ময়মনসিংহ (১৩জানুয়ারী) : দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এখনো ঢের বাকি থাকলেও দেশের প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র সম্ভাব্য প্রার্থী বা দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীরা মাঠে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। তবে গোপনে ও নীরবে চলছে তাদের নির্বাচনী পথচলা।
রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, কৌশলগত নির্বাচনী প্রচারণা কার্যত শুরু হয়ে গেছে। চলছে সমর্থক, কর্মী বাহিনী ও ও ভোট ব্যাংক গোছানো। তবে এলাকা ও জনগণের সঙ্গে দূরত্ব কমানোর প্রচেষ্টার শুভ সূচনা হয়েছে ঈদ-উল-আযহার নামাজের কোলাকুলি থেকে।
সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচনী কৌশল হিসেবে অনেকে প্রতিপক্ষের বিপক্ষে কাউন্টার পলিটিক্স জোরদার করেছেন। স্নায়ুযুদ্ধ আর গ্রুপিংকে কেন্দ্র করে অনেকে নিজের অবস্থানকে সুসংহত করতে সক্রিয় রয়েছেন।
ময়মনসিংহ জেলা শহরে আরো আগেই আওয়ামী লীগের নির্বাচনী আবহ সৃষ্টি হয়েছে। ওয়ার্ড পর্যায়ের সম্মেলন ও কর্মী সভায় বর্তমান সদর সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রিন্সিপাল মতিউর রহমান দলীয় নেতা-কর্মীদের নির্বাচনী প্রস্তুতি নেওয়ার আহবান জানান। ময়মনসিংহ-সদর আসনে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ঐক্যের প্রতীক এ নেতার বিকল্প কার্যত এখনো তৈরি হয়নি বলে মনে করেন তার অনুসারীরা।
তবে এ আসন থেকে দলীয় হাই কমান্ডের কাছ থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফয়জুর রহমান ফকির ও ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটু, এমন গঞ্জণ রয়েছে দলের ভেতরে-বাইরে।
এদিকে, গত পূজা উৎসব থেকেই ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র সভাপতি এ.কে.এম.মোশাররফ হোসেন গণসংযোগ শুরু করেন। গত নির্বাচনে তিনি সদর থেকে চার দলীয় জোটের প্রার্থী ছিলেন। বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিতও হন।
অন্যদিকে, এ আসনে ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক ও জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আবু ওয়াহাব আকন্দ শক্ত মনোনয়ন প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে আগে থেকেই সাংগঠনিক পর্যায়ে দলের সব কার্যক্রম বিরামহীনভাবে চালিয়ে আসছেন।
গুঞ্জণ আছে, এ আসনে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চাইতে পারেন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) মহাসচিব ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের প্রভাবশালী উপদেষ্টা ডা.এ.জেড.এম জাহিদ হোসেন। যদিও তিনি বরাবরই এ বিষয়টি ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়েছেন। সেক্ষেত্রে দলীয় রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ সৃষ্টি হতে পারে বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ময়মনসিংহ-২ (ফুলপুর-তারাকান্দা) আসনে গত সংসদ নির্বাচনে মহাজোট থেকে মনোনয়ন বঞ্চিত হন প্রয়াত বেশ কয়েকবারের নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য এম.শামসুল হকের জ্যেষ্ঠ সন্তান শরীফ আহমেদ। সম্প্রতি ফুলপুর উপজেলায় জনসভা করে নিজের মনোনয়ন রাজনীতিকে প্রকাশ্যে এনেছেন।
সামনের নির্বাচনে এ আসনে দলীয় প্রার্থিতা বদল হতে পারে, এ খবরে দারুণভাবে আশান্বিত শরীফ আহমেদের অনুসারী ও সমর্থকরা। প্রার্থিতা পরিবর্তন হলে শরীফ আহমেদ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হবেন বলেও ঘোষণা দিয়েছেন। মাঠে তার অবস্থান ভালো।
এ আসনে বিএনপি’র দু’জন ক্যান্ডিডেট রয়েছেন। এর মধ্যে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য শাহ শহীদ সারোয়ার। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে শক্তিশালী অবস্থান নিয়ে মাঠে রয়েছেন উত্তর জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন তালুকদার। তবে দু’প্রার্থীই আগাম নির্বাচনী জনসংযোগ শুরু করে দিয়েছেন।
ময়মনসিংহ-৯ (নান্দাইল) আসনে বিএনপির ব্যানারে বেশ ক’বার নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য ডাকসাইটে নেতা খুররম খান চৌধুরী’র প্রতিদ্বন্দ্বী সৌদি প্রবাসী বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম। কিন্তু তার ছোট ভাই নান্দাইল পৌর মেয়র আজিজুল ইসলাম পিকুল গত ঈদ-উল-আযহার আগের রাতে ময়মনসিংহ শহরতলী আকুয়া বাইপাস রোড এলাকায় বান্ধবীর সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় জনতার হাতে পাকড়াও হন।
পরে তার বিরুদ্ধে ওই বান্ধবী কোতোয়ালী মডেল থানায় ধর্ষণ চেষ্টার মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় ক’দিন হাজত বাস করা এই মেয়র সম্প্রতি জামিনে বেরিয়ে এসেছেন। এ ঘটনায় মেয়র পিকুলের নৈতিকতা প্রশ্নবিদ্ধ হলেও তার সমর্থকরা তার মুক্তির দাবিতে মিছিল করে আলোচিত ঘটনাটিকে আড়াল করতে তৎপর হয়ে মাঠে নেমেছেন।
কারামুক্ত পিকুল নিজেও ঘটনাটিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আখ্যা দিয়ে সংবর্ধিতও হচ্ছেন। তবে পিকুল পক্ষের সমর্থকদের দাবি, স্থানীয় জনমনে আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। সামনের নির্বাচনে এ বিষয়টি ভোটারদের ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করবে বলেও বিশ্লেষকরা মনে করেন।
ময়মনসিংহ-২ (গৌরীপুর) আসনে টানা দু’বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে ডিজিটাল সরকারের মন্ত্রিসভায় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন ক্যাপ্টেন অবসরপ্রাপ্ত মুজিবুর রহমান ফকির। তিনি নির্বাচনী ওয়ার্ক শুরু না করলেও এ আসনে ক্ষমতাসীন দল থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী একাধিক লোক মাঠে রয়েছেন।
এর মধ্যে বেশ শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান আলী আহমেদ খান পাঠান সেলভী, স্বাচিপ কেন্দ্রীয় নেতা নেতা এম.এ.আজিজ ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শরীফ হাসান অনু। এসব প্রার্থীর ভিড়ে বেশ বিপাকে পড়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অবসরপ্রাপ্ত মুজিবুর রহমান ফকির।
ময়মনসিংহ-৬ (ফুলবাড়িয়া) আসন থেকে বিএনপি’র মনোনয়ন চাইবেন দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র অন্যতম নেতা ও শেরে বাংলা এ.কে.ফজলুল হকের নাতি জামাই আখতারুল আলম ফারুক। মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে এরইমধ্যে তিনি নিবিড় যোগাযোগ গড়ে তুলেছেন।
সাবেক দলীয় সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার শামসুদ্দিনের বিরোধী মেজাজকে কাজে লাগিয়ে দলীয় পরিম-লে ক্রমশ তার অবস্থান সুসংহত হচ্ছে। সর্বশেষ ২৮ নভেম্বরের জনসভায় ঢাকায় যোগদানের আহবান সম্বলিত প্রায় ২০ হাজার পোস্টার স্থানীয় জনসাধারণের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলে।
এ আসনে ক্ষমতাসীন দল থেকে এবারো মনোনয়ন চাইবেন ৪ বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মোসলেম উদ্দিন। এছাড়া মনোনয়ন দৌড়ে আছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান মালেক সরকার, জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প বিষয়ক সম্পাদক তপন তালুকদার ও জেলা আওযামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট আব্দুর রাজ্জাক।
নিউজরুম