খাগড়াছড়ি (২০জানুয়ারী) : নারীর প্রতি ক্রমবর্ধমান সহিংসতার প্রতিবাদ এবং আদিবাসী একটি মেয়েকে ধর্ষণের পর হত্যার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারের দাবিতে আগামী ২৭ জানুয়ারি তিন পার্বত্য জেলায় সকাল-সন্ধ্যা সড়ক ও নৌপথ অবরোধের ডাক দেওয়া হয়েছে।
রোববার সকাল সাড়ে ১১টায় খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাব হলরুমে উইমেন্স রিসোর্স নেটওয়ার্ক, দুর্বার নেটওয়ার্ক ও বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্ক যৌথ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে অবরোধের ঘোষণা দেয়।
সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন দুর্বার নেটওয়ার্কের খাগড়াছড়ি জেলা প্রতিনিধি লায়লা চাকমা।
এসময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নারী নেত্রী শাপলা দেবী ত্রিপুরা, রেনি চাকমা, নিগার সুলতানা প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সারাদেশের মতো পার্বত্য অঞ্চলেও ধর্ষণ, গণধর্ষণ ও ধর্ষণের পর হত্যা, এসিড নিক্ষেপ, কেরোসিন ঢেলে হত্যা, যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনসহ বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলছে।
সম্মেলনে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের ২০১০-২০১১ সালে সারাদেশে নারী নির্যাতনের সংখ্যাগত তুলনামূলক তথ্য উপস্থাপন করা হয়।
এতে দেখা যায়, ২০১০ সালে ধর্ষণের শিকার হয় ৫৯৩ জন, গণধর্ষণের শিকার হন ১০৭ জন, ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় ৬৬ জনকে, শ্লীলতাহানি হয় ২৪০ জনের, এসিডদগ্ধ হন ১১৯ জন, অগ্নিদগ্ধ হন ৯১ জন, অপহৃত হন ৪৮৫ জন, পাচারের শিকার হন ৩২৭ জন নারী ও শিশু, যৌতুকের কারণে হত্যা করা হয় ১৩৭ জন গৃহবধূকে, যৌতুকের কারণে নির্যাতিত হন ১২৮ জন, শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন ৪১৭ জন, রহস্যজনক মৃত্যু হয় ১০৫ জনের, ফতোয়ার শিকার হন ৩৯ জন, হত্যা ১১২৫, উত্ত্যক্ত করা হয় ৮০১ জনকে এবং উত্ত্যক্তের কারণে ২৭টি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে।
২০১১ সালে ধর্ষণের শিকার হন ২৮৮ জন, গণধর্ষণের শিকার হন ৭৪ জন, ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় ৪৯ জনকে, শ্লীলতাহানি করা হয় ৩৬০ জনের, এসিডদগ্ধ হন ৪৬ জন, অগ্নিদগ্ধ হন ১৬ জন, অপহৃত হন ৯১ জন, পাচারের শিকার হন ৮০ জন নারী ও শিশু, যৌতুকের কারণে হত্যা করা হয় ১৬১ জনকে, শারীরিক নির্যাতন করা হয় ২৪৭ জনকে, যৌতুকের কারণে নির্যাতিত হন ১০৮ জন, রহস্যজনক মৃত্যু হয় ৯৫ জনের, ফতোয়ার শিকার হন ২৫ জন, হত্যা করা হয় ৪৮৪ জনকে, উত্ত্যক্ত করা হয় ৫৫২ জনকে ও উত্ত্যক্ত করার কারণে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন ১৭ জন।
সংবাদ সম্মেলনে অবিলম্বে প্রতিটি জেলায় ‘ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেল’ চালু, ভিকটিম সার্পোট সেন্টার স্থাপন, সারাদেশের সব ধর্ষক ও নির্যাতককে গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করাসহ ১০টি দাবি জানানো হয়।
পরে সম্মেলনে তিন নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে ২৭ জানুয়ারির সড়ক ও নৌপথ অবরোধ সফল করার আহ্বান জানানো হয়।