রাজশাহী (২২জানুয়ারী) : পুনরায় সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক একিউএম বদরুদোজ্জা চৌধুরী ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। তা না হলে জনগণকে সাথে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার ডাক দেন এ দুই প্রবীণ রাজনীতিক।
সোমবার বিকেলে রাজশাহী নগরীর আলুপট্টিতে জাতীয় ঐক্যের ডাকের জনসভায় তারা ঐক্যের ডাক দেন।
অধ্যাপক একিউএম বদরুদোজ্জা চৌধুরী বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সরকার নির্বাচন চাই। এই দাবিতে আপনাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমরা জনগণকে হতাশ করবো না। তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্টের দেয়া রায়ের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, বিচারকরা তাদের রায়ের একটি অংশে আরো দুই মেয়াদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে পারে এই অংশটিকে বাদ দিয়ে সংবিধানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলে তড়িঘড়ি করে সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে।
এছাড়া সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম সামসুল হুদাকে উদ্ধৃতি করে তিনি বলেন, তিনিও দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছিলেন। ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য আওয়ামী লীগ তাদের অধীনে যে প্রহসনের নির্বাচন করার পাঁয়তারা করছে তা জনগণকে সাথে নিয়ে প্রতিহত করা হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। তিনি সমাবেশ থেকে পুনরায় সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। তা না হলে জনগণকে সাথে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার ডাক দেন এ প্রবীণ রাজনীতিক। একিউএম বদরুদোজ্জা চৌধুরী প্রশ্ন করেন, যেখানে শ্রমিক ও কৃষক শ্রম ও ফসলের ন্যায্য মূল্য পায় না, সেখানে কী করে রাশিয়া থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে আট হাজার কোটি টাকার অস্ত্র কিনে আনা হলো কার স্বার্থে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, আপনি যে পিপার সপ্রে শিক্ষকদের ওপর করেছেন পুলিশ একদিন আপনার ওপরও সেই সপ্রে করবে। ড. কামাল হোসেন বলেন, দেশ পাগলের হাতে চলে গেছে। পাগলদের দ্বারা দেশ পরিচালিত হচ্ছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বড় পাগল বলে দাবি করে তিনি বলেন, এসব পাগলকে দ্রুত মানসিক হাসপাতালে পাঠানো উচিৎ। তা না হলে দেশ ও জাতি মুক্তি পাবে না। ড. কামাল হোসেন আরো বলেন, দেশে আজ আইনের শাসন নেই। ছাত্রলীগের ছেলেরা মানুষকে কুপিয়ে গুলি করে মারছে। এর আগের সরকারের আমলেও এসব ঘটনা ঘটেছে। অন্যদিকে রাষ্ট্রপতি তার ক্ষমতা বলে খুনিদেরকে মুক্ত করে দিচ্ছে। কামাল হোসেন চ্যালেঞ্জ করে বলেন, যুক্তিযুক্ত কারণ ছাড়া কোনো আসামিকে ছেড়ে দেয়ার অধিকার রাষ্ট্রপতির নেই। সংবিধানের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে এটা করা হচ্ছে। তিনি জাতীয় স্বার্থে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
সভায় নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, রাষ্ট্রীয় মদদে ছাত্রলীগ ময়মনসিংহ বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সহিংসতা ঘটাচ্ছে। যার বলি হচ্ছে সাধারণ মানুষ। এ সরকারের আমলে ধর্ষণের ঘটনা আশঙ্কাজনকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এর প্রতিবাদ জানাতে হবে।
ড. কামাল হোসেন ও অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর ডাকে সাড়া দিয়ে আগামী দিনে নতুন নেতৃত্ব আনার সংগ্রামে সকলকে অবতীর্ণ হওয়ার আহ্বানও জানান মাহমুদুর রহমান। বিকল্পধারা রাজশাহী জেলা শাখা সভাপতি আকতারউজ্জামান বাবলুর সভাপতিত্বে সভায় বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) আবদুল মান্নান, গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু, যুবধারার সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আসাদুজ্জামান বাচ্চু, গণফোরাম রাজশাহী মহানগর শাখা সদস্য সচিব আতাউর রহমান বাবলু, গণফোরাম নেতা অ্যারেভাকেট হোসেন আলী পেয়ারা, মামুনুর রশীদ, অ্যাডভোকেট রফিকুল হাসান, বিকল্পধারার নেতা এডভোকেট শাহ আহমেদ বাদল, ইঞ্জিয়ার মোহাম্মদ ইউসুফ ,নাটোর জেলা সভাপতি খন্দকার জুবায়ের হোসেন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। জনসভা শেষে অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী রাজশাহী প্রেসক্লাবে গিয়ে সেখানকার সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেন। এসময় বিকল্পধারার সিংড়া উপজেলা শাখার সভাপতি ইসাহাক আলী, সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, রাজশাহী প্রেসক্লাব সভাপতি আনোয়ারুল আলম ফটিক, সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী ‘আঞ্জুমান হেদায়েতুল উম্মত বাংলাদেশ’ নামের একটি বেসরকারি সংস্থার রাজশাহী শাখা উদ্বোধন করেন।
নগরীর সুজানগরে শাখা উদ্বোধনকালে বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) আব্দুল মান্নান, ‘আঞ্জুমান হেদায়েতুল উম্মত বাংলাদেশ’ এর প্রশাসনিক কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ২১ অক্টোবর ঢাকার রেডিশন হোটেলে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও ড. কামাল হোসেন জাতীয় ঐক্যের ডাক দেন।
এরপর গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর সিলেটের কোর্ট পয়েন্টে প্রথম জনসভা করেন তারা। রাজশাহীতে গতকালের তাদের জনসভা ছিলো দ্বিতীয় অনুষ্ঠান।
সম্পাদনা, আনোয়ার হোসেন আলীরাজ হেড অব নিউজ