(১৬ জানুয়ারী): পৃথিবীর একেবারে দক্ষিণের বরফ-ঢাকা অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশে বাংলাদেশের মানুষের পা পড়েছে আগেই। তবে অ্যান্টার্কটিকার সর্বোচ্চ পবর্তশৃঙ্গ ভিনসন ম্যাসিফের চূড়ায় বাংলাদেশের পতাকা ওড়ার ঘটনা আগে ঘটেনি। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এ কাজটি করলেন এভারেস্ট বিজয়ী ওয়াসফিয়া নাজরীন, ৪ জানুয়ারি ভিনসন সময় (অ্যান্টার্কটিকায় একেক অঞ্চলে একেক রকম সময়) বিকেল চারটায়। ওয়াসফিয়া নাজরীন পৃথিবীর সাত মহাদেশের সাত পর্বতচূড়া জয়ের যে ‘বাংলাদেশ অন সেভেন সামিট’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন, ১৬ হাজার ৫০ ফুট উঁচু ভিনসন ম্যাসিফ আরোহণের মাধ্যমে তার চারটি ধাপ অতিক্রম হয়ে গেল। গত ২৬ মে তিনি মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেন।
ভিনসন ম্যাসিফ জয়ের পর এখনো দেশে ফেরেননি ওয়াসফিয়া। চিলি থেকে ই-মেইলেই জানালেন এই অভিযানের সংক্ষিপ্ত তথ্য। গত ১২ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে কানাডা যান তিনি। কানাডায় তাঁকে দক্ষিণ মেরুর এই পর্বতাভিযানের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ নিতে হয়। প্রশিক্ষক পৃথিবীর প্রথম সেভেন সামিটজয়ী পর্বতারোহী প্যাট্রিক মোরো। ওয়াসফিয়া বললেন, ‘সেটা ছিল কঠোর প্রশিক্ষণ।ক্রিভাস রেসকিউ, গ্লেসিয়ার ক্রসিং, স্লেজিং ও স্কিয়িং—এসব শিখি। এরপর চলে যাই চিলিতে।’ চিলি থেকে ওয়াসফিয়া অ্যান্টার্কটিকা রওনা দেন ২৯ ডিসেম্বর।সেদিনই পৌঁছান বেসক্যাম্পে। ভিনসন ম্যাসিফ অভিযানে ওয়াসফিয়ার সঙ্গে ছিলেন দুজন মার্কিন পর্বতারোহী ডিলান টেইলর ও স্কট ওয়াজনি। ডিলান ছিলেন গাইড হিসেবে।
‘অ্যান্টার্কটিকার পাহাড় পৃথিবীর অন্য পাহাড়গুলোর চেয়ে আলাদা। হেঁটে বা গ্লেসিয়ার ট্রাভেল করে যেতে হয়, যা শুধু দক্ষিণ মেরুতেই করতে হয়।’ ৪ জানুয়ারি ভিনসন ম্যাসিফের চূড়ায় সফলভাবেই ওঠেন তিনি। ওড়ান বাংলাদেশের পতাকা। তবে যেহেতু তিনি বিশ্বব্যাপী একাত্তরের চেতনাকে ছড়িয়ে দিতে চান, তাই সঙ্গে নিয়েছিলেন একাত্তরের পতাকাও।
নেমে আসাটা নির্বিঘ্ন হয়নি ওয়াসফিয়ার। বললেন, ‘সামিট করে হাই-ক্যাম্পে ফিরে তুষারঝড়ে পড়ি আমরা। তখন বাতাসের গতি প্রতি ঘণ্টায় ৬০ নটের বেশি। আর তাপমাত্রা মাইনাস ৩৫ থেকে মাইনাস ৪৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড ছিল।’ এ অবস্থার মধ্যেই দুই দিন আটকে থাকেন তাঁরা।
হাই থেকে লো ক্যাম্পে নামার দিন পুরোটাই ছিল সাদায় ঢাকা। কিছু দেখা যাচ্ছিল না কোনো দিকে। ‘আবার আটকে যাই আমরা। আর আমি পাহাড় থেকে পিছলে পড়েও যাচ্ছিলাম। ডিলান টেইলর আমাকে রশি দিয়ে টেনে তোলেন।’
বেসক্যাম্পে ফিরে আসার পর ওয়াসফিয়া শুনলেন খারাপ আবহাওয়ার কারণে বিমান আসবে না। সেখানে ৭ থেকে ১১ জানুয়ারি হিমাঙ্কের অনেক নিচের ওই তাপমাত্রায় থাকতে হলো তাঁকে। এরপর ফিরে আসেন চিলিতে। গতকাল ১৫ জানুয়ারি সকালে চিলি থেকে কানাডা গেছেন ওয়াসফিয়া। দেশে ফেরার আশা করছেন ২২ জানুয়ারি। ২৩ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলন করে আরও ছবি দেখাবেন বলে জানালেন। ওয়াসফিয়ার এই অভিযানে পৃষ্ঠপোষকতা করেছে ব্র্যাক। সহযোগিতায় বিকাশ লিমিটেড ও ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড।