শিক্ষকদের ওপর ছাত্রলীগের এসিড নিক্ষেপ সরকার কি অপরাধীদের পক্ষ নিচ্ছে?

0
201
Print Friendly, PDF & Email

১২ জানুয়ারি, ২০১৩।।

রংপুর রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ওপর ছাত্রলীগ এসিড নিক্ষেপ করে দু’জন শিক্ষকের চোখ ঝলসে দিয়েছে। একই দিন রংপুর মেডিক্যাল কলেজের মহিলা হোস্টেলের ছাত্রীদের মারধর ও লাঞ্ছিত করে এবং শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে ছাত্রলীগ। দুটো ঘটনা হঠাৎ করে হয়নি। দফায় দফায় সশস্ত্র ছাত্রলীগ রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারী শিক্ষক ও ছাত্রদের ওপর হামলা চালিয়েছে। একইভাবে মেডিক্যাল কলেজে প্রবেশ করে দীর্ঘ সময় ছাত্রীদের নির্যাতন করেছে। এরা বাধাহীন সশস্ত্র সন্ত্রাস চালিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোনো অ্যাকশনে যায়নি। মনে হচ্ছে, ছত্রলীগকে সন্ত্রাস করার সনদ দেয়া হয়েছে। এ ধরনের পরিস্থিতি দেশে মারাত্মক আইনশৃঙ্খলা অবনতির ইঙ্গিত দিচ্ছে।

নিয়োগবাণিজ্য, অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগে রংপুরে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসির পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষক-ছাত্ররা আন্দোলন  করছে। বৃহস্পতিবার পুলিশ ও প্রক্টরের উপস্থিতিতে আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দুর্নীতিবিরোধী মঞ্চ দখল করে নেয় ভিসিপন্থী ছাত্রলীগ। সশস্ত্র হামলা চালিয়ে মঞ্চ ও মাইক ভাঙচুর করে তারা। একপর্যায়ে সশস্ত্র ক্যাডাররা মাইকের ব্যাটারি থেকে এসিড নিয়ে শিক্ষক-ছাত্রদের লক্ষ্য করে নিক্ষেপ করে। এতে দুই শিক্ষকের চোখ ঝলসে যায়। আহত হয় শিক্ষকসহ ২০ শিক্ষার্থী। কয়েক ঘণ্টা ধরে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে দফায় দফায় ককটেল বিস্ফোরণ করে আতঙ্ক ছড়ায় তারা। পুলিশ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মহিলা হোস্টেলে ছাত্রীদের ওপর হামলার ঘটনাটি আরো ন্যক্কারজনক। বুধবার মধ্যরাতে কলেজ ছাত্রলীগ নেতা সুমন ও মেরাজের নেতৃত্বে ৫০-৬০ জন ছাত্রলীগ নেতাকর্মী রড, লাঠি ও অন্যান্য অস্ত্র নিয়ে ক্যাম্পাসের মহিলা হোস্টেলের প্রধান ফটক খুলে ঢুকে যায়। কর্তব্যরত দারোয়ান তাদের বাধা দিতে সাহস না করলেও তাকে লাঞ্ছিত হতে হয়েছে। হোস্টেলে ঢুকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ইন্টার্নি চিকিৎসক ও ছাত্রীদের অকথ্য গালাগাল করে। কয়েকজন নবীন ইন্টার্নি চিকিৎসককে তারা মারধর ছাড়াও শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে। রাত ১২টায় ঢুকে দীর্ঘ দুই ঘণ্টা তারা সন্ত্রাসী তাণ্ডব চালায়। ডা: হোস্টেল সুপার ডা: চন্দনকে হামলার বিষয়টি জানানো হলেও তিনি আসেননি। রাত ২টায় সেখানে পুলিশ গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এ সময় ছাত্রলীগ নেতারা নির্বিঘেœ চলে যায়।

দুটো ঘটনায় একটা বিষয় স্পষ্টÑ পুলিশ অপরাধীদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যায়নি। এসিড নিক্ষেপ করে শিক্ষকদের ঝলসে দেয়া সন্ত্রাসীরা যদি পুলিশের সামনে দিয়ে বীরদর্পে চলে যায়, ছাত্রী হোস্টেলে গভীর রাতে প্রবেশ করে অত্যাচার চালানো দাগিরা যদি পুলিশকে তুচ্ছজ্ঞান করে, তাহলে অপরাধের মাত্রা দ্বিগুণ-তিনগুণ হারে বাড়বে।  অন্যায়কারীদের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে নাÑ এটাকে ন্যায়সঙ্গত বলা যায় না। অতিষ্ঠ শিক্ষক-ছাত্ররা যখন আন্দোলন করছে তখন তাদের সন্ত্রাসীদের দিয়ে দমন করা হচ্ছে। এটা কোন ধরনের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা? অন্য দিকে ছাত্রী হোস্টেলে মধ্যরাতে প্রবেশকারী অপরাধীদের যেভাবে ছেড়ে দেয়া হয়েছে, এতে করে অন্য ছাত্রী হোস্টেলে ঢোকা এসব অপরাধীর কাছে সাধারণ বিষয় মনে হবে। সামনে আমাদেরকে আরো বড় কেলেঙ্কারির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে বলে মনে হচ্ছে।

এসব ঘটনায় সরকার অপরাধীদের পক্ষে থাকছে। ক্ষমতাসীনেরা নিজেদের ছাত্রসংগঠনকে দুর্নীতিবাজদের পক্ষে অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে মাঠে নামাচ্ছে। ছাত্রী হোস্টেলে কী কারণে ৫০-৬০ জন ছাত্রলীগ নামধারী সন্ত্রাসীকে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে গভীর রাতে প্রবেশ করতে হবে। ছাত্রীরা কি ভূমিদখলকারী দুর্নীতিবাজ? সরকার কেবল অপরাধীদের পক্ষে অবস্থান নেয়া সন্ত্রাসীদের প্রশ্র্রয় দিচ্ছে না, বরং বাংলাদেশকে নিয়ে যাচ্ছে এক গভীর সঙ্কটের দিকে। সারা দেশে আইনশৃঙ্খলার করুণ অবস্থার সাথে এর যোগসূত্র রয়েছে। অবিলম্বে সরকারের বোধোদয় হওয়া উচিত, না হলে খেসারত দিতে হবে পুরো জাতিকে।

শেয়ার করুন