আর্ন্তজাতিক ডেস্ক(৮ জানুয়ারী): অযত্ন-অবহেলার কারণে গাজার হাজার বছরের পুরোনো ইতিহাস-ঐতিহ্য অনেকটাইক্ষয়ে গেছে। যে সামান্য প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে টিকেআছে, তা-ও এখন হুমকির মুখে।
এসব সম্পদ সংরক্ষণের চেষ্টাও শত প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন। বিবিসির এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য ফুটে উঠেছে।
ইতিহাসবেত্তাও প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতে, পাঁচ হাজার বছর ধরে সভ্যতার ক্রমবিকাশের ধারায়স্তরে স্তরে (লেয়ার-আপন-লেয়ার) গড়ে উঠেছে আজকের গাজা উপত্যকা। একেকটিযুগ অতিক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই যুগের লোকেরা রেখে গেছে তাদেরমসজিদ, গির্জা, মঠ, প্রাসাদসহ মূল্যবান স্থাপত্য। এখনো সেগুলোর যেধ্বংসাবশেষ আছে, তার সবই বিলীন হওয়ার পথে।
ইসলামপন্থীহামাস-নিয়ন্ত্রিত গাজার পর্যটন ও পুরাকীর্তিবিষয়ক মন্ত্রণালয়েরপ্রত্নতত্ত্ববিদ হায়াম আলবেতার বলেন, ‘গাজার নিচে রয়েছে আরেক গাজানগর।কিন্তু এখানে যে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন বা স্থানের সন্ধান মেলে, তা কেবলইদুর্ঘটনাবশত।’
হায়াম আলবেতার বলেন, ‘আমরা বাইজানটাইন সাম্রাজ্যেরসময়কার একটি গির্জা অবিষ্কার করেছি। তবে সালাউদ্দিন সড়ক নির্মাণকালেশ্রমিকেরা যখন খননকাজ করছিলেন, তখন একটি মোজাইক পাথরের ওপর হোঁচট খেয়েপড়ার পরই এটি পাওয়া যায়।’
গাজার প্রত্নতাত্ত্বিক খননকাজ চালানো এবং পুরাকীর্তি সংরক্ষণে সরকারিভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান এই মন্ত্রণালয়।
সম্প্রতিএই মন্ত্রণালয় তার কাজে বিভিন্ন ধরনের বাধার মুখে পড়ছে। গত বছরেরনভেম্বরে হামাসের সঙ্গে লড়াইকালে ইসরায়েল বোমা মেরে সরকারি আবু খাদরাকমপ্লেক্স মাটিতে মিশিয়ে দিলে এই মন্ত্রণালয়ের কার্যালয়ও ধ্বংস হয়েযায়।
মন্ত্রণালয়টির কর্মকর্তারা বলেন, ইসরায়েলি হামলায় অনেকঐতিহাসিক স্থান গুঁড়িয়ে গেছে। পর্যটন ও পুরাকীর্তিবিষয়ক উপমন্ত্রী আহমেদআল-বারশ বলেন, ‘গত বছর যুদ্ধে বাইজানটাইন গির্জায় একটি বোমা সরাসরি আঘাতহানে। ধ্বংস হয়ে যায় এর মোজাইকের মেঝে। বোমা বিস্ফোরণে ফাটল ধরেছে মামলুকআল-বাশা প্রাসাদ ও পুরোনো গাজার প্রাচীন দেয়ালগুলোতে।’ তহবিলের ঘাটতিরকারণে ওই গির্জার মেরামতকাজ কঠিন হয়ে উঠবে বলেও জানান কর্মকর্তারা।
তহবিলেরএ রকম ঘাটতিই শুধু নয়, সমস্যা রয়েছে আরও অনেক। যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ, ইসরায়েল ও এদের মিত্রদের কাছে ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠী’ হিসেবে পরিচিত হামাস ওইমন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রণ করায় বাইরের সংস্থা কালেভদ্রে ক্ষতিগ্রস্তস্থাপনার সংস্কারে হাত বাড়ায়। আবার গাজার প্রবেশপথগুলো কড়াকড়িভাবেনিয়ন্ত্রণ করে ইসরায়েল। তারা প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও উপকরণ এখানে নিয়েযাওয়ার অনুমতি দেয় না।
প্রত্নতত্ত্ববিদ হায়াম আলবেতার বলেন, এইঅবস্থার মধ্যেই দুই মাস আগে উত্তর গাজার বেইত লাহিয়া এলাকায় এক অপূর্বশিল্পকর্মের সন্ধান পাওয়া গেছে। এক ব্যক্তি তাঁর বাড়ির কাছে মাটি খুঁড়তেগিয়ে এর সন্ধান পান। ধারণা করা হচ্ছে, সেখানে কোনো বিশাল স্থাপত্যনিদর্শন লুকিয়ে আছে।
সালিম নামের স্থানীয় একজন ঐতিহাসিক বলেন, গাজার বন্দর বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলোর একটি।
প্রাচ্যেসুগন্ধি, খাদ্যশস্য, কাপড় ও মসলা রপ্তানির দ্বার হিসেবে এটি শত শত বছরধরে ব্যবহূত হতো। কালের গর্ভে এটি হারিয়ে যায়। তবে রেখে যায় উপকূলীয়প্রত্নতাত্ত্বিক গুপ্তভান্ডার। এক শান্ত দিনে উপকূল থেকে আমরা আবিষ্কারকরেছি প্রাচীন মুদ্রা, কাচের জিনিস ও মৃৎপাত্র।
মেইউমাস এ রকমই আরেকটিবন্দর। রোমান আমলের এই বাণিজ্যিক বন্দরে ছিল ১০টি গির্জা। পরে এগুলো বালুতেঢাকা পড়ে এবং একসময় সাগরে তলিয়ে যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, এসব নিদর্শনহারিয়ে যাওয়ার পরও যা রয়ে গেছে, তা সংরক্ষণে নেই যথেষ্ট মনোযোগ। এরপেছনে কারণও আছে। অধিকাংশ গাজাবাসী চরম বেকারত্বে হাবুডুবু খাচ্ছে। তাদেরনেই তেমন থাকার জায়গাও। যা আছে তা হলো—কৃষি, মৎস্য আহরণ ও ঐতিহাসিকনিদর্শন রক্ষার জন্য উপকরণ সংগ্রহের মতো কাজে সীমাহীন বিধিনিষেধ।
নিউজরুম