(১৩ জানুয়ারী):ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের জয়নুল গ্যালারিতে ২১ থেকে ২৫ ডিসেম্বর ২০১২ পর্যন্ত হয়ে গেল নবীন চিত্রকর রফিকুল ইসলাম চৌধুরীর দ্বিতীয় একক চিত্র প্রদর্শনী। প্রদর্শনীর শিরোনাম ‘আঁধারময়তার গল্পকথা’। ২০০৭ সালে তাঁর প্রথম একক প্রদর্শনী হয় ঢাকার গুলশানের সাজু আর্ট গ্যালারিতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের অঙ্কন ও চিত্রায়ন বিভাগ থেকে তিনি স্নাতকোত্তর করেছেন ২০০৯ সালে।
রফিকুল তাঁর চিত্রকর্মের বিষয় হিসেবে বেছে নিয়েছেন মানবিক সম্পর্কের নানা দিক, যেমন প্রেম, বিরহ, স্নেহ, আলো-আঁধার। এই প্রদর্শনীতে শিল্পীর ৭১টি চিত্রকর্ম প্রদর্শিত হয়েছে। জন্ম ও মৃত্যুর অপার রহস্যময়তা, আমাদের মনের ভেতরকার অতিপ্রাকৃত অনুভবকে তিনি তুলে ধরেছেন পরাবাস্তবতার আবহে।
তাঁর চিত্রকর্ম সম্বন্ধে বরেণ্য শিল্পী মনিরুল ইসলামের মতামত হচ্ছে, ‘রফিকের বেশির ভাগ ছবি নৈর্ব্যক্তিক, কিছু কাজে অবজেক্ট থাকলেও তা ঠিক বাস্তবানুগ নয়। ওর বেশির ভাগ ছবি আমার কাছে প্রকাশবাদী মনে হয়। যেমন কাব্যময় পৃথিবীতে আদম ও হাওয়া।’ পাহাড়ের রহস্যময়তা ও আকাশের ছন্দকে একত্রে সাফল্যের সঙ্গে প্রকাশ করেছেন রফিক তাঁর ‘রহস্যময় পাহাড়’ ছবিতে। এর অপার রহস্যময়তা শিল্পীর একাকিত্বের বোধের সঙ্গে মিশে গেছে। তাঁর ‘পবিত্র আলোর রাত’ চিত্রকর্মে আমরা এমন এক আধ্যাত্মিকতার সন্ধান পাই, যেন তা কোনো মহামানবের আগমনের সঙ্গে সম্পর্কিত।‘শূন্য স্মৃতির আবেগ’ চিত্রকর্মে রঙের স্বল্প ব্যবহারে শিল্পী স্পেস সৃজনের ভালো দক্ষতা দেখিয়েছেন।
‘কালো কাহিনির ভেতর’ এবং ‘কালো রেখার গান’ সিরিজের কাজগুলোয় রেখার গতিময়তা, আলোছায়া ও রং প্রয়োগের দক্ষতা উপলব্ধি করা যায়। একই চিত্রকর্মে এসবের প্রয়োগ সব সময় যথাযথভাবে করা বেশ কঠিন হলেও রফিক এ ক্ষেত্রে অনেকটাই সফল হয়েছেন। অতিপ্রাকৃত চিন্তার কয়েকটি কাজ—‘এক স্বপ্নরাত’, ‘রহস্যময় নগর’, ‘নীরব নিসর্গের পথে’, ‘মধ্যরাতের অরণ্য’ প্রভৃতি। এখানে নগর জনমানবহীন, অরণ্যেও প্রাণীকুলের দেখা মেলে না—এ যেন স্বপ্নময় অন্য এক ভুবন। এই ছবিগুলো একেবারেই ভিন্ন ধাঁচের। বাংলাদেশের নিসর্গের রূপ, সেই সঙ্গে ফর্ম, রং এসব নিয়ে কিছু কাজ বেশ মজাদার।‘প্রকৃতির শব্দ’, ‘শব্দরহস্য’ এসব শিরোনামে আঁকা ছবিগুলোয় আমাদের প্রকৃতিকে তুলে ধরা হয়েছে। চেনা প্রকৃতিকে শিল্পী চিত্রপটে উপস্থাপন করেছেন সহজ-সাবলীলভাবে। এই সহজের সৌন্দর্য কিন্তু চিত্তাকর্ষক। নবীন শিল্পী রফিক এই ধারাটি নিয়েও এগিয়ে যেতে পারেন।