ঢাকা (১৩জানুয়ারী) : দেশের শেয়ারবাজারে রাষ্ট্রীয় অনাচার চলছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল। আজ রোববার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে ‘প্রত্যাশা, প্রাপ্তি ও পুঁজিবাজারের সার্বিক প্রেক্ষাপট’—শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এই মন্তব্য করেন। বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।
আসিফ নজরুল বলেন, ‘গত চার বছরের প্রথম দিকে রোড শো করে, বিভিন্নভাবে প্রচারণা চালিয়ে সরকার মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত ও সাধারণ মানুষকে শেয়ারবাজারে টেনে এনেছিল। একই সঙ্গে কৃত্রিমভাবে বাজার বাড়ানো হয়েছিল। একপর্যায়ে বিত্তশালী লোকেরা নিজেদের হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে বাজার থেকে বেরিয়ে যায়। এ ছাড়া ব্যাংক বিমাগুলোও একইভাবে শেয়ার বিক্রি করে বাজার থেকে বেরিয়ে যায়। তবে পরবর্তী সময় ব্যাংক ও বিমা আর বিনিয়োগ করেনি।’
আসিফ নজরুল আরও বলেন, ‘রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্ষমতাশালী ও বিত্তশালীরা শেয়ারবাজারে লুটপাট করেছে। এখানে রাষ্ট্রীয় অনাচার চলছে। রাষ্ট্র সবাইকে প্রলুব্ধ করে বাজারে টেনে এনেছিল। রাষ্ট্র তাদের ক্ষতি করেছে।’
আইন বিভাগের এই অধ্যাপক আরও বলেন, ‘শেয়ারবাজারে ধসের ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে স্পষ্টভাবে যাদের নাম এসেছে, সরকারের পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বিপরীতভাবে যারা হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেছে, তারা ভিভিআইপি মর্যাদা পাচ্ছে।’ এ সময় তিনি সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন, ব্যাংক ও বিমা প্রতিষ্ঠানগুলোর পুনর্বিনিয়োগ ও সরকারের কর্তাব্যক্তিদের বাজার নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান।
আলোচনায় অংশ নিয়ে এনসিসি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘শেয়ারবাজারে কারসাজির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচার হওয়া দরকার ছিল। কিন্তু বাস্তবে আমরা তা দেখিনি। এর ফলে কারসাজি চক্র পার পেয়ে যাচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, সঠিক ওষুধ যথাসময়ে প্রয়োগ করতে হবে। বাজারের বর্তমান অবস্থায় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে (ডিএসই) সুষম ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। একই সঙ্গে জেনে, বুঝে এবং ধৈর্যের সঙ্গে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
দৈনিক ‘শেয়ার বিজ’ কড়চার প্রধান সম্পাদক মনজুর সাদেক খোশনবিশ বিএসইসির সংস্কার নিয়ে বলেন, বিএসইসিতে টেকনিক্যাল লোক বসাতে হবে। শেয়ারবাজার বোঝেন, শেয়ারবাজারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকেন, এমন লোককে এসব পদে বসাতে হবে। তাহলে বাজারে ভালো ফল আসবে। একই সঙ্গে নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে বাজারের জন্য কিছু গাইডলাইন আসতে হবে।
বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাজী আবদুর রাজ্জাক বলেন, প্রায় দুই বছর ধরে শেয়ারবাজারে দরপতন অব্যাহত রয়েছে। এ সময়ে বিনিয়োগকারীরা পুলিশের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। অনেকের বিরুদ্ধে মামলাও করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘বিনিয়োগকারীদের ওপর হামলা, মামলা, হুমকি সত্ত্বেও আমরা একটি স্থিতিশীল বাজারের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি।’
বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজান উর রশিদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারী আনোয়ার হোসেন, আঁখি, মিজানুর রহমান প্রমুখ। আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুল হক এবং অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাদাত উল্লাহ ফিরোজ।
নিউজরুম