ধর্ষিত দুই বোন চৌদ্দগ্রাম থানার ওসিকে হাইকোর্টে তলব

0
159
Print Friendly, PDF & Email

 

ঢাকা (২৩জানুয়ারী) : কুমিল্লায় ‘ভাইকে বেঁধে দুই বোনকে ধর্ষণে’র ঘটনায় চৌদ্দগ্রাম থানার ওসিকে তলব করেছেন হাইকোর্ট।
আগামী ২৮ জানুয়ারি আদালতে হাজির হয়ে ওসি মো. মোজাম্মেল হোসেনকে এ ঘটনায় তার ভূমিকার ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। বুধবার এ ঘটনায় ন্যায় বিচার নিশ্চিতকরণে করা একটি আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি মাহমুদুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

ফৌজাদারি কার্যবিধি অনুসারে ওই অপরাধে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে বিবাদীদেরকে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।পুলিশের মহাপরিদর্শক, কুমিল্লার জেলা প্রশাসক, পুলিশের চট্টগ্রাম বিভাগের উপ-মহাপরিদর্শক, কুমিল্লা জেলার এসপি এবং চৌদ্দগ্রামের ওসিকে দুই সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।  

গত ২২ জানুয়ারি একটি পত্রিকায় প্রকাশিত ‘এবার ভাইকে বেঁধে রেখে দুই বোনকে গণধর্ষণ’ শিরোনামের একটি প্রতিবেদন যুক্ত করে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস পর বাংলাদেশের পক্ষে বুধবার আবেদনটি করা হয়।

আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন, অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার।

জানা যায়, প্রেমের টানে বাড়ি ছেড়ে কুমিল্লায় দুইবোন গণধর্ষণের শিকার হয়েছে। এ ঘটনায় কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলা জুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হলে ঘটনার ৪ দিন পর ৫ ধর্ষককে গ্রেফতার করে চৌদ্দগ্রাম থানা পুলিশ। পরে নির্যাতিত দুই বোন ও পরিবারের সদস্যদের থানায় এনে মামলা নেওয়া হয়েছে। দুইবোনের বড় বোনের বয়স ১৮। আর ছোট বোনের বয়স (১৬)।

তাদের বাড়ি কুমিল্লা জেলার সদর উপজেলায়।

জানা গেছে, বড় বোন ভালোবাসতেন চৌদ্দগ্রাম উপজেলার উজিরপুর ইউনিয়নের হোসেন মিয়ার ছেলে রাসেলকে (২৪)। আর ছোটবোন ভালোবাসতো রাসেলের খালাতো ভাই একই এলাকার মাহবুব (২২) নামে এক যুবককে।
 
গত বৃহস্পতিবার সকালে দুই বোনের সঙ্গে রাসেল ও মাহবুবের সঙ্গে কথা হয়। এসময় তারা সিদ্ধান্ত নেয়, পালিয়ে বিয়ে করবে।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিকেল ৫টার দিকে দুইবোন তাদের সহকর্মী রেশমার বিয়েতে যাবে বলে ছোটভাইকে নিয়ে (বয়স ৮/৯ বছর হবে) বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়।

এদিকে, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী কুমিল্লার বাখরাবাদ এলাকায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে অপেক্ষায় ছিল রাসেল, মাহবুব তাদের বন্ধু সাবের টিলা গ্রামের মৃত সফিকুর রহমানের ছেলে আতিক হোসেন (৩০)।

দুই বোন আসলে তারা অটোরিকশায় ৩/৪ ঘণ্টা বিভিন্ন স্থান ঘুরে রাত ৯টার দিকে চৌদ্দগ্রাম উপজেলার শিবের বাজার এলাকা সংলগ্ন একটি কবরস্থানের পাশে যায়। সেখানে উপস্থিত ছিল আরও ৬ জন।

এর পর তারা ছোটভাইকে ওই কবরস্থান সংলগ্ন বাগানের একটি গাছের সঙ্গে বেঁধে ফেলে। এরপর ৮ জন পালাক্রমে দুইবোনের ওপর গণধর্ষণ চালায়।

একপর্যায়ে বড় বোন দৌড়ে আশ্রয় নেয় বাগান সংলগ্ন একটি বাড়িতে। এরপর ওই বাড়ির সদস্যরা গিয়ে ছোটবোন ও ভাইকে উদ্ধার করে।পরবর্তীতে এলাকার লোকজন বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করার আশ্বাস দিয়ে পর দিন দুইবোন আর ভাইকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।

সোমবার দুপুরে উজিরপুর ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয়ে গ্রাম্য সালিশ হওয়ার কথা থাকলেও বৃহস্পতিবার হওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।  

এদিকে, মঙ্গলবার রাতে পুলিশের কাছে দেওয়া তথ্যে এ ঘটনা প্রকাশ পায়।

এ বিষয়ে চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্র্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাম্মেল হোসেন জানান, গণধর্ষণের বিষয়ে থানায় কেউ অভিযোগ দেয়নি। বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে সোমবার সারা রাত অভিযান চালিয়ে ৫ ধর্ষককে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছে।

আটকরা হলেন- চৌদ্দগ্রাম উপজেলার সাবের টিলা গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে নজরুল ইসলাম নজির (২৫), একই গ্রামের মান্নানের ছেলে হানিফ (২৪), শিবপুর গ্রামের আলী আহাম্মদের ছেলে মাঈন উদ্দিন (১৮), একই গ্রামের ছিদ্দিকুর রহমানের ছেলে শামীম (২২) ও মুতুর্জার ছেলে হানিফ (২৪)।

নিউজরুম

শেয়ার করুন