ করার সম্ভাবনা রয়েছে।
দশম জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রায় ৫০০ কোটি টাকা ব্যয় অনুমান করেছে ইসি। এজন্য সম্ভাব্য কেন্দ্র, ভোটকক্ষসহ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণের তালিকা প্রস্তুতের পাশাপাশি নির্বাচনী মালামাল কেনার কাজও শুরু হয়েছে। ভোটারদের আঙুলের জন্য অমোচনীয় কালি বিদেশ থেকে আমদানি করা হবে। এজন্য ইউএনডিপির সঙ্গেও বৈঠক করেছে কমিশন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের মতে, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রস্তুত কমিশন। সংবিধান অনুযায়ী, সংসদ শেষ হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রস্তুত কমিশন।
তবে কোন সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, এ প্রসঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সাম্প্রতিক মন্তব্য ছিল, “কোন সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে তা জাতীয় সংসদ ঠিক করবে। কমিশন নির্বাচন সম্পন্ন করবে। এ জন্য নির্বাচন কমিশন প্রস্তুত।”
নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) জাবেদ আলী আগামী নির্বাচন সম্পর্কে বুধবার বাংলানিউজকে বলেন, “নির্ধারিত সময় অনুযায়ী জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন করার জন্য কমিশন প্রস্তুত রয়েছে। এজন্য সীমানা পুনরায় নির্ধারণ নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। পাশাপাশি গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধনেরও কাজ চলছে।”
তিনি আরও বলেন, “নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য এরই মধ্যে নতুন রাজনৈতিক দলগুলোকে নিবন্ধনের আহবান জানিয়ে দুই দফায় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। যে দলগুলো নিবন্ধনের আবেদন করেছে তাদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও যাচাই-বাছাই করে নিবন্ধণ দেওয়া হবে। যাচাই-বাছাইয়ে সময় লাগবে। সহসাই নিবন্ধন দেওয়া হবে না। তবে নির্বাচনের আগেই যোগ্য দলগুলোকে নিবন্ধণ দেওয়া হবে।”
নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ এ সম্পর্কে বলেন, “অক্টোবরে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিয়েই এগুচ্ছে কমিশন।”
নিউজরুম