২৪ জানুয়ারি, ২০১৩: দুজনই ফোকলা দাঁতের মিষ্টি হাসির অধিকারিণী। পার্থক্য হলো, একজনের বয়স ৯, অন্যজনের ৮৫। মার্কিন শিশুশিল্পী কুভেনঝুনে ওয়ালিস আর ফরাসি অভিনেত্রীএম্মানুয়েল্লে রিভা এখন একে অন্যের প্রতিদ্বন্দ্বী! এবারের অস্কারের সেরাঅভিনেত্রীর পুরস্কারের লড়াইয়ে যে মুখোমুখি বয়সের দিক দিয়ে দুই মেরুতে থাকাএই দুই শিল্পী!
বিস্টস অব দ্য সাউদার্ন ওয়াইল্ড ছবির হাশপাপ্পিচরিত্রটির জন্য মনোনয়ন পেয়েছে নয় বছর বয়সী ওয়ালিস। কানজয়ী আমুর ছবির জন্যমনোনয়ন পেয়েছেন রিভা। দুজনকে মিলিয়ে দিচ্ছে আরও একটি বিন্দু। সবচেয়ে কমবয়সে অস্কারের সেরা অভিনেত্রীর মনোনয়ন পাওয়ার নতুন রেকর্ড গড়েছে ওয়ালিস।সবচেয়ে বেশি বয়সে মনোনয়ন পাওয়ার রেকর্ডটি রিভার!
সবচেয়ে কম বয়সে মনোনয়নপাওয়ার আগের রেকর্ডটি ছিল টটাম ও’নিলের। ১৯৭৩ সালের ঘটনা এটি। ও’নিলের বয়সতখন ছিল ১০ বছর। সেবার পুরস্কারও জিতেছিলেন তিনি, সেরা পার্শ্ব অভিনেত্রীবিভাগে। সবচেয়ে বেশি বয়সে মনোনয়ন পাওয়ার আগের রেকর্ডটিও বেশ পুরোনো। ১৯৮৯সালে ৮০ বছর বয়সী জেসিকা টেন্ডি এই রেকর্ড গড়েছিলেন। তিনিও জিতেছিলেনপুরস্কার।
এবার অবশ্য ওয়ালিস বা রিভা দুজনেরই পুরস্কার পাওয়ার সুযোগনেই। হয় একজন জিতবেন, কিংবা জিতবেন না কেউই। সেরা অভিনেত্রী বিভাগেপুরস্কারের জন্য এই দুজনের সঙ্গে লড়ছেন জেসিকা চ্যাস্টেইন, নাওমি ওয়াটস ওজেনিফার লরেন্স। লরেন্স এবার বয়স-সংক্রান্ত একটি রেকর্ড গড়েছেন। এর আগে২০১০ সালে উইন্টার’স বোন ছবির জন্য মনোনয়ন পেয়েছিলেন। মাত্র ২২ বছর বয়সেদুটো মনোনয়ন পেলেন তিনি। এত কম বয়সে দুবার মনোনয়ন পাননি আর কেউ।
অনেকেইঅবশ্য বলছেন, এই বিভাগে পুরস্কারের দৌড়ে ওয়ালিস আর রিভাই এগিয়ে। বিশেষ করেওয়ালিস সত্যিই বিস্ময়কর এক প্রতিভা। এখন এই ফোকলা বুড়ির বয়স নয়, কিন্তুঅডিশনের সময় ছিল আরও পুঁচকে। মাত্র পাঁচ বছর বয়স। অবশ্য ওয়ালিসের বাবা-মাতখন বয়স লুকিয়েছিলেন। বলেছিলেন মেয়ের বয়স ছয়। কারণ অডিশনের সময় হাশপাপ্পিচরিত্রটির জন্য ছয় কিংবা তার চেয়ে বেশি বয়সীদের খুঁজছিলেন পরিচালক বেনজেইটলিন।
চার হাজার শিশু অভিনেতাকে টপকে চরিত্রটি পেয়ে যায় ওয়ালিস।জেইটলিন অবশ্য পরে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ওয়ালিসের সত্যিকারের বয়স জানলেওক্ষতি ছিল না। কারণ প্রথম দেখাতেই ওয়ালিসের মধ্যেই তিনি হাশপাপ্পিকে খুঁজেপেয়েছিলেন। শুধু তা-ই নয়, ওয়ালিসের ব্যক্তিত্বের সঙ্গে হাশপাপ্পিকে মিলিয়েদিতে চিত্রনাট্যেও অনেক পরিবর্তন আনেন পরিচালক।
ট্রাকচালক বাবা এবংস্কুলশিক্ষিকা মা চার সন্তানের সবার ছোটটির নাম রেখেছিলেন অদ্ভুতভাবে। মাকুলিনড্রেইয়া, বাবা ভেনজির নামের প্রথম অংশ দুটি নিয়ে ‘কুভেন’ আর সোয়াহিলিশব্দ ‘ঝুনে’ মানে পরি। সত্যিই এক ডানাকাটা পরি কুভেনঝুনে ওয়ালিস টুয়েলভইয়ারস আ স্লেভ নামের পরের ছবিতে কাজ করতে চলেছে ব্র্যাড পিটের মতো অভিনেতারসঙ্গে।
রিভার জন্ম সেই ১৯২৭ সালে। বেড়ে উঠেছেন প্যারিসে। বাবা ছিলেনইতালিয়ান চিত্রকর। শিল্পীসত্তাটা রক্তেই তাই মিশে আছে। প্রথম আলোচনায় আসেন১৯৫৯ সালের ছবি হিরোশিমা মন আমুর দিয়ে। আমুর নামের আরেকটি ছবি দিয়ে এইবয়সেও রীতিমতো কাঁপিয়ে দিয়েছেন। শখের আলোকচিত্রী রিভার নেশায় আছে কবিতাও।কাব্যগ্রন্থও প্রকাশিত হয়েছে তাঁর। হিরোশিমা মন আমুর ছবির শুটিং করার সময়তখনো ক্ষত বয়ে বেড়ানো জাপানের বিধ্বস্ত সেই শহরের ছবি বন্দী করেছিলেনক্যামেরায়। প্রায় ৫০ বছর পর সাদাকালো জীবন্ত সেই ছবিগুলো নিয়ে প্রদর্শনীওকরেছেন।
২৪ ফেব্রুয়ারি তাঁর ৮৬তম জন্মদিন। এ দিনই অস্কারের জাঁকালোআয়োজন। কে জানে, জন্মদিনের সবচেয়ে বড় উপহারটি সেখানেই পেতে যাচ্ছেন কিনা।তবে ওয়ালিসকে হারিয়ে পুরস্কারটি জিততে নিশ্চয়ই ভালোও লাগবে না তাঁর!