জীবনের পড়ন্ত বেলায় কবিতা নিয়ে ভাবতে ভালো লাগে স্মরণ করে আমি ভীষণ আনন্দ বোধ করি। একসময় কবিতাই ছিল আমার একমাত্র আরাধনার বিষয়। আর এখনকার সময়টা একটু ভিন্ন—বয়সের পরিণত অবস্থায় ডিকটেশন দিয়ে লেখাতে হয়। চোখে দেখে লিখতে পারলে কতই না ভালো হতো! আফসোস না করে বলি—আমি তো লিখেই পুরো জীবন পার করলাম, সময় সাক্ষী। এখন আর তেমন লিখতে ইচ্ছে হয় না। তবু স্বজন-শুভাকাঙ্ক্ষীদের আবদারে একটু-আধটু লিখতে হয়, তারা একটা নতুন লেখার জন্য সদা তৎপর। আমার ব্যাপারে পাঠকের এই আগ্রহের একটা মূল্য আছে, তাই এখনো হাতে একটা সিগারেট জ্বালিয়ে কাউকে নিয়ে লিখতে বসি।
অস্তগামী আলো
আমার ছিল হাঁটার কথা—হাঁটছি আমি
হাঁটতে গিয়ে দেখছি আলো অস্তগামী
নামবে আঁধার আমায় ঘিরে ঠান্ডা শীতল
কার চোখে যে অগ্নিশিখা, কার চোখে জল?
কে তুমি গো দাও ছুঁয়ে আজ পৃষ্ঠদেশে
তোমার কোমল আঙুলগুলো লাগল এসে
তোমার ছোঁয়ায় হলোই বুঝি ধন্য জীবন
কোথায় যেন হারিয়ে এলাম অমূল্য ধন
কী আর পাব পথের পাশে নেই কিছু নেই
কেবল তুমি আমার ওগো, তাই পিছু নেই।
বিলাপ করে কাঁদছে কারা—কান্না তাদের
শুনছি বসে জোছনা ঝরা ভাঙা চাঁদের।
স্বপ্নচাষি
আশির কোঠায় বয়স আমার
একলা ঘরে হাসি,
বলার তো কেউ নেই এখানে—
কাকে ভালোবাসি!
আশি-আশি-আশি-
আশি সর্বনাশী।
কানের কাছে কে যেন হায় বলল ভালোবাসি,
আশি আশি আশি
দিন ফুরাল—বেলা গেল
বাজল ফেরার বাঁশি;
কানের কাছে কে বলে গো
‘তুমি স্বপ্নচাষি’—
আশি আমার আশি,
একাই থাকি একাই নাচি
একাই ভালোবাসি।
ভালোবাসার কথা শুনে হাসে চরণদাসী—
প্রিয় সময়, আশি।