স্পোর্টস ডেস্ক(১১ জানুয়ারী):জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরির চেয়ে ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি বেশি ভয়ংকর। কখন ফুঁসে ওঠে লাভাস্রোতে চারপাশ তলিয়ে দেয় বলা মুশকিল। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো এখন প্রতিপক্ষ শিবিরের জন্য এ রকমই মূর্তিমান ত্রাস। তাঁকে নিয়ে কানভারী করা নানান গুঞ্জন, সমালোচনা আর বেখবরের পাল্টা জবাব মাঠেই দেবেন বলে ঠিক করেছেন। হয়তো এবার বার্তা পাঠিয়ে দিতে চান মাদ্রিদ থেকে সোয়া ছয় শ কিলোমিটার দূরের শহরটিতেও। টানা চারটি ব্যালন ডি’অর নিয়ে যে শহরে হয়তো উৎসব চলছে এখনো।
অনেকক্ষণ চোখ বুজে বেয়াড়া সেল্টা ভিগোর চোখরাঙানিও সহ্য করেছেন রোনালদো। দুঃসময়ের পাকে পড়ে যাওয়া রিয়ালকে দুই ঘা এই পুঁচকেও দিয়েছিল। প্রথম লেগে রিয়ালকে ২-১ গোলে হারিয়ে কোপা ডেল রের প্রাক-কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই রাজাদের বিদায় করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিল।পরশু সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে সেল্টাকে বাস্তবের জমিনে নামিয়ে আনল রিয়াল। আনলেন আসলে রোনালদো। তাঁর হ্যাটট্রিকে সেল্টাকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে চলে গেল ২০১১ সালের স্প্যানিশ কাপ চ্যাম্পিয়নরা।শেষ আটে রিয়ালের প্রতিপক্ষ ভ্যালেন্সিয়া। এই ভ্যালেন্সিয়ার সঙ্গে ড্র করেই শুরু হয়েছিল লিগে রিয়ালের খুঁড়িয়ে চলা। রোনালদো নিশ্চয়ই সেই কথাও ভুলে যাননি!
২০০৯ সালে স্পেনের রাজধানীতে আসার পর থেকেই রিয়ালের হূৎপিণ্ড হয়ে উঠেছেন। তিনি হাসলে রিয়ালও হাসে। তাঁর নিষপ্রভ দিনে রিয়ালও অনুজ্জ্বল। আর রোনালদো জ্বলে উঠলে কী হয়, হাতেনাতে সেই পাঠ গ্রহণ করে বাড়ি ফিরল সেল্টা। ম্যাচের তিন মিনিটের মাথায় দারুণ এক গোল। শুরুর এই ধাক্কাটাই চূর্ণ করে দিয়েছে সেল্টার আত্মবিশ্বাসের ঠুনকো দেয়াল। ব্যালন ডি’অরের আগের রাতে রিয়াল সোসিয়েদাদের বিপক্ষে দারুণ এক ফ্রি-কিকে গোল করেছিলেন। ঠিক একই জায়গা থেকে এবার ফ্রি-কিকের মতোই বানিয়ে নিলেন রোনালদো। থ্রো থেকে বল পেয়ে আলতো টোকায় সামনে খানিকটা বাড়িয়ে নিয়ে বক্সের বাইরে থেকে নিলেন কিক। রক্ষণদেয়ালের ওপর দিয়ে গোলপোস্টের ডান পাশ ঘেঁষে ঢুকে গেল বল। সেল্টা গোলরক্ষক আলভারেজ ফার্নান্দেজ হতভম্ব!
২৪ মিনিটে রোনালদোর দ্বিতীয় গোলটিও দারুণ। লুকা মডরিচের লম্বা পাস অফসাইডের ফাঁদ ভেঙে বক্সে ঢুকে হাফভলি করে পাঠিয়েছেন জালে। ৭২ মিনিটে লাল কার্ড দেখে সার্জিও রামোস বের হয়ে গেলেও সমস্যা হয়নি রিয়ালের। বরং শেষ ৬ মিনিটে করেছে আরও দুটি গোল। ৮৭ মিনিটে এই মৌসুমে নিজের তৃতীয় হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেছেন রোনালদো। ম্যাচটি রোনালদোময় হয়ে থাকল ৮৯ মিনিটে স্যামি খেদিরার গোলটিও বানিয়ে দিয়েছেন বলে।
দুই ম্যাচ পর প্রথম একাদশে খেলেছেন ইকার ক্যাসিয়াস। রোনালদোর প্রতিটি গোলের পর ক্যামেরা খুঁজে নিয়েছে তাঁকে। ক্যাসিয়াস প্রতিটি গোল নিজের সেই পুরোনো ভঙ্গিতে উদ্যাপন করে বুঝিয়ে দিয়েছেন রিয়াল মাদ্রিদ এখন আবার সুখী পরিবার। যদিও দর্শকদের একটা বড় অংশ পরশুও বিদ্রূপের সিঁটি বাজিয়েছে হোসে মরিনহোর উদ্দেশে। ম্যাচ শেষে রোনালদো বলেছেন, সময় এসেছে সবাইকে একজোট হওয়ার, ‘সমর্থকদের অনুরোধ করব এবার অন্তত থামুন। বস্ (মরিনহো) দায়িত্বেই থাকছেন, এই বছরে আমাদের অনেক কিছু জেতারও আছে। তিনিই যেহেতু দায়িত্বে, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাও তাঁর। সমর্থক আর খেলোয়াড়দের উচিত তাঁকে সহায়তা করা। সমর্থকেরা তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। ঠিক আছে। কিন্তু সেটা যথেষ্ট হয়েছে। এখন তাদের উচিত কোচ আর দলের পাশে এসে দাঁড়ানো।’
নিউজরুম