কৃষি ডেস্ক(২৩ জানুয়ারী): আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মুন্সীগঞ্জে এবার লক্ষ্যমাত্রার বেশি আলু উৎপাদনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বাজারে আলুর ভালো দাম থাকায় লাভের আশাও করছেন চাষিরা।
মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার চরকিশোরগঞ্জ এলাকার আলুচাষি রফিকের দেখা মিলল ক্ষেতে। আলুগাছের পরিচর্যা নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তিনি। তাকে প্রশ্ন করতেই তিনি জানান, এক কানি জমিতে তিনি আলু চাষ করছেন। গত বছর তিন কানি জমিতে আলু চাষ করে অনেক লোকসান গুনতে হয়েছে। তাই এবার বেশি চাষ করেননি। এক কানি জমিতে আলু চাষে খরচের একটা পরিসংখ্যান দিলেন তিনি।তিনি জানান, সার লেগেছে পাঁচ বস্তা যার দাম পড়েছে ছয় হাজার টাকা, কীটনাশক দিয়েছেন দুই হাজার ৫০০ টাকা, বদলির মজুরিতে খরচ হয়েছে তিন হাজার টাকা, পানি দিতে হয়েছে এক হাজার ৫০০ টাকা খরচ করে। জমিভাড়া পাঁচ হাজার। এ ছাড়াও আরো কিছু আনুষঙ্গিক খরচ আছে। তারপরও এবার আলুতে ২০-২৫ হাজার টাকা লাভ হবে বলে আশা করছেন। একই গ্রামের আরেক চাষি রিপন জানান, তিনি তিন কানি জমিতে এবার আলু চাষ করেছেন। আবহাওয়া ভালো থাকায় গাছ ভালো হয়েছে। দামটাও ভালো আছে। তিনি আশা করেছেন এবার আলুতে লাভবান হবেন। এখন শুধু অপেক্ষার পালা। আগামী এক দেড় মাসের মধ্যেই সব আলু তোলা সম্পন্ন হবে। সবুজের সমারোহে বিস্তীর্ণ অঞ্চল। আলু প্রধান এ অঞ্চলের কৃষকদের লাখ লাখ টাকা এখন মাটির নিচে আছে। কবে উঠে আসবে সোনার এ ফসল কৃষকেরা তারই অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, এবার আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। অনুকূল আবহাওয়া বাড়তি ফসল উৎপাদনে সহায়তা করবে। তারা আশা করছেন আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রাও ছাড়িয়ে যাবে। সূত্রে মতে, ২০১১-১২ অর্থবছরে আলু আবাদের পরিমাণ ছিল ৩৫ হাজার ৫৭৬ হেক্টর জমি। চলতি বছর ২০১২-১৩ অর্থবছরে আলু আবাদের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৭ হাজার ৩৩০ হেক্টর। গত অর্থবছরে আলু উৎপাদন হয়েছে ১১ লাখ ৭৪ হাজার ৮ মেট্রিক টন। চলতি বছর আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে সাত লাখ পাঁচ হাজার ৫৯২ মেট্রিক টন।
উপজেলা ভিত্তিক পরিসংখ্যান হলোÑ সদর উপজেলায় আলু আবাদ হয়েছে ৯ হাজার ২৪০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ৭৬ হাজার ৩৮৮ মেট্রিক টন। টঙ্গিবাড়ী উপজেলায় আবাদ হয়েছে ৯ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমি। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা এক লাখ ৮৩ হাজার ৪৫৫ মেট্রিক টন। শ্রীনগর উপজেলায় আবাদের পরিমাণ দুই হাজার ৫১০ হেক্টর জমি। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৯ হাজার ৩৯২ মেট্রিক টন। সিরাজদিখান উপজেলায় ৯ হাজার ৩০ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ৬৯ হাজার ৩৪২ মেট্রিক টন। লৌহজং উপজেলায় চার হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৮৪ হাজার ৬৭০ মেট্রিক টন এবং গজারিয়া উপজেলায় আবাদ হয়েছে দুই হাজার ৫৫০ হেক্টর জমি। আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪২ হাজার ৩৪৫ মেট্রিক টন।
আলু উৎপাদন ও দাম নিয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক কৃষিবিদ হাবিবুর রহমান বলেন, অনুকূল আবহাওয়া যেমন আলুগাছের জন্য বাড়তি সুবিধা দিয়েছে। তেমনি আলুর চড়া মূল্য এ জেলার কৃষকদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে আসবে বলে আমরা আশাবাদী।
নিউজরুম