ঢাকা (১১জানুয়ারী) : “প্রধানমন্ত্রী শুধু দায়িত্ব নিয়েই দায়িত্ব শেষ করেছেন। আজ পর্যন্ত তিনি বা তার পক্ষ থেকে কেউ কোনোদিন একটুও খোঁজ নেয়নি মেঘ কিংবা আমাদের। প্রধানমন্ত্রীর তো লোকজনের অভাব নেই, কতো কর্মচারী! কেউ যদি একটু ফোন করতেন, তাহলেও বুঝতাম! কিন্তু কেউ না, কেউ-ই পাশে থাকে না!”
অনেক চেষ্টা করলেন নিহত সাংবাদিক মেহেরুন রুনির মা চোখের পানি আটকাতে। পারলেন না, এক ফোটা/ ২ফোটা করে ঝরে পড়লো কান্নার পানি। দিনকে দিন বুকে চেপে রাখা কষ্ট যেন আস্তে আস্তে গড়িয়ে পড়ছে।
তিনি বললেন, “ঠিক আছে, সাহায্য লাগবে না, বিচার চাই, আমি বিচার চাই” বলেই শব্দ করে কেঁদে উঠলেন মেয়ে-হারা মা।”
চোখ মুছতে মুছতে তিনি বলেন, “আমিতো কাঁদতেও পারি না মেঘের জন্য। কাঁদতে দেখলেই মেঘ চোখ মুছিয়ে দিয়ে বলবে- তুমি কি আমার বাবা-মার জন্য কাদঁছো?”
মেহেরুন রুনির মা আরও বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেদিন বলেছিলেন, “স্বজন হারানোর বেদনা কেমন, আমি তা জানি। আমরা দুই বোন একসঙ্গে মা-বাবা-ভাইসহ পরিবার-পরিজন হারিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী যেমন বাবা মা হারিয়েছেন, মেঘও তো তার বাবা-মা হারিয়েছে।”
আক্ষেপ করে তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী সেদিন হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতার ও বিচারের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত আসল অপরাধীরা ধরা পড়েনি।”
তিনি বলেন, “পুলিশ বলে, কোনো ক্লু পাই না। ক্লু তারা ঠিকই পায় বা পেয়েছে। কিন্তু তারা ক্লু প্রকাশ করে না। কত খুনের কত মানুষের বিচার হয়! আর আমি কি আমার মেয়ে-জামাই হত্যার বিচার পাবো না? ছোট্ট মেঘ কি তার বাবা-মা খুনের বিচার পাবে না?”
ব্যাকুল হয়ে এ মা আকুতি জানান, “কার কাছে গেলে, কী করলে এ হত্যার বিচার হবে, কেউ যদি আমাকে বলে দিতো, তাহলে আমি তাই-ই করতাম।”
মেহেরুন রুনির ভাই নওশের রোমান বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যখন বঙ্গভবনে আমরা দেখা করতে যাই, তখন বঙ্গবন্ধুর একটা ছবি দেখে মেঘ প্রধানমন্ত্রীকে বলেছিল- এ ছবিটা দেখলে মন খারাপ হয়ে যায়। তুমি এ ছবিটা সরিয়ে ফেলো!”
পরে আরেক অনুষ্ঠানে মেঘকে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, “তোমার মন খারাপ হয় বলে আমি ছবিটা সরিয়ে ফেলেছি।”
উল্লেখ্য, ছবিটা ছিল পাইপ মুখে নিয়ে একদিকে তাকিয়ে থাকা বঙ্গবন্ধুর সেই বিখ্যাত ছবি।
উল্লেখ্য, গত ১৩ ফেব্রুয়ারি গণভবনে মেহেরুন রুনির মা নুরুনাহার মীর্জা এবং সাগর সারওয়ারের মা সালেহা বেগম প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন।
সেখানেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেঘের শিক্ষাসহ “উন্নত জীবন গড়ে তোলার জন্য যা যা করা দরকার, তার সবই করবো” বলে জানিয়েছিলেন।
রুনির ভাই নওশের এ প্রতিবেদককে বলেন, “মেঘের নাম করে অনেকেই অনেক কিছু করেন বলে আমরা শুনতে পেয়েছি। এতে করে আমাদের পরিবারকে ছোট করা হচ্ছে।”
এটিএন বাংলার নাম উল্লেখ করে নওশের বলেন, “এটিএন বাংলা এখনও বাইরে বলে বেড়ায়, তারা মেঘের জন্য নানা কিছু করেছে। আপু মারা যাওয়ার পর মে পর্যন্ত তাদের ওখান থেকে কিছু সহযোগিতা আমরা পেয়েছি, এটা ঠিক।
কিন্তু, এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান দেশের বাইরে গিয়ে আপুদের নিয়ে বাজে কথা বলার পর থেকে তাদের সঙ্গে আমাদের সব যোগাযোগ বন্ধ।” নওশের নিজেদের আত্মবোধে জোর দিয়ে বললেন-“যেখানে সম্মান নেই, সেখানে টাকা দিয়ে কী হবে!!”
নিউজরুম