আমিন বাজারে চাঞ্চল্যকর ছয় ছাত্রকে হত্যার ঘটনায় ৬০ জনকে আসামি করে চার্জশিট

0
233
Print Friendly, PDF & Email

ঢাকা (১৩জানুয়ারী) : সাভারের আমিনবাজারে চাঞ্চল্যকর ছয় ছাত্রকে হত্যার ঘটনায় ৬০ জনকে আসামি করে চার্জশিট দিয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ান (র‌্যাব)। রোববার সকালে ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ চার্জশিট প্রদান করা হয়।

সে ঘটনায় আহত অবস্থায় বেঁচে যাওয়া ছাত্র আল-আমিনকে ডাকাতি মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ১৭ জুলাই শব-ই-বরাতের রাতে সাভারের আমিনবাজারের বড়দেশী গ্রামের কেবলারচরে ডাকাত সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করা হয় ছয় কলেজ ছাত্রকে।

নিহতরা হলেন, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ম্যাপল লিফের ‘এ’ লেভেলের ছাত্র শামস রহিম শামাম (১৮), মিরপুর বাঙলা কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র তৌহিদুর রহমান পলাশ (২০), একই কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ইব্রাহিম খলিল (২১), উচ্চ মাধ্যমিক বিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র কামরুজ্জামান কান্ত (১৬), তেজগাঁও কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র টিপু সুলতান (১৯) ও বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির (বিইউবিটি) বিবিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সিতাব জাবির মুনিব (২০)। এ ঘটনায় নিহতদের সঙ্গী আল-আমিন গুরুতর আহত অবস্থায় প্রাণে বেঁচে যান।

এর পর কথিত ডাকাতির অভিযোগ এনে তার বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন স্থানীয় বালু ব্যবসায়ী আবদুল মালেক। অন্যদিকে নিহত ছয় ছাত্রের হত্যাকাণ্ডে নিহতদের ডাকাত উল্লেখ করেই পুলিশের পক্ষ থেকে একটি মামলা দায়ের করা হয় সাভার মডেল থানায়। ওই মামলায় আসামি করা হয় ছয়শ’ গ্রামবাসীকে। মামলাটি করেন সাভার থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আনোয়ার হোসেন।

ঘটনাটি দেশব্যাপী ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করলে এর তদন্তে হাইকোর্ট ও পুলিশের পক্ষ থেকে পৃথক দু’টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

মানবাধিকার সংগঠন ন্যাশনাল ফোরাম ফর প্রটেকশন অব হিউম্যান রাইটসের মহাসচিব তাজুল ইসলাম ওই ঘটনায় দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ ও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন। এ রিট অঅবেদনের প্রেক্ষিতে ওই ছয় ছাত্রের জীবন রক্ষায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যর্থতা কেন সংবিধান-পরিপন্থী ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং ঘটনায় দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে ২০ জুলাই হাইকোর্ট সরকারের প্রতি এক রুল জারি করেন।

হাইকোর্টের নির্দেশে ১০ আগস্ট ঢাকা মহানগর মুখ্য হাকিম উৎপল চৌধুরীকে প্রধান করে এক সদস্যবিশিষ্ট একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। অপরদিকে, ওই ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে ২১ জুলাই ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি আমির উদ্দিনকে প্রধান করে ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির  সদস্য সচিব করা হয় ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলামকে এবং সদস্য করা হয় যথাক্রমে পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) স্পেশাল পুলিশ সুপার মাসুদ করিম ও অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) স্পেশাল পুলিশ সুপার শেখ মো. রেজাউল হায়দারকে।

বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি এক মাস তদন্ত করে নিহত ছাত্রদের পরিবারের সদস্য, ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা ১১ পুলিশ সদস্য ও স্থানীয় গ্রামবাসীসহ ৫৪ ব্যক্তির সাক্ষ্যগ্রহণ করেন।
 
ওই বছরের  ৮ সেপ্টেম্বর  কমিটির প্রধান ঢাকা মহানগর মুখ্য হাকিম উৎপল চৌধুরী ও একেএম এনামুল হক সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রারের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। পুলিশের তদন্ত কমিটিও তাদের তদন্ত শেষে একটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে।

উভয় কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গ্রামবাসীদের পিটুনিতে নিহত ৬ ছাত্র ডাকাত নন। ঘটনাস্থলে দায়িত্ব পালনকারী পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করলে ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা এড়ানো যেতো বলেও প্রতিবেদনে  উল্লেখ করা হয়। এছাড়াও উভয় তদন্ত প্রতিবেদনে পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ এনে তাদের বিরুদ্ধে শান্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।

দুই তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ২০১১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর সাভার মডেল থানার ৮ পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়। এছাড়া দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে সাভার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাবুবুর রহমানকেও ঢাকার পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করা হয়। এছাড়া প্রত্যাহার করা দুই এসআই যথাক্রমে আনোয়ার হোসেন ও হারেস শিকদারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। পরবর্তী সময়ে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনার তদন্তভার পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) দেয়া হয়।

গত বছরের ৭ আগস্ট নিহত ছাত্রদের অভিভাবকদের পক্ষে হাইকোর্টে করা এক সম্পূরক আবেদনের শুনানি শেষে সিআইডি থেকে মামলাটি র‌্যাবের কাছে স্থানান্তরের নির্দেশ দেন বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আব্দুর রব সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ। ওই বেঞ্চের ৭ দিনের মধ্যে সিআইডি থেকে র‌্যাবে মামলাটি স্থানান্তরে নির্দেশ জারির ২২ দিন পর ২৯ আগস্ট মামলাটি র‌্যাবে স্থানান্তর করা হয়। ৫ সেপ্টেম্বর আমিনবাজারের চাঞ্চল্যকর ৬ ছাত্র হত্যা মামলার দায়িত্ব বুঝে নিয়ে তদন্ত শুরু করে র‌্যাব।
 
র‌্যাব মামলার তদন্তভার পাওয়ার পর একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে এর তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করে। তার নেতৃত্বে একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়। এছাড়াও চাঞ্চল্যকর ওই মামলাটির তদন্তের তদারকি করতেও গঠন করা হয় একটি বিশেষ সুপারভিশন টিম।

নৃশংস ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশ এ পর্যন্ত ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে। তারা হচ্ছেন, রহিম ওরফে হাতকাটা রহিম, ওয়াসিম, ফরিদ খান, রাজীব ও সাইফুল।

নিউজরুম

শেয়ার করুন