কক্সবাজার (১১জানুয়ারী) : জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সাংবাদিকতার ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ কি হতে পারে; আর সে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় করণীয় কী তা নিয়ে আলোচনা করতে ‘মিডিয়া মিটস ক্লাইমেট’ নামে ২দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলন কক্সবাজারে শুরু হয়েছে।
বিশ্বের বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে হোটেল ওশেন প্যারাডাইজে এ সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন প্রায় অর্ধশত দেশি বিদেশি সাংবাদিক ও শিক্ষক ও পরিবেশ গবেষক। বিশ্বের ২২টি দেশ থেকে মিডিয়া ক্লাইমেট নেটওয়ার্কের
সদস্যরাও রয়েছেন এই আয়োজনে। সকালে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন ঢাকায় নিযুক্ত নরওয়ে রাষ্ট্রদূত রযাগনে বার্টে লান্ড। বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক আখতার সুলতানা, মিডিয়া ক্লাইমেট নেটওয়ার্কের কো-চেয়ারপার্সন অধ্যাপক এলিজাবেথ আইডে ও কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মফিজুর রহমান।
নরওয়েভিত্তিক মিডিয়া ক্লাইমেট নেটওয়ার্ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ যৌথভাবে এ আয়োজন করেছে। উদ্বোধনী বক্তব্যে র্যাগনে বার্টে লান্ড বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সংবাদমাধ্যমগুলোকে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে তিনি আশা প্রকাশ করেন এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার বাধাগুলো দূর করতে করণীয় দিক নির্ধারণ করা সম্ভব হবে।
বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধে নেওয়া কর্মকৌশলও সংবাদমাধ্যমে আরও গুরুত্বের সঙ্গে আসবে বলেও প্রত্যাশার কথা জানান তিনি। আখতার সুলতানা বলেন, কোনো একটি পক্ষের মাধ্যমে এতবড় সমস্যার সমাধান করা যাবে না। সমাজের সকল গোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে তিনি এক্ষেত্রে সংবাদ মাধ্যমের ভূমিকার ওপর জোর দেন। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কারিকুলামে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়গুলো অন্তর্ভূক্তির কথাও বলেন আখতার সুলতানা।
এলিজাবেথ আইডে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বজুড়েই এখন জীবিকা ঝুঁকির মুখে পড়েছে। তিনি বলেন, সাংবাদিকদের এখন কেবল রিপোর্ট লিখে প্রকাশ করেই দায়িত্ব শেষ করা যাবে না। ভবিষ্যতের জন্য করণীয় কি তার গবেষণায়ও সম্পৃক্ত হতে তবে তাদের। প্রথম কর্ম-অধিবেশনে জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুটি সংবাদমাধ্যমে কিভাবে আসতে পারে সে নিয়ে দীর্ঘ অভিজ্ঞতার আলোকে বক্তব্য তুলে ধরেন ব্রিটেনের দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকার সাংবাদিক জন ভাইড্যাল ও দিল্লিভিত্তিক থার্ডপোল ডট নেট এর জলবায়ু গবেষক ও সাংবাদিক জয়দীপ গুপ্ত।
সঞ্চালনা করেন ফিনল্যান্ডের প্যামপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রিস্টু কুনেলিয়াস। এছাড়াও দিনের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে হিমালয়ের বরফ গলা নিয়ে সালমান সাঈদের প্রামাণ্যচিত্রের প্রদর্শনী। প্রদর্শনীর পর এর ওপর আলোচনা করবেন মফিজুর রহমান। চারটি পৃথক বিষয়ের ওপর অনুষ্ঠিত হবে চারটি অধিবেশন। বাস্তবচিত্র ও ভবিষ্যত পরিবর্তন তুলে ধরতে ফটোসাংবাদিকদের চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করবেন গণযোগাযোগ ও সাবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক সাইফুল হক ও নেপাল থেকে আগত সাংবাদিক দীপেশ শ্রেষ্ঠা। সঞ্চালকের দায়িত্বে থাকবেন পাকিস্তানের সাংবাদিকতা শিক্ষক জারকা আলী।
জলবায়ূ পরিবর্তন সাংবাদিকতা নিয়ে আলোচনা করবেন নরওয়ে থেকে আগত সাংবাদিক লাইজ ম্যারিট কালস্টাড, নেপালের সাংবাদিক কৃতি ভুজু ও বাংলাদেশের একাত্তর টেলিভিশনের স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ফারজানা রূপা। এই অধিবেশন সঞ্চালনা করবেন সুইডেনের সাংবাদিক আনা রুজভাল।
জলবায়ূ বিজ্ঞান সমঝোতা ও পর্যবেক্ষণ সাংবাদিকতা: জলবায়ূ পরিবর্তন বিষয়ে সাংবাদিকের অ্যাডভোকেসি নিয়ে আলোচনা করবেন নরওয়ের সাংবাদিক এরিক মারটিনিউসেন, পাকিস্তানের ইতরাত বশির আহমেদ ও বাংলাদেশের বৈশাখী টেলিভিশনের চিফ নিউজ এডিটর রাহুল রাহা। সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করবেন মফিজুর রহমান।
মূলধারার সংবাদ মাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমগুলোর মধ্যে জলবায়ু সাংবাদিকতায় অভিজ্ঞতার ভিন্ন আঙ্গিক নিয়ে কথা বলবেন রাশিয়ার দিমিত্রি ইয়াগোদিন, পাকিস্তানের শাহজাদা ইরফান ও বাংলাদেশের বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম এর হেড অব নিউজ মাহমুদ মেনন। সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করবেন যুক্তরাষ্ট্রের সাংবাদিক আড্রিয়ানে রাসেল।
এসব অধিবেশনের পর প্লেনারি সেশনে জলবায়ূ পরিবর্তন: বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে কথা বলবেন ঢাকায় অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস এর ব্যুরো চিফ ফরিদ হোসেন। সংলাপের দ্বিতীয় দিনে থাকবে ‘মিডিয়া মিটস ক্লাইমেট: দ্য চ্যালেঞ্জ ফর গ্লোবাল জার্নালিজম’ নামে একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন। ফিনল্যান্ডের প্যামপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রিস্টু কুনেলিয়াস ও মিডিয়া ক্লাইমেটনেটওয়ার্কের কো-চেয়ারপার্সন অধ্যাপক এলিজাবেথ আইডে যৌথভাবে এ বইটি লিখেছেন।
এই দিনেও চলবে চারটি কর্ম অধিবেশন। উন্নয়ন পদ্ধতি ও কোটা পদ্ধতিতে বৈশ্বিক জলবায়ু সংরক্ষণের বিষয়ে আলোচনা করবেন নরওয়ের অ্যাটল অ্যান্ডারসন ও ইন্দোনেশিয়ার ব্রিগিটা ইশোরো। সঞ্চালনা করবেন নরওয়ের এলেন হোভসভ্যাং।
জলবায়ুর পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে কিভাবে সমাজের অবহেলিত ও দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের কাছে পৌঁছানো যায়, তা নিয়ে আলোচনা করবেন ইন্দোনেশিয়ার ওনি সারওয়ানো, পাকিস্তানের জারকা এস আলি, সুইডেনের অ্যানা
রুজভেল্ট, ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতার শিক্ষক সাবরিনা সুলতানা। সঞ্চালনা করবেন ফিনল্যান্ডের রিস্টু কুলেলিয়াস।
রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও জলবায়ুর পরিবর্তন বিষয়ে আলোচনা করবেন ফিনল্যান্ডের রিস্টো কুনেলিয়াস, নরওয়ের আইভিন্ড মোল্ড ও এটিএন বাংলার আমিনা ইসলাম।
জনসাধারণের কাছে পৌঁছানোর জন্য আগামী দিনের পন্থা নিয়ে আলোচনা করবেন নরওয়ের ম্যারি ভাত্মু, ইন্দোনেশিয়ার আন্তাং উডিয়ান্তো, ব্রাজিলের ক্যারোলিন ডি’আইজেন ও নেপালের প্রগতি সাহি। সঞ্চালনা করবেন নরওয়ের এলিজাবেথ আইডে। এই দিনের প্লেনারি সেশনে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে দারিদ্র্যের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করবেন ইন্দোনেশিয়ার স্টিভি এমিলিয়া ও পাকিস্তানের তানভির শাহজাদ। সঞ্চালনা করবেন মিশরের ইব্রাহিম সালেহ।
নিউজরুম