স্পোর্টস ডেস্ক(৯ জানুয়ারী): প্রতিবারই পরনে ছিল সাদা শার্ট। শার্টের ওপর কোট চাপানো। গলায় টাই। চারবছরের ছবিটা প্রায় একই রকম। পার্থক্য কেবল চুল আর গলার টাইয়ের দৈর্ঘ্যে।২০০৯ সালে চুল বেশ বড় ছিল। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেশির ভাগ ছেলের মতোলম্বা চুলের ওপর মোহ কেটেছে তাঁরও। টাইয়ের আকৃতি পাল্টানোর মধ্যেও একটাছন্দ আছে। ২০০৯-এ ছিল লম্বাটে টাই। ২০১০-এ বো-টাই। ২০১১তে আবার ফিরে গেছেনলম্বাটে টাইয়ে। ছন্দ মেলাতেই কি না, এবার, মানে গত পরশু এলেন বো-টাই পরেই।
এইপার্থক্যটুকু বাদ দিলে চার বছরের মতো এবারও জুরিখের সন্ধ্যাটি ছিল একইরকম—মুখে এক চিলতে মায়াময় হাসি। আর সেই হাসির কারণ হাতে ধরা চকচকে সোনাররঙের ছোঁয়া পাওয়া একটা ধাতব বল। যে বল বর্ষসেরার স্বীকৃতি। টানা চারবছরের মতো ফিফা বর্ষসেরা হলেন লিওনেল মেসি। গড়লেন ইতিহাস। টানা চারবার তোদূরের কথা, সব মিলিয়েও চারবার ফিফা বর্ষসেরা হতে পারেননি কেউ। দুই সাবেকমহারথী ব্রাজিলের রোনালদো ও ফরাসি সম্রাট জিনেদিন জিদান সর্বোচ্চ তিনবারকরে জিতেছিলেন এই পুরস্কার।
পৃথিবীর সেরা অ্যাথলেটেরও টানা চার বছর ধরেএকই রকম ফর্ম যায় না। উসাইন বোল্টের মতো অতিমানবকেও ফলস স্টার্ট করে বাদপড়তে হয়। ফর্ম হারিয়ে ফেলেন শচীন টেন্ডুলকার। ক্রিকেটীয় বচনই বলে—ফর্মইজ টেম্পোরারি, ক্লাস ইজ পারমানেন্ট। মেসির শ্রেষ্ঠত্ব বোধ হয় এইজায়গাতেও—তাঁর জন্য ফর্ম আর ক্লাস দুটোই মনে হচ্ছে ‘পারমানেন্ট’!
এইপুরস্কারের একটা যুগসন্ধিক্ষণের সাক্ষীও মেসি। ফিফা বর্ষসেরা আর ব্যালনডি’অর একীভূত হয়েছে তাঁর সময়েই। শুধু ব্যালন ডি’অরের হিসাব ধরলেও টানাচার বছর কেউ এই পুরস্কার জেতেননি। টানা তিন বছর জিতেছিলেন ফ্রান্সের মিশেলপ্লাতিনি। আর সব মিলিয়ে তিনবার করে জেতার কীর্তি আছে দুই ডাচ কিংবদন্তিইয়োহান ক্রুইফ ও মার্কো ফন বাস্তেনের। রেকর্ডের পাতায় মেসি যাঁদের ইতিহাসবানিয়ে দিয়েছেন বলে এতক্ষণ জানলেন, সেই নামগুলো—রোনালদো, জিদান, প্লাতিনি, ক্রুইফ… এঁদের ছাপিয়ে যাওয়া; সেটিও মাত্র ২৫ বছর বয়সে। শুধুএকটি শব্দই উচ্চারিত হয় এই তথ্য মাথায় রাখলে—অবিশ্বাস্য!
২০১২ সালেসত্যিই অবিশ্বাস্য ছিলেন মেসি। এ বছর জার্ড মুলারের চার দশক পুরোনো এক বছরেসর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড ভেঙে করেছেন ৯১ গোল। অবশ্য ব্যক্তি মেসির সবচেয়েসফলতম বছরটাতে ব্যর্থ ছিল তাঁর দল। বার্সেলোনার তিন মৌসুমের আধিপত্যেরঅবসান ঘটিয়ে লা লিগা জিতেছিল রিয়াল মাদ্রিদ। আর সেই লিগ জয়ে বড় অবদানরাখায় মনে হচ্ছিল, এবার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো শক্ত চ্যালেঞ্জই ছুড়েদেবেন মেসির সামনে। জাতীয় দলের পক্ষে সাফল্যেও এগিয়ে ছিলেন রোনালদো, গতইউরোতে পর্তুগালকে তুলেছিলেন সেমিফাইনালে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভোটের হিসাবেদেখা যাচ্ছে মেসির নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা। যেটিকে বলা যায় ‘ভূমিধসজয়’। রোনালদোর চেয়ে প্রায় ১৮ শতাংশ ভোট বেশি পেয়েছেন। রোনালদো আবারওদ্বিতীয় হয়েছেন। ২০০৮ সালে রোনালদো জিতেছিলেন এই ট্রফি। এর পর থেকেমেসিময় চারটি বছরে তিনবারই প্রথম রানারআপ হওয়ার কষ্ট সইতে হলো তাঁকে।তৃতীয় হয়েছেন মেসির বার্সা-সতীর্থ আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা। এই তিনজন মিলেইপেয়েছেন মোট ভোটের ৭৬ শতাংশ! বাকি ২০ জন মিলে ২৪ শতাংশ ভোট।
বর্ষসেরানারী ফুটবলারের পুরস্কার ফিরে গেছে মিয়া হ্যামের দেশে। জিতেছেন অ্যাবিওয়াম্বাখ। ২০০২ সালের পর এই প্রথম কোনো মার্কিন ফুটবলার জিতলেন এইপুরস্কার। টানা পাঁচবার বর্ষসেরা হওয়া মার্তা টানা দ্বিতীয় বছর দ্বিতীয়হলেন। গার্দিওলা-মরিনহোদের টপকে বর্ষসেরা কোচ হয়েছেন ভিসেন্তে দেল বস্ক। এবছর ফিফা প্রেসিডেন্ট অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়েছে জার্মান কিংবদন্তিফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ারকে।
তবে মেসিময় রাতে এঁরা সবাই পার্শ্বচরিত্র। এবং তাতে বাকি সবার খুব একটা আপত্তি আছে বলেও মনে হয় না!
নিউজরুম