ঢাকা (২৩জানুয়ারী) : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হবে। আমাদের সময়ে ক্রটিমুক্ত নির্বাচন হয়েছে। কোনো নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন ওঠে নি। অনেক জায়গায় আমাদের প্রার্থীরা পরাজিত হয়েছে।
বুধবার বেলা ১২টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সাম্প্রতিক রাশিয়া সফরের অভিজ্ঞতা দেশবাসীকে জানাতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন।
এসময় প্রধানমন্ত্রী তার সময়ে সংসদ উপ-নির্বাচন, ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা নির্বাচনের বিভিন্ন দিকও তুলে ধরেন।
রাশিয়া থেকে সমরাস্ত্র ক্রয় নিয়ে ভবিষ্যতে যদি মামলা হয় এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘‘শোনেন আমি রাজনীতিবিদ। মামলা হতেই পারে। আমি মামলা নিয়ে চিন্তা করি না। নিজের কাছে পরিষ্কার থাকাটাই মূল কথা।’’
‘আমার রাজনীতি নিজের জন্য না। দেশের মানুষের জন্য। একটা আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করি’ একথাও বলেন তিনি।
সংবাদভিত্তিক স্যাটেলাইট টেলিভিশনের এক সাংবাদিক প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন, ‘‘আপনি এর আগের বার ক্ষমতায় এসে রাশিয়া থেকে মিগ ২৯ কিনেছিলেন।তখন ওই ক্রয়ের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল।এবার আবারও সমরাস্ত্র ক্রয় করলেন। ভবিষ্যতে তো আবারও মামলা হতে পারে।’’
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘এর আগে চীন থেকে ট্যাংক কিনলাম, সেটা নিয়ে তো কথা উঠলো না। তা-ও আবার বাজেটের টাকা থেকে সরাসরি কিনলাম। চীন থেকেও ক্রেডিট নেওয়া হয়েছিল। রাশিয়া থেকে বেশি সুদেই নেওয়া হয়েছিল। এবার ক্রেডিট পেয়েছি। ৫বছর পর থেকে পরিশোধের সুযোগ পাচ্ছি।’’
অস্ত্র ক্রয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘অনেকে বলেন কি দরকার। আবার যখন আকাশে ওড়ে তখন তো ভালই লাগে। স্বাধীনতার পরে মিগ ২১ আমাদের জন্য আনা হয়। এর আগের বার মিগ ২৯ এনেছিলাম। আসলে তারা কী চায় না সামরিকবাহিনী আধুনিক হোক, শক্তিশালী হোক, স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় উপযুক্ত হোক। তা তারা চান না।’’
জানুয়ারির মধ্যে বিশ্বব্যাংক থেকে পদ্মাসেতুর অর্থায়ন নিয়ে সিদ্ধান্ত না দিলে ফেব্রুয়ারিতে নিজেরা বিকল্প ব্যবস্থা নেবেন বলেও ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘‘আমাদের অর্থমন্ত্রী বিশ্বব্যাংককে অর্থায়ন নিয়ে জানুয়ারির মধ্যে সিদ্ধান্ত জানাতে বলেছে। যদি তারা তা না করেন তবে আমরা নিজেরাই বিকল্প ব্যবস্থা নেবো। পদ্মাসেতু নিয়ে দুর্নীতি হয়নি, বিশ্বব্যাংকের মতে ষড়যন্ত্রের চেষ্টা হয়েছে। যদি ষড়যন্ত্রের চুলচেরা বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে বাংলাদেশে কোন কিছুই করা যাবে না। তাছাড়া বিশ্বব্যাংক প্যানেলের একটি কপি আমরা পাওয়ার আগে কিভাবে একটি পত্রিকা কীভাবে হুবহু প্রকাশ করে। আমার মনে হয় এখানেও দুরভিসন্ধি রয়েছে।’’
‘‘একই সময় সেপ্টেম্বর অক্টোবরে রূপপুরের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ শুরু করা সম্ভব হবে’’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘তবে এরই মধ্যে বাংলাদেশকে বেশ কিছু কাজ করতে হবে। রাশিয়া প্রযুক্তিগত ও অর্থায়ন সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছে।’’
রাশিয়াকে পরম বন্ধু উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘রাশিয়ার মানুষ বঙ্গবন্ধুর কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির মাঝে তারা বাংলাদেশকে দেখে। রাশিয়ার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অমরত্ব লাভ করেছে। আমার সফরকালে ওই সম্পর্ক আবারও জোরদার হয়েছে। বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবে দেশটি থেকে সমরাস্ত্র সংগ্রহ করা হচ্ছে। জাতিসংঘে আমরা যখনই সেনা পাঠিয়েছি তখন তাদের সঙ্গে বিভিন্ন যানও পাঠানো হয়েছে। যেগুলো রাশিয়া থেকে কেনা। জাতিসংঘ থেকে টাকা পেয়ে তা পরিশোধ করা হয়েছে।’’
রাশিয়াকে ‘পরমবন্ধু’ উল্লেখ করে শুল্কমুক্ত পণ্য আমদানি করার জন্য দেশটিকে অনুরোধ করা হয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৪ থেকে ১৬ জানুয়ারি রাশিয়া সফর করেন। এ সময় পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন, কৃষি, প্রতিরক্ষা, শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য ও সংস্কৃতি বিনিময়সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে তিনটি চুক্তি ও ছয়টি সমঝোতা স্মারক সই হয়।
নিউজরুম