শিক্ষা ডেস্ক(১২ জানুয়ারী):কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ শনিবার বেলা তিনটার দিকে শিক্ষক লাউঞ্জে ঢুকে ইটপাটকেল ছুড়েছেন একদল শিক্ষার্থী। এ সময় তাঁরা ভাঙচুরও চালান। শিক্ষকদের অভিযোগ, তাঁরা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী। ছাত্রলীগ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
এদিকে কাল রোববার থেকে ক্লাস ও পরীক্ষা চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক নজিবুল হক।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শিক্ষক অভিযোগ করেন, ‘আমরা শিক্ষক সমিতির সদস্যরা এবং আন্দোলনরত শিক্ষকেরা শিক্ষক লাউঞ্জে বসে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করছিলাম। এ সময় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বহিরাগতদের সঙ্গে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ভবনের তালা ভাঙে।শিক্ষার্থীরা ওই ভবনের ভেতরে শিক্ষক লাউঞ্জে হামলা চালায়। এ সময় লাউঞ্জে ৪০ জন শিক্ষক ছিলেন।’
শিক্ষকদের অভিযোগ, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা শিক্ষক লাউঞ্জের আশপাশে ইটপাটকেল ছোড়েন। এতে লাউঞ্জের জানালার কাচ ভেঙে যায়।নেতা-কর্মীরা লাঠি নিয়ে লাউঞ্জের দরজা ভাঙার চেষ্টা করেন। এ সময় শিক্ষকেরা দরজা খুলে দেন। তাঁরা লাউঞ্জের ভেতরে ঢুকে ভাঙচুর চালান। তাঁদের ছোড়া ইটের আঘাতে ২০ জন শিক্ষক আহত হন। আহত শিক্ষকদের প্রাথমিক চিকিত্সা দেওয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ এইচ এম আকতারুল ইসলামের ভাষ্য, ‘আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা অনুষদের ভবনের গেট ভাঙার সময় আমি তাঁদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু তাঁরা তা শোনেনি। এরপর পরিস্থিতি শান্ত করতে আমি পুলিশকে খবর দিয়েছি।’
প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, শিক্ষক লাউঞ্জে হামলার সময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অনুষদ ভবনের সামনে পুলিশ দাঁড়িয়ে থাকলেও দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
হামলার ঘটনা প্রসঙ্গে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান তুহিন বলেন, ‘আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা হামলা করেছে। এর সঙ্গে ছাত্রলীগের কোনো সম্পর্ক নেই।’
শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক নজিবুল হক আগামীকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ক্লাস পরীক্ষা শুরু করার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের দিকে তাকিয়ে কাল থেকে ক্লাস ও পরীক্ষা চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ উপলক্ষে চলমান আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করলাম।’ তবে দাবি পূরণের আন্দোলন চলতে থাকবে বলে তিনি জানান।
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভবনের সামনে সাধারণ শিক্ষার্থীরা অনশন শুরু করেন। পরে বেলা ১১টার দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একটি অংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে খুলনা-কুষ্টিয়া মহাসড়ক অবরোধ করে অনশন কর্মসূচি পালন করেন। এ সময় সড়কের দুই পাশে শতাধিক গাড়ি আটকা পড়ে।পরে বেলা তিনটার দিকে শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নেন।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দপ্তরে ১১২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে উপাচার্য, সহ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে চার মাস ধরে আন্দোলন করছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। সম্প্রতি উপাচার্য ও সহ-উপাচার্যকে অপসারণ করা হলেও কোষাধ্যক্ষকে অপসারণ না করায় আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষকেরা। এ আন্দোলনের কারণে চার মাস ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। গত ১৯ নভেম্বর প্রশাসন ভবনের ভেতরে শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচিতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের হামলায় আহত হন প্রায় ৩০ জন শিক্ষক। এরপর আজ আবার শিক্ষকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটল।
নিউজরুম