জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় চালসহ নিত্যপণ্যের দাম চড়া

0
159
Print Friendly, PDF & Email

ঢাকা (১৯জানুয়ারী) : জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় পাইকারি ও খুচরা বাজারে চালসহ নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে আরও একধাপ। পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে পরিবহন খরচ ট্রাক প্রতি বেড়েছে ২ থেকে তিন হাজার টাকা।

ফলে সব ধরনের নিত্যপণ্যের দামও বেড়েছে সে হারে। রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়েছে সবচেয়ে বেশি। পরিবহন খরচ বাড়ার কারণে প্রতিকেজি চাল তিন থেকে চার টাকা করে বেড়েছে। রাজধানীর সর্ববৃহৎ পাইকারি চালের বাজার বাবু বাজার ও কদমতলী বাজারে ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে। বাবু বাজারে পাইকারি চাল বিক্রেতা ও বসুন্ধরা রাইস এজেন্সির মালিক সালাউদ্দিন হোসেন শান্ত বাংলানিউজকে বলেন, “তেলের দাম বাড়ায় বেড়েছে চালের দামও। কারণ ট্রাক প্রতি পরিবহন খরচ বেড়েছে দুই থেকে তিন হাজার টাকা।”

টাঙ্গাইলের গোপালপুর থেকে ৩০০ বস্তা চাল আনতে ট্রাক প্রতি ভাড়া ছিলো ৯ হাজার টাকা। তেলের দাম বাড়ার কারণে তা এখন বেড়ে দাঁড়িছে ১১ হাজার টাকা। এছাড়া রাজধানীতে কুষ্টিয়া থেকে ৩০০ বস্তা চালের পরিবহন খরচ ছিলো ১৫ হাজার টাকা। বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজারে।

নওগাঁ, কুষ্টিয়া ও চাঁপাইনবাগঞ্জ থেকে নগরীতে বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) দামের তফাৎ ৫০০ টাকা। যা আগে ছিলো দুই থেকে তিনশ’ টাকা। ৫০ কেজি ওজনের  লাঙ্গল মার্কা স্পেশাল মিনিকেট  চালের বস্তা চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিক্রি হচ্ছে ১৮শ’ টাকা অথচ বাবু বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ২৩’শ টাকা বস্তা।

চাল কল মালিকরা দাবি করছেন, তেলের দাম বাড়ার কারণে বেশি দামে কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনতে  হয়। প্রতি মণ ধান কৃষকের কাছ থেকে কিনতে হয় ৮’শ থেকে ১ হাজার টাকা দরে । এছাড়া দাম বাড়ার কারণে কৃষক ধান মজুদ করে রেখেছেন বলেও দাবি করেন তারা।

নওগাঁর গ্রামীণ অটো মিলের মালিক সুলতান মাহমুদ টেলিফোনে বাংলানিউজকে জানান, “তেলে দাম বাড়ার কারণে চাষিরা ধান মজুদ করে রেখেছেন। ফলে ধানের আমদানি কম। মণ প্রতি ধান এখন এক থেকে দেড়শ’ টাকা বেশি দামে নিতে হচ্ছে।

খুচরা বিক্রেতাও আবার জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার দোহাই দিয়ে আরও একধাপ বাড়াচ্ছে চালের দাম। ফলে চাল কিনতে নাভিশ্বাস উঠছে সাধারণ মানুষের।

খুচরা বাজারে প্রতিকেজি মিনিকেট ৪৫-৪৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে যা তেলের দাম বাড়ার আগে বিক্রি হয়েছে ৩৮-৪০ টাকা দরে।

নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৪৮ টাকা দরে যা তেলের দাম বাড়ার আগে ছিল ৪০-৪২ টাকা। পারিজা চাল বিক্রি হচ্ছে ৩৬ টাকা দরে যা আগে ছিল ৩২ টাকা, স্বর্ণা বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকায় যা তেলের দাম বাড়ার আগে ছিল ৩২ টাকা।

চালের দাম বাড়া সম্পর্কে গৃহিণী ফারজানা হক বাংলানিউজকে বলেন, ‘এক কেজি চাল কিনতে যদি ৪৫ টাকা দিতে হয়ে তবে আমাদের মতো মধ্যবিত্তদের লবণ কেনার টাকা থাকে কোথায়?’

নগরীর  পলাশি কাঁচাবাজারের চাল বিক্রেতা ঈসমাইল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘পরিবহন খরচা বাড়ার কারণে আমাদের বেশি দামে চাল বিক্রি করতে হচ্ছে। অথচ এখন মিনিকেট ও আমনের মৌসুম, আমাদের এখন কম দামে চাল বিক্রির কথা।’

অন্যদিকে কৃষক বলছে ডিজেলের দাম লিটার প্রতি ৭ টাকা করে বেড়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে বেশি দামে ধান বিক্রি করতে হচ্ছে কল মালিকের কাছে। যে ডিজেল ৬১ টাকা দরে  কিনেছি তা এখন ৬৮ টাকায় কিনতে হচ্ছে।

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় শুধু চাল নয় অন্যান্য পণ্যের ওপরও এর প্রভাব পড়ছে টর্নেডোর মতো।

সবজি ও মাছের বাজারে গিয়ে বিপাকে পড়ছেন ক্রেতারা।

শীতকালে সবজির দাম কম হওয়ার কথা। কিন্তু বিক্রেতারা বলছেন পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় আমাদের বেশি দামে সবজি বিক্রি করতে হচ্ছে।

রাজধানীতে প্রতিকেজি মরিচ ৮০, শসা ৪০-৪৫, শিম ৪০, বিচি শিম ৫০, পেঁপে ২৫, গাজর ৩০, সাদা মূলা ৩০, লাল মূলা ৩৫, বেগুন ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতিটি বাঁধাকপি ৩৫, ফুলকপি ৪০ ও লাউ  ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে ।

বছরের শুরুতে ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়লেও কিছুদিন পর তা কমতে শুরু করে। বর্তমানে পাইকারি ও খুচরা বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে আবার বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দাম। প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি ১৫০ টাকা থেকে ১৫৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

প্রতিকেজি গরুর মাংস ২৮০ টাকা ও খাসির মাংস  ৪০০-৪৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

ডিমের দামও চড়া। প্রতিহালি দেশি মুরগির ডিম  ৪৫, হাঁস ৪৪, ফার্মের সাদা ডিম ৩৮ ও লাল ডিম ৩৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মাছের বাজারও চড়া। প্রতিকেজি তেলাপিয়া ১৪০, সরপুটি ১৫০, মাঝারি রুই ১৮০, বড় রুই ৩০০, কই ২২০, আইড় ৪৫০-৫০০, কোরাল ৪০০, চিতল ৪৫০, শিং মাছ ৬০০-৭০০, কাতলা ২০০-২৫০, পাঙ্গাস ১২০, পাবদা ৫০০-৬০০, টেংরা ৩০০ টাকা  ও পাঁচ মিশালি মাছ ১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

নিউজরুম

 

শেয়ার করুন