২৩ জানুয়ারী: সম্প্র্রতি ইডেন কলেজের এক শিক্ষার্থীর অ্যাসিড সন্ত্রাসের শিকার হওয়ারঘটনা এবং পর পর কয়েকটি নারী ও শিশু ধর্ষণের ঘটনা জনমনে শঙ্কা তৈরি করেছে।নির্যাতনের খবরের সঙ্গে সুখবরও এসেছে। ধর্ষণ মামলার বিচারে সম্প্রতিসিরাজগঞ্জে একজন এবং ঢাকায় দুজনের মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়াহয়েছে।অ্যাসিড-সন্ত্রাসের দায়ে গত ১০ বছরে ১৩টি মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়েছে।যদিও নির্যাতনের এসব ঘটনার তুলনায় এ শাস্তির পরিসংখ্যান খুবই কম; তবু এরায়গুলোর মাধ্যমে এটাই প্রমাণিত হয় যে এসব নির্যাতনের সর্বোচ্চ বিচার হওয়াসম্ভব। এ অপরাধগুলোর বিচারের জন্য বাংলাদেশে কার্যকর রয়েছে একাধিক আইন।অ্যাসিড-সন্ত্রাসের বিচারের জন্য অ্যাসিড অপরাধ দমন আইন ২০০২ দেশে কার্যকরআছে। পাশাপাশি ২০০২ সালে অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণ আইন নামে আলাদা আইন করা হয়েছে।ধর্ষণের বিচারের জন্য দণ্ডবিধি আইনের পাশাপাশি নারী ও শিশু নির্যাতন দমনআইন ২০০০ (সংশোধনী ২০০৩)-এর আশ্রয় নেওয়া যায়। অ্যাসিড-অপরাধের বিচারের জন্যরয়েছে অ্যাসিড অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল এবং ধর্ষণের অপরাধের বিচার হয় নারী ওশিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে।
কীভাবে আইনের আশ্রয় নিতে হবে
কোনোব্যক্তি অ্যাসিড নিক্ষেপে ক্ষতিগ্রস্ত হলে বা ধর্ষণের শিকার হলে তিনি বাতাঁর পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি আইনগত সহায়তা চেয়ে প্রতিটি জেলা জজ আদালতেঅবস্থিত লিগ্যাল এইড (আইনগত সহায়তা) কমিটির কাছে আবেদন করতে পারবেন। যেসবজেলায় হাসপাতালে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার (ওসিসি) রয়েছে, সেখানে আইনগতসেবা ও চিকিৎসা পেতে পারেন। এ ছাড়া ঢাকার তেজগাঁও থানায় ভিকটিম সাপোর্টসেন্টারেও সহায়তা পেতে পারেন।
অ্যাসিড কিংবা ধর্ষণের শিকার কোনো নারী বাতাঁর অভিভাবককে কাছের থানায় যত দ্রুত সম্ভব এজাহার হিসেবে মামলা করতে হবে।থানায় যদি মামলা হয়, তাহলে রাষ্ট্র বাদী হিসেবে মামলা লড়বে। পুলিশ তদন্তপ্রতিবেদন দেওয়ার পর বিচারের জন্য সেটি সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালে প্রেরণ করাহবে।
যদি থানা মামলা নিতে না চায়, তাহলে সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালে নালিশি মামলা করতে হবে।
অ্যাসিড-সন্ত্রাসের শাস্তি
যদিকোনো ব্যক্তি অ্যাসিড দ্বারা অন্য কোনো ব্যক্তির মৃত্যু ঘটায় বা মৃত্যুঘটানোর চেষ্টা করে, তাহলে ওই ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রমকারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে এবং সর্বোচ্চ এক লাখ টাকার অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবে।যদি কোনো ব্যক্তি অন্য বা অন্যদেরকে অ্যাসিড দ্বারা এমনভাবে আহত করে, যারফলে তার দৃষ্টিশক্তি বা শ্রবণশক্তি সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে নষ্ট হয় বামুখমণ্ডল, স্তন ও যৌনাঙ্গ বিকৃত বা নষ্ট হয়, তাহলে ওই ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ডবা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে এবং এর অতিরিক্ত সর্বোচ্চ এক লাখটাকার অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবে। যদি কোনো ব্যক্তি অ্যাসিড-অপরাধ সংঘটনেসহায়তা করে, তাহলে ওই অপরাধ সংঘটনের জন্য যে শাস্তি নির্ধারিত আছে, সহায়তাকারী ব্যক্তিও একই শাস্তি পাবে।
ধর্ষণের শাস্তি
নারী ওশিশু নির্যাতন দমন আইন অনুযায়ী, ধর্ষক যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিতহবে এবং অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবে। ধর্ষণের শিকার নারী বা শিশুরমৃত্যু হলে অপরাধী মৃত্যুদণ্ডে বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেএবং সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবে। দলবদ্ধভাবে কোনো নারী বাশিশুকে ধর্ষণ করা হলে এবং ধর্ষণের কারণে যদি ওই নারী বা শিশুর মৃত্যু ঘটেবা আহত হয়, তাহলে ওই দলের প্রত্যেক ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ডে বা যাবজ্জীবন সশ্রমকারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে এবং অতিরিক্ত এক লাখ টাকা অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবে।
নিউজরুম