জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন দলের ছড়াছড়ি !

0
200
Print Friendly, PDF & Email

ঢাকা (১১জানুয়ারী) : দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা ৩১টি দলের সাংগঠনিক কাঠামোর তথ্য অনুসন্ধানে সারাদেশে মাঠে নেমেছেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) মাঠ কর্মকর্তারা। এ ব্যাপারে মাঠ পর্যায়ের উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।এ প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার শাহনেওয়াজ বলেন, “আবেদনকারী রাজনৈতিক দলগুলো আবেদনের শর্ত পালন করেছে কি-না তা দীর্ঘ মেয়াদী অনুসন্ধানের মাধ্যমে খতিয়ে দেখা হবে।”

এ অনুসন্ধান কয়েক দফায় ধারাবাহিক পর্যালোচনার মাধ্যমে দল নিবন্ধনের সুযোগ বাতিলে ভূমিকা রাখবে বলেও জানান তিনি। তবে এই নির্বাচন কমিশনার এও জানান, আগের মতো এবারও দৈবচয়ন পদ্ধতির মাধ্যমে সীমিত পরিসরে দলগুলোর জমা দেওয়া ঠিকানার সত্যতা যাচাই করা হবে। কারণ তালিকার সব অফিসের ঠিকানা যাচাই করার মতো জনবল কমিশনের নেই।

নতুন রাজনৈতিক দল সম্পর্কে কমিশনার শাহনেওয়াজ আরো বলেন, “নতুন নতুন দলগঠন গণতন্ত্রেরই ধারাবাহিকতা। এটা মানুষের সাংবিধানিক নাগরিক অধিকারও।” ইসি সূত্র জানিয়েছে, কোন দল নিবন্ধন পেতে তাৎক্ষণিকভাবে অফিস ভাড়া নিয়েছে কিনা, সংশ্লিষ্ট জেলায় ওই দলের রাজনৈতিক তৎপরতা আছে কিনা তা একাধিকবার অনুসন্ধান চালানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যেসব দল প্রতারণার মাধ্যমে সাংগঠনিক অফিস খুলে নিবন্ধনের চেষ্টা চালাচ্ছে তাদের বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ইসি সচিবালয়কে অবহিত করারও তাগিদ দেওয়া হয়েছে ইসির নির্দেশনায়।

রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন পেতে ২১ জেলায় ও ১০০ উপজেলায় অবশ্যই অফিস থাকতে হবে। প্রতিটি উপজেলায় থাকতে হবে অন্তত ২শ’ সক্রিয় সদস্য। এসব অফিস কতদিন থেকে ভাড়া নেওয়া হয়েছে তা জানাতে মাঠ কর্মকর্তাদের একটি নির্দিষ্ট ফরমও পাঠিয়েছে ইসি।

কমিশনে আবেদনকারী নতুন দলগুলোর জমা দেওয়া সদস্য তালিকাও যাচাইয়ের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে মাঠ কর্মকর্তাদের।

ইসি সূত্র জানিয়েছে, তিন মাস অনুসন্ধানের পর নতুন দলগুলোকে চূড়ান্ত নিবন্ধনের আওতায় আনবে কমিশন।

নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা ৩১ দল হলো- বাংলাদেশ জালালী পার্টি, পিপলস্ ডেমোক্রেটিক পার্টি (বিপিডিপি), বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, বাংলাদেশ নিউ সংসদ লীগ, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় লীগ (বিজেএল), মুক্তিযোদ্ধা কমিউনিজম পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ), বাংলাদেশ জাতীয় দল (বিজেডি), বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট, গণঅধিকার পার্টি (পিআরপি), বাংলাদেশ গণসেবা আন্দোলন (বিজিএ), বাংলাদেশ জনতা দল, বাংলাদেশ প্রবাসী দল, বাংলাদেশ তৃণমূল লীগ, আঞ্জুমানে আল ইসলা, গণতান্ত্রিক ইসলামিক মুভমেন্ট, মুক্ত রাজনৈতিক আন্দোলন (এমআরএ), জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা গণতান্ত্রিক ঐক্যফ্রন্ট, বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টি (বিআইপি), জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ পিপলস লীগ (পিপলস্ লীগ), পাবলিক পার্টি, বাংলাদেশ জনগণতান্ত্রিক দল, মাতৃভূমি দল (মাভূদ), বাংলাদেশ গণঅধিকার দল, বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (বিএলডিপি), বাংলাদেশ গণশক্তি দল, বাংলাদেশ বামফ্রন্ট, জনতা মহাজোট বাংলাদেশ ও সম্মিলিত গণতান্ত্রিক পার্টি (বাংলাদেশ)।

গত ২৩ অক্টোবর নিবন্ধনে ইচ্ছুক দলগুলোর কাছ থেকে গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আবেদন আহবান করে ইসি। ৩১ ডিসেম্বর ছিল আবেদনপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময়। তবে এ সময় আরো বাড়ানো হতে পারে বলে জানিয়েছে ইসি সূত্র।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের বিধান অনুযায়ী নিবন্ধিত হতে হলে প্রথমত, স্বাধীনতার পর থেকে যে কোনো নির্বাচনে ন্যূনতম একটি আসন পাওয়া; দ্বিতীয়ত, স্বাধীনতার পর থেকে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের যে কোনো একটিতে অংশগ্রহণ করে, অংশগ্রহণ করা আসনের প্রদত্ত মোট ভোটের পাঁচ শতাংশ ভোট পাওয়া; এবং তৃতীয়ত, ন্যুনতম ১০ জেলা ও ৫০ উপজেলায় কমিটিসহ দলের অফিস থাকতে হবে।

তবে ২০০৯ সালে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধন করে তৃতীয় শ্রেণীভ‍ুক্ত দলের শর্তে বলা হয়েছে, ন্যুনতম এক-তৃতীয়াংশ জেলা (২১ জেলা) ও ১০০ উপজেলায় অফিস থাকতে হবে। এ বিধানের আওতায় নির্বাচন কমিশন ২০০৮ সালের অক্টোবরে ১০৭টি দলের আবেদন যাচাই করে ৩৯টি রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধিত করে।

এরমধ্যে অতীতে আসন পাওয়ার সুবাদে নিবন্ধনের সুযোগ পায় ১৯টি দল। এগুলো হলো- আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), জাতীয় পার্টি-জেপি, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল(এমএল), কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, গণতন্ত্রী পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, বাংলাদেশের ওয়াকার্স পার্টি, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, গণফ্রন্ট, ইসলামী ঐক্যজোট ও ফ্রিডম পার্টি।

এরমধ্যে নিয়মিত তথ্য দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ২০১১ সালে ফ্রিডম পার্টির নিবন্ধন বাতিল করা হয়। অতীতের নির্বাচনে পাঁচ শতাংশ ভোট পাওয়ার সুবাদে নিবন্ধিত হয় বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ। ন্যুনতম ১০ জেলা ও ৫০ উপজেলায় কমিটিসহ দলের অফিস দেখিয়ে নিবন্ধিত হয় ১৭টি দল।

এগুলো হলো- এলডিপি, জাকের পার্টি, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), গণফোরাম, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল (পিডিপি), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), বিপ্লবী ওয়াকার্স পার্টি ও খেলাফত মজলিশ। এরমধ্যে নবম সংসদ নির্বাচনে একটি আসন পাওয়ায় এলডিপি বর্তমানে প্রথম শ্রেণিভুক্ত দলের তালিকায় আছে।

নিউজরুম

শেয়ার করুন