অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন

0
126
Print Friendly, PDF & Email

 রুপসীবাংলা ডেস্ক (১২জানুয়ারী) : নির্ধারিত সময়ের আগেই অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। এ ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনকে আগেই তাদের অবস্থান জানানো হবে। অন্যদিকে, সেপ্টেম্বর থেকে সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে নির্বাচন কমিশন। এদিকে, জাতীয় নির্বাচনের আগেই উপজেলা নির্বাচনের প্রস্তুতিও চলছে। কোনো কারণে না হলে জাতীয় নির্বাচনের পর পরই উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতায় জানুয়ারির মধ্যে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও সরকার কৌশলগত কারণে এ নির্বাচন খানিকটা এগিয়ে আনছে। বিরোধী দল আন্দোলন ঘরে তোলার আগেই এবং যুদ্ধাপরাধ বিচারের রায় ঘোষণার পর জনমত পক্ষে নিয়ে সরকার ভোটের রাজনীতিতে কিস্তিমাত করতে চায়।

এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর অধীনেই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। মাঠপর্যায়ে বিভিন্ন মাধ্যমে জরিপ কাজও চালানো হচ্ছে। প্রশাসনকেও ঢেলে সাজানো হচ্ছে। তবে প্রধান বিরোধী দল সাফ জানিয়ে দিয়েছে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া কোনো দলের অধীনে নির্বাচনে যাবে না তারা। প্রয়োজনে নির্বাচন বয়কট করে জনগণকে নিয়ে রুখে দাঁড়াবে। অন্যদিকে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে মহাজোটের অন্যতম শরিক দল জাতীয় পার্টি। এককভাবে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিলেও একক না জোটগতভাবে নির্বাচনে যাওয়া হবে, তা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।

প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন : আগামী সংসদ নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনেই করার সব প্রস্তুতি প্রায় শেষ করে এনেছে কমিশন। সরকারি দলের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সংসদীয় আসনের সীমানায় তেমন কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। চলতি বছরের যে কোনো সময় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নির্বাচনের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করার প্রস্তুতিও নিচ্ছেন নির্বাচন কমিশনাররা।

কমিশন সূত্র জানায়, দশম সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য খরচ ধরা হয়েছে ৫০০ কোটি টাকা। জাতীয় সংসদ, সিটি করপোরেশন ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সম্ভাব্য কেন্দ্র, ভোটকক্ষ, কী কী উপকরণ কতসংখ্যক প্রয়োজন, এর তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। নির্বাচনী মালামাল কেনার কাজও শুরু হয়েছে। ভোটারদের আঙ্গুলে ব্যবহারে অমোচনীয় কালি নির্বাচনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইউএনডিপির মাধ্যমে বিদেশ থেকে এ কালি আমদানি করা হবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বলেছেন, নির্বাচনের জন্য ইসি সব সময় প্রস্তুত। নব্বই দিনের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠানে কমিশন প্রস্তুত। আগামীতে কোন ধরনের সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে, তা রাজনৈতিক বিষয় এবং এটা ঠিক করবে সংসদ। আমরা অলওয়েজ রেডি। ইসির নির্বাচন শাখা জানায়, আগামী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের কাজ শুরু হয়েছে। এ ছাড়া ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ শেষ। প্রয়োজনীয় মালামাল কেনায় ইউএনডিপির সঙ্গে বৈঠকও করেছে ইসি। ফেব্রুয়ারিতে ৩০০ নির্বাচনী আসনের খসড়া তালিকা প্রণয়ন, ১৫ মার্চের মধ্যে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ৩০০ নির্বাচনী এলাকার প্রাথমিক তালিকা অনুমোদন এবং এপ্রিলে এলাকার খসড়া প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করে দাবি, আপত্তি, সুপারিশ আহ্বান করা হবে। জুনে ৩০০ নির্বাচনী এলাকার সীমানা চূড়ান্ত করে গেজেট প্রকাশ করা হবে।

আগাম নির্বাচনের প্রস্তুতিতে আওয়ামী লীগ : এদিকে, নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। এবার প্রস্তুতি আর প্রচারণা একসঙ্গে রেখেছে ক্ষমতাসীন দলটি। এর অংশ হিসেবে বছরের শুরু থেকেই দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনী গণসংযোগ শুরু করেছেন। প্রথম সপ্তাহেই ময়মনসিংহ ও নোয়াখালীতে জনসভায় দলীয় প্রতীক নৌকার পক্ষে আগাম ভোটপ্রার্থনা করেছেন। জানা গেছে, এ মাসে আরও কয়েকটি জেলা সফরের কর্মসূচি রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। সেই সঙ্গে দেশব্যাপী নেতাদের গণসংযোগ কর্মসূচিও দেওয়া হয়েছে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের খসড়া তালিকা প্রণয়ন করা হচ্ছে। জানা গেছে, এসবের পাশাপাশি জয়ের লক্ষ্যে শেষ বছরে একগুচ্ছ কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছেন তারা। আগামী মার্চের মধ্যে তৃণমূলে কাউন্সিলের মাধ্যমে সংগঠনকে গতিশীল করতে কেন্দ্র থেকে জেলা-উপজেলায় নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নে জোর পদক্ষেপ নিচ্ছেন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা। এ প্রসঙ্গে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগ মাঠে নেমেছে। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী দুটি স্থানে জনসভায় নৌকা মার্কায় ভোট চেয়েছেন। সরকারের উন্নয়নগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরলে এবং সাংগঠনিক গতি বৃদ্ধি করা হলে আগামীতে আওয়ামী লীগ পুনরায় জনগণের ভোট নিয়ে ক্ষমতায় আসবে। অক্টোবরে সংসদ নির্বাচন করার কোনো সম্ভাবনা আছে কি না, এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, যথাসময়েই সংসদ নির্বাচন হবে। এদিকে, আগামী নির্বাচন সামনে রেখে প্রার্থী জরিপের কাজও শুরু করেছে দলটি। এর পাশাপাশি চলছে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার জরিপ। প্রধানমন্ত্রীর আস্থাভাজন একটি গ্রুপ বিষয়টির সমন্বয় করছে। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বলেন, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলো একটি নির্বাচনের পর আরেকটি নির্বাচনের জন্য প্রস্ততি নেয়। আওয়ামী লীগও তা-ই করেছে। চার বছরের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমেই নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছে। নির্বাচন যে সময়েই হোক তা হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ বলেন, নির্বাচন সামনে রেখেই সম্মেলনের মাধ্যমে তৃণমূলকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে।

দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না বিএনপি : নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে না প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। এ দাবিতে চলমান আন্দোলনকে ফেব্রুয়ারির পর থেকে লাগাতারে নিয়ে যাওয়ার চিন্তাভাবনা করছে দলটি। নির্দলীয় রূপরেখার বাইরে অন্য কোনো ফর্মুলায় নির্বাচনে না যাওয়ার বিষয়টি জানিয়েছেন দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তত্ত্বাবধায়ক ইস্যু ছাড়া অন্য কোনো এজেন্ডা নিয়ে সরকারের সঙ্গে কোনো আলোচনায়ও বসবেন না তিনি। বেগম খালেদা জিয়া সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া এ দেশে কোনো নির্বাচন হবে না এবং হতেও দেওয়া হবে না। সর্বাত্দক প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। তত্ত্বাবধায়ক নিয়ে আলোচনায় বসতে বিএনপি প্রস্তুত উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর বাইরে অন্য কোনো বিষয়ে খোশগল্প কিংবা সময় নষ্ট করার মানসিকতাও আমাদের নেই। জানা গেছে, নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অপেক্ষার পর সরকারের সঙ্গে আলোচনা দূরে থাক, কোনো সম্পর্কই রাখবে না বিরোধী দল। প্রয়োজনে লাগাতার হরতাল, ধর্মঘট, ঘেরাও, অবরোধ এমনকি অসহযোগের মতো কর্মসূচি দিয়ে হলেও সরকারকে দাবি মানতে বাধ্য করা হবে। এ প্রসঙ্গে দলের মুখপাত্র, স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের জনদাবির ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। দাবি আদায়ে প্রয়োজনে আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর করা হবে। সব ধরনের কর্মসূচি দিয়ে সরকারকে বাধ্য করা হবে এ দাবি মেনে নিতে। যে কোনো মূল্যে যৌক্তিক পরিণতির দিকে নিয়ে যাওয়া হবে চলমান আন্দোলনকে। আর আলোচনা বা সংলাপ নিয়ে কারও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করারও কোনো অবকাশ নেই। ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সরকার নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি না মানলে আন্দোলনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনে পয়েন্ট অব নো রিটার্নে চলে যেতে বাধ্য হব। তখন আর জনগণের পেছনে ফেরার কোনো পথও থাকবে না। আশা করি সরকার দেশকে সংঘাতের দিকে ঠেলে দেবে না। আর যদি সরকার সংঘাতের পথ বেছে নেয়, তাহলে এর সব দায়দায়িত্বও তাদেরই বহন করতে হবে।

পর্যবেক্ষণে জাতীয় পার্টি : আগাম নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রক্রিয়া নিয়ে পর্যবেক্ষণ করছে মহাজোটের শরিক দল জাতীয় পার্টি। তবে আগামী অক্টোবরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে সে নির্বাচনে এককভাবে অংশ নেওয়ার কথা প্রকাশ্যে বলছেন জাতীয় পার্টির নেতারা। তবে ভেতরে ভেতরে ভিন্ন প্রস্তুতিও তাদের রয়েছে। জাতীয় পার্টি মনে করে, ওই নির্বাচনে বিএনপিসহ বড় দলগুলোকে অংশ নিতে হবে। নইলে ওই সময়ে নির্বাচন হবে কি না, সন্দেহ আছে আর নির্বাচন হলেও তা দেশ-বিদেশের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে নির্বাচনের বিকল্প নেই বলেও মনে করে দলটি। জাতীয় পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার এমপি জানান, গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য অতীতেও সব নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। অক্টোবরে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে অবশ্যই জাতীয় পার্টি অংশ নেবে। বিএনপিসহ বড় দলগুলোকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে সরকারকেই। প্রধান দলগুলো নির্বাচনে অংশ না নিলে ওয়ান-ইলেভেনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। এ থেকে সবাইকে শিক্ষা নিতে হবে। সূত্র জানায়, জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা মনে করছেন আওয়ামী লীগ যেভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে তাতে বিএনপি অংশ নিতে পারবে না। আর দেশ পরিচালনায় আওয়ামী লীগ ব্যর্থ হয়েছে। তাই আগামীতে সব ভোট পড়বে লাঙ্গলে। এককভাবে ক্ষমতায় যাচ্ছেন এরশাদ। দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বসে নেতা-কর্মীরা কোন নেতা কোন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেবেন তা ভাগ করছেন।

এ লক্ষ্যে গত অক্টোবরে ২২০ সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন এরশাদ। নভেম্বরে সিলেট শাহজালাল (রহ.)-এর মাজার জিয়ারত করে একক নির্বাচনের প্রচারণাও শুরু করেছেন তিনি। তবে পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান দাবি করেন, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-বিএনপি উভয় দল অংশ নিলেও জাতীয় পার্টিকে দমাতে পারবে না। দুই দলের শাসন দেখে মানুষ আবার পল্লীবন্ধুর শাসনে ফিরে যেতে অপেক্ষা করছে।

নিউজরুম


শেয়ার করুন