সেরা ব্যাটসম্যান শচীন টেন্ডুলকার

0
162
Print Friendly, PDF & Email

স্পোর্টস ডেস্ক(১৬ জানুয়ারী): ক্রিকেটের সর্বকালের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান শচীন টেন্ডুলকারের জন্মভারতে, ১৯৭৩ সালের ২৪ এপ্রিলটেস্ট ও ওয়ানডে মিলিয়ে ১০০ সেঞ্চুরিমালিক তিনি; এই দুই ধরনের খেলায় রান করেছেন ৩৪ হাজারেরও বেশিওয়ানডেক্রিকেটে একমাত্র দ্বিশতক রানের রেকর্ডটিও তাঁরসম্প্রতি ওয়ানডে ক্রিকেটথেকে অবসর নিয়েছেন এই ক্রিকেট-বিস্ময়

আমি ২৩ বছর ধরে আন্তর্জাতিকক্রিকেট খেলছিতার পরও আমি প্রতিবছরই নতুন থেকে নতুন কিছু শিখছিগত বছরসবাই আমার শততম শতকের দিকেই নজর দিয়েছিলকিন্তু আমার ব্যক্তিগত লক্ষ্যসেটা ছিল না; দলকে জেতানোর জন্য আমার সব সময়ের লক্ষ্য ছিল রানের জন্য, বড়ধরনের রানের পাহাড় তৈরি করাঅতীতের মতোই দলের জন্য সেঞ্চুরি করা
আমিসব সময় আমার কোচ রমাকান্ত আচরেকারের কথা স্মরণ করিতাঁর কথা ছিল, খেলারমাঠের পরিস্থিতি যেকোনো সময় কঠিন আকার ধারণ করতে পারেসেই কঠিন সময়নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছুই নেইতোমাকে তোমার মতো করে খেলে যেতে হবেখারাপসময় একসময় চলে যাবেইযাত্রাপথে তোমার সব বাধা তোমাকেই নিজে থেকে টপকেজয় করতে হবে
স্কুলজীবন থেকে আমি অনেক কিছু শিখে চলেছিতবে সবচেয়েগুরুত্বপূর্ণ হলো খেলাকে ভালোবাসাআর খেলার মাঠে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণহলো খেলার বাইরের কিছু নিয়ে চিন্তা না করাসব সময়ই বলের ওপর মনোযোগ দিতেহবে, কে কী বলল তাতে মনোযোগ দেওয়া বোকামিনিজের আবেগকে ধরে রাখতে হবেতোমাকেই তোমার কঠিন সময়কে মোকাবিলা করতে হবেতোমাকে যারা উসাহিত করে, যাদের কাজ তোমার জন্য অনুকরণীয়, তাদের অনুসরণ করতে পারো
আমার প্রথমসেঞ্চুরির কথা সব সময়ই মনে পড়েদলের যখন ১১৮ রানে চার উইকেট, তখন আমিমাঠে নামিতখন আমার লক্ষ্য ছিল আউট না হয়ে মাঠে টিকে থাকাআমি সতর্কতারসঙ্গে বল নির্বাচন করে খেলতে শুরু করিধীরগতিতে খেলতে থাকিআমি ঠান্ডামেজাজে খেলতে থাকিআমি প্রথম সেঞ্চুরির দিকে এগিয়ে যাইআমি পেছনে ফিরেনা তাকিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাই; যার ফলেই শুরু হয় আমার রোমাঞ্চিতক্রিকেট-জীবন
শততম শতকের দ্বারপ্রান্তে এসেও আমি একই মনোযোগ দিয়েখেলতে থাকিদেখে-শুনে বল খেলতে শুরু করিকিন্তু আমার লক্ষ্য সেঞ্চুরিকেছাড়িয়ে দলের রান বাড়ানোর দিকে ছিলআমি ক্রিজের অপর প্রান্তেরব্যাটসম্যান বিরাট কোহলিকে নিয়ে দলীয় পার্টনারশিপের দিকে মনোযোগ দিইকিন্তু সেই সময়ই প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ দলের বোলাররা সত্যিকারের কঠিন বোলিংশুরু করেআমার মনে পড়ে, ব্যাটিং পাওয়ার প্লের সময় বোলার মাশরাফিমর্তুজা আমাকে একটি মেডেন ওভার বোলিং করে, কোনো রানই ছিল না সে ওভারেআমিতার বল বুঝে তিনটি ভালো শট খেলি কিন্তু ফিল্ডাররা বলগুলো ধরে ফেলেআমিনিজের ওপর বিশ্বাস রাখিকারণ, অন্য কোনো এক ভালো দিনে এ তিনটি শট নির্ঘাততিনটি বাউন্ডারিই হতোখেলার মাঠে মাথা ঠান্ডা রাখা আমাদের এটাই শিক্ষাদেয়, কখনো কখনো নিজের অজান্তেই ব্যাটের কানায় বল লেগে উইকেটের পেছন দিয়েবল বাউন্ডারি স্পর্শ করে; আবার ভালো ব্যাটিং করেও তিনটি সম্ভাব্য চারফিল্ডারের হাতে বাধা পায়অবশেষে আমি লক্ষ্যে পৌঁছাই সেই কাঙ্ক্ষিত শতকেরঘরেশততম শতক! আমি প্রতিক্রিয়া হিসেবে আমার ব্যাটের দিকে তাকাই এবং আকাশেস্রষ্টার পানে তাকাইমনে মনে বলি, আমার কঠিন যাত্রা অবশেষে শেষ হলোদীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আমার শততম সেঞ্চুরির দেখা মিললআমি শিহরিত হয়েড্রেসিংরুমের দিকে তাকাই, আমার ব্যাট তাদের পানে তুলে ধরিআমার কাঠেরব্যাটটি আমার দেশের পতাকার দিকেও তুলে ধরিআমার দীর্ঘ অভিযাত্রায় আমারদেশ ও জাতি সবাই এই গৌরবের অংশ
দীর্ঘ ২৩ বছর ক্রিকেট খেললেও গত বছর ছিলভিন্ন রকমগত বছরে শততম শতক অর্জনের দিকে আমার কোনোই লক্ষ্য ছিল নালক্ষ্য ও প্রত্যয় ছিল একটাইবিশ্বকাপ জেতা
অন্যরা আমার নামে কী বলে, আমার সমালোচনা আমি তা কখনোই গুরুত্ব দিই নাআমি খেলতে পছন্দ করিকারণ, আমি ক্রিকেটকে ভালোবাসিকেউ আমাকে জোর করে খেলতে ডাকেনি; আমি স্বেচ্ছায়এসেছি এই ভুবনেঅন্যদের মতামত থাকতেই পারে; সে হিসেবে প্রতিবছরই আমারপক্ষে-বিপক্ষে নানা মত জমা হয়আমি আমার জন্য প্রয়োজনীয় মতামত, যা আমাকেসাহ দেয়, তাকেই শুধু গুরুত্ব দিইঅনেক সমালোচক টিভির সামনে বসে মতামতদিতে পছন্দ করেনওই সমালোচকেরা জানেন না, খেলার মাঠে আমার মনে কী কাজকরছিল, আমার শরীরের কী অবস্থা ছিলএ জন্যই আমি তাঁদের থেকে দূরে থাকতেপছন্দ করিআমার পরিবার ও বন্ধুরা এ ক্ষেত্রে অনেক সাহায্য করেসাধারণমানুষ আমার জন্য প্রার্থনা করেআমি যেন শততম শতক অর্জন করি, এ জন্য তাদেরসাহ থাকত আমার সঙ্গে সব সময়আমি এসব সাধারণ মানুষের আবেগের মূল্য দিইতাদের আগ্রহ ও প্রেরণা আমার কাছে অমূল্যএ জন্যই বোধ হয় আমি শততমসেঞ্চুরির দেখা পেয়েছি
২৩ বছরের ক্রিকেটীয় জীবনে সব সময় আমিক্রিকেটকে ভালোবেসেছি২০ বছর আগে আমার মানসিক অবস্থা ছিল এখনকার সময় থেকেভিন্ন১৭ বছরের তরুণ বয়সে আমি যা করতে পারতাম, তা এই বয়সে এসেও করতেপারিপানি দিয়ে ভরা অর্ধপূর্ণ গ্লাসকে আমি পানিপূর্ণহিসেবেই দেখি, ‘পানিশূন্যনয়এটা নির্ভর করে প্রত্যেকের দৃষ্টিভঙ্গির ওপরআমি সবসময়ই আশাবাদীদের দলেযখন তুমি পরিশ্রম করবে, তখন তার ফলাফল এমনিতেই দেখতেপারবে
২০০৩ সালে দলের কোচ জন রাইট আমাকে বিশ্বকাপের সময় কিছু কথাবলেছিলেনজনের মনে হয়েছিল, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আমিই প্রথম শততমসেঞ্চুরি করতে পারিসে আমাকে সব সময়ই উসাহ দিয়ে যেতকোচের কাছ থেকেপ্রত্যেক ক্রিকেটার এটাই প্রত্যাশা করেকোচের প্রধান কাজ হলো ক্রিকেটারদেরমানসিক দৃঢ়তাকে উসাহ দিয়ে তার মনোবল বৃদ্ধি করাআমার জীবনের দুটি বড়স্বপ্ন ছিল ভারতের হয়ে ক্রিকেট খেলা এবং বিশ্বকাপ জয় করা, কাপটিকে ছুঁয়েদেখাআমার স্বপ্নগুলো সত্যিই বাস্তবায়িত হয়েছেসবার উসাহ ও আমারউদ্দীপনার কারণেই আমার দীর্ঘ ক্রিকেটীয় জীবনের অভিযাত্রা অবশেষে আরওআলোকিত হয়েছে

 

নিউজরুম

 

শেয়ার করুন