ব্যবসা ও অর্থনীতিডেস্ক(১৩ জানুয়ারী): আমদানি কমে আসা ও রপ্তানির প্রবৃদ্ধি শ্লথ হয়ে পড়ায় চলতি ২০১২-১৩ অর্থবছরেরপ্রথম পাঁচ মাসে দেশে পণ্য-বাণিজ্যে ঘাটতি উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে।
বাংলাদেশব্যাংকের লেনদেনের ভারসাম্য সারণির হালনাগাদ করা পরিসংখ্যান থেকে দেখাযায়, আলোচ্য সময়কালে পণ্য-বাণিজ্যে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩৪৯ কোটি ৪০ লাখ ডলার।আর গত অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়কালে এই ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৪৪৮ কোটি ১০লাখ ডলার। অর্থাৎ পণ্য-বাণিজ্যে ঘাটতি কমেছে ২২ শতাংশ।
পণ্য রপ্তানিথেকে আয়ের তুলনায় পণ্য আমদানির জন্য ব্যয়ের পরিমাণ বেশি হলে দুইয়ের মধ্যকারব্যবধান বাণিজ্য-ঘাটতি তৈরি করে। লেনদেনের ভারসাম্য সারণি অনুসারে এইসময়কালে পণ্য রপ্তানি গত অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে৯৯৮ কোটি ডলারে। আবার ২০১১-১২ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসের তুলনায় চলতিবছরের একই সময় আমদানি প্রায় সাড়ে ৪ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৩৪৭ কোটি৪০ লাখ ডলারে।
অবশ্য লেনদেনের ভারসাম্য সারণিতে এফওবি (ফ্রেইট অন বোর্ড)বা জাহাজীকৃত পণ্যের মূল্য ধরে আমদানি-রপ্তানির হিসাব নির্ণয় করা হয়। এরফলে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) রপ্তানির পরিসংখ্যান ও আমদানিরসিঅ্যান্ডএফ (বিমা ও পণ্য খালাস ব্যয়) পরিসংখ্যানের তুলনায় এফওবির মূল্যকিছুটা কম হয়।
পণ্য-বাণিজ্যে ঘাটতি কমলেও একই সময় সেবা খাতের বাণিজ্যেঘাটতি বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে সেবা খাতের বাণিজ্যে ১৮০কোটি ডলারের ঘাটতি দেখা দিয়েছে, যেখানে গত অর্থবছরের একই সময় এর পরিমাণ ছিল১৩২ কোটি ৫০ লাখ ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান পর্যালোচনায় দেখাযায়, আলোচ্য সময়কালে সেবা খাতের মাধ্যমে ৭৮ কোটি ৯০ লাখ ডলারের বৈদেশিকমুদ্রা আয় হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩১ শতাংশ কম। বিপরীতে সেবাখাতের ব্যয় বাবদ ২৫৯ কোটি ডলার দেশের বাইরে চলে গেছে। এটি গত বছরের একইসময়ের চেয়ে সাড়ে ৪ শতাংশ বেশি।
সেবা খাতে মূলত পর্যটন বা ভ্রমণ, বিমা, আর্থিক লেনদেন ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত থাকে। যেমন, বাংলাদেশিরা যখন ভারতে বাথাইল্যান্ডে গিয়ে চিকিৎসার জন্য অর্থ ব্যয় করে, তখন তা সেবা খাতে ব্যয়হিসেবে বিবেচিত হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে আরও জানা যায়, অর্থবছরের পাঁচ মাসে চলতি হিসাবে চার কোটি ৩০ লাখ ডলারের উদ্বৃত্ত দেখাদিয়েছে, যেখানে গত বছরের একই সময় ১৩৫ কোটি ডলারের ঘাটতি ছিল। অর্থাৎ চলতিহিসাবের ভারসাম্য পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।
মোটা দাগে চলতি হিসাবে মূলতকোনো দেশের নিয়মিত বৈদেশিক লেনদেনের হিসাব প্রতিফলিত হয়। অর্থাৎ নিয়মিতআমদানি-রপ্তানিসহ অন্যান্য আয়-ব্যয় এতে অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রেউদ্বৃত্ত বোঝায় যে নিয়মিত লেনদেনের ক্ষেত্রে দেশকে কোনো ঋণ করতে হয় না। আরঘাটতি থাকলে বোঝায় যে, ঘাটতি পূরণ করতে ঋণ নিতে হয়।
চলতি হিসাবেরপাশাপাশি আর্থিক হিসাব পরিস্থিতিরও বড় ধরনের উন্নতি হয়েছে। গত অর্থবছরেরপ্রথম পাঁচ মাসে যেখানে ৭৩ কোটি ৬০ লাখ ডলারের উদ্বৃত্ত ছিল, সেখানে চলতিবছরের একই সময় তা ১৫০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগ ও বিদেশিসাহায্যপ্রবাহ বাড়ায় এমনটি হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানঅনুসারে, অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে ৬৫ কোটি ডলারের প্রত্যক্ষ বিদেশিবিনিয়োগ এসেছে, যেখানে গত বছরের একই সময় এসেছিল ৫৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার।
আবার মাঝারি ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণের প্রবাহ দাঁড়িয়েছে ৭৩ কোটি ২০ লাখ ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের আড়াই গুণ বেশি।
এসবকিছুর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে লেনদেনের সার্বিক ভারসাম্যে। এ বছরজুলাই-নভেম্বর সময়কালে লেনদেনের সার্বিক ভারসাম্যে ১৭৫ কোটি ২০ লাখ ডলারেরউদ্বৃত্ত দেখা দিয়েছে। আর গত বছরের একই সময় ৯১ কোটি ৫০ লাখ ডলারের ঘাটতিছিল।
লেনদেনের সার্বিক ভারসাম্যের উন্নতি প্রতিফলিত হয় বিনিময় হার ওবৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে। নভেম্বর শেষে প্রতি মার্কিন ডলারের দর ছিল ৮১টাকা ৩৮ পয়সা। এর ফলে জুন মাসের শেষের তুলনায় নভেম্বরের শেষে ডলারেরবিপরীতে টাকার দর বেড়েছে প্রায় দশমিক ৫১ শতাংশ। আবার নভেম্বর শেষে বৈদেশিকমুদ্রার রিজার্ভ দিয়ে সাড়ে তিন মাসের বেশি সময়ের আমদানিব্যয় মেটানো সম্ভবহতো, যেখানে গত বছরের নভেম্বর পৌনে তিন মাসের আমদানিব্যয় মেটানো সম্ভব ছিল।
নিউজরুম