পদ্মার তথ্য গায়েব, তথ্য পুনরুদ্ধারে দুদক বুয়েট

0
135
Print Friendly, PDF & Email

ঢাকা (০৮জানুয়ারী) : হার্ডডিস্ক নষ্ট করে ফেলায় কারাবন্দি দুই আসামির কম্পিউটার জব্দ করেও পদ্মাসেতু প্রকল্পের কোনো তথ্য পাচ্ছে না দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

কিন্তু কানাডা থেকে এসএনসি লাভালিনের সাবেক কর্মকর্তা রমেশের ডায়রির অনুলিপি পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় এসব কম্পিউটার থেকে তথ্য উদ্ধারই অন্যতম চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিরুপায় হয়ে তাই বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দ্বারস্থ হয়েছে দুদক।

বুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত পাঁচ সদস্যের এক্সপার্ট প্যানেল দু’একদিনের মধ্যেই কাজ শুরু করবে বলে জানিয়েছে দুদককে।

আদালতে দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন- পদ্মাসেতু দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের মামলার কারাবন্দি দুই আসামি সাবেক সেতু সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া ও সেতু বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কাজী মো. ফেরদৌস তাদের ডেস্কটপ ও ল্যাপটপের হার্ডডিস্ক নষ্ট করে ফেলেছেন। এমনকি কানাডিয়ান পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এসএনসি লাভালিনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আদান-প্রদান করা ই-মেইলগুলোও মুছে ফেলেছেন তারা।
 
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এসব তথ্য পুনরুদ্ধারে দুদক এখন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের সাহায্য নেবে। এ বিষয়ে সোমবার বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দলের সঙ্গে আলোচনাও করে দুদক কর্তৃপক্ষ।

কম্পিউটার ও ই-মেইল যোগাযোগের তথ্য ফেরত পেতে কতদিন সময় লাগবে বিশেষজ্ঞ দলের কাছে তাও জানতে চায় দুদক। বুয়েটের প্রকৌশলীরা দুদককে কতদিন সময় লাগবে সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু না জানালেও  দ্রুত যেনো কম্পিউটার ও ই-মেইলের তথ্য উদ্ধার করা যায় সেজন্য একটি এক্সপার্ট প্যানেল তৈরি করবেন বলে জানিয়েছেনে। দু`একদিনের মধ্যেই এ এক্সপার্ট প্যানেল কাজ শুরু করবে।
 
বুয়েট সূত্রে জানা গেছে, পাঁচ সদস্যের এ এক্সপার্ট প্যানেলে থাকবেন সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার বিশেষজ্ঞরা। প্রয়োজনে এ সংখ্যা বাড়ানো হতে পারে। দু`একদিনের মধ্যে জব্দ করা কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ দলের কাছে পাঠাবে দুদক।
 
পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতির ষড়যন্ত্র করার অভিযোগে ১৭ ডিসেম্বর সাতজনকে আসামি করে বনানী থানায় মামলা করে দুদক। পরেরদিন মামলা তদন্ত করতে চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। টিমের প্রধান করা হয় দুদকের জ্যেষ্ঠ উপ-পরিচালক আবদুল্লাহ আল জাহিদকে।

মামলার পর মোশাররফ ও ফেরদৌসকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে  এনে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও কম্পিউটার ও ই-মেইলে আলামত নষ্ট করার ব্যাপারে মুখ খোলেননি তারা। দু`জনই জানিয়েছেন, ই-মেইলের কোনো তথ্য মোছেননি তারা। হার্ডডিস্কও নষ্ট করেননি।
 
তদন্ত টিমের এক সদস্য জানান, পরামর্শক কাজের টেন্ডার আহ্বানের সময় থেকে প্রাক যাচাই পর্যন্ত আদান-প্রদান করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ই-মেইল মুছে ফেলা হয়েছে। লাভালিনের সঙ্গে মেইলে যোগাযোগের তথ্যও মুছে ফেলা হয়েছে।  মামলার আগেই এসব আলামত নষ্ট করে ফেলা হয় বলে ধারণা করছে দুদক।

দুই আসামিরর সাতদিনের রিমান্ড শেষ হলেও তাদের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির জন্য নেওয়া যাচ্ছে না। কারণ এখনই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলে আসামিরা তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করবেন।

মামলার এজাহার বিবরণীতেও ই-মেইলে এসএনএনসি লাভালিনের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়টি উল্লেখ করেছে দুদক। তাছাড়া বিশ্বব্যাংক ও কানাডার রয়েল মাউন্টেড পুলিশের কাছেও মেইলে যোগাযোগের প্রমাণ রয়েছে বলে জানিয়েছে।

দুদক চায়, কম্পিউটার ও মেইলের আলামত পুনরুদ্ধারের পরই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির জন্য দুই আসামিকে আদালতে নেওয়া তদন্ত টিমের আইনি মোকাবেলা করতে সহজ হবে। বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দল এসব তথ্য এখন পুনরুদ্ধার করতে পারলেই তদন্ত এগিয়ে যাবে।
 
দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বাংলানিউজকে বলেন, “ দুদক যেনো আদালত মোকাবেলা করতে পারে সেজন্য তদন্ত টিম তথ্য উদঘাটনে কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে। মামলা পরবর্তী যেসব তথ্য প্রয়োজন সেসব তথ্য উদ্ধারই তদন্ত টিমের কাজ।“

পদ্মা সেতু প্রকল্পে কানাডিয়ান কারিগরি প্রতিষ্ঠান এসএনসি লাভালিনকে পরামর্শক হিসেবে কাজ পাইয়ে দিতে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ১৭ ডিসেম্বর সাবেক সেতু সচিবসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।

সাত আসামির মধ্যে চারজন বাংলাদেশের নাগরিক। মোশাররফ হোসেন ও ফেরদৌস ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন-সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী রিয়াজ আহমেদ জাবের ও ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড প্ল্যানিং কনসালট্যান্ট লিমিটেডের (ইপিসি) ডিএমডি মো. মোস্তফা। বাকি তিনজন লাভালিন কর্মকর্তা।

মামলা দায়েরের পর দুদক দেশের চার আসামিকে গ্রেফতারে অভিযান চালায়। এর ১০ দিনের মাথায় ২৬ ডিসেম্বর দুপুরে হাইকোর্ট থেকে জামিনে ছাড়া বের হয়ে আসার পথে দুদকের পরিচালক উইং কমান্ডার মো. তাহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে দুদকের একটি টিম গণপূর্ত ভবনের সামনে থেকে মোশাররফ ও ফেরদৌসকে গ্রেফতার করে।
 
মামলার এজাহারভুক্ত তিন বিদেশি আসামি হলেন- এসএনসি লাভালিনের সাবেক পরিচালক (আন্তর্জাতিক প্রকল্প বিভাগ) মোহাম্মদ ইসমাইল, সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট রমেশ সাহা ও কেভিন ওয়ালেস।

এদের মধ্যে রমেশ সাহার ডায়রিতে সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনসহ ৫ জনের নাম উল্লেখ করে পরামর্শকের কাজ পেতে হলে তাদের ঘুষ দেওয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে বলে সরকার ও দুদককে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। এ বিষয়ে দুদকের কাছে গ্রহণযোগ্য তদন্তও দাবি করে তারা।

দুদকের মামলায় সাবেক দুই মন্ত্রীকে পরোক্ষ আসামি করায় বিশ্বব্যাংক নাখোশ হয়। তবে তারা এখনও দুদকের মামলার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোন বিবৃতি দেয়নি। দুদক কমিশনার এম সাহাবুদ্দিন চুপ্পু এ বিষয়ে বলেন, “আমরা এজাহারের কপি ইংরেজি ভার্সন করে অনুসন্ধান প্রতিবেদনসহ বিশ্বব্যাংকের কাছে পাঠিয়েছি। তারা এখন কী করবে জানি না।”
 
এসএনসি লাভালিনের সাবেক কর্মকর্তা রমেশের ডায়রির অনুলিপি এখনও পায়নি দুদক। রহস্যময় ওই ডায়রি না পেলে মামলার তদন্ত কাজ স্বচ্ছ হবে না বলে আরও আগে জানান দুদক কমিশনার মো. বদিউজ্জামান। এ বিষয়ে একই কথা জানান তদন্ত কর্মকর্তারাও।
 
তদন্ত টিমের এক সিনিয়র কর্মকর্তা সদস্য বলেন, “তাদের যেসব করণীয় ছিল তারা করেছেন। এখন যেসব তথ্য-প্রমাণ লাগবে সেগুলো সংগ্রহ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কারণ কানাডা সরকারের অনুমতি না মিললে ওই দেশে যাওয়া যাবে না। তাছাড়া রমেশ ও ইসমাইলের বিরুদ্ধে ওই দেশে বিচার কাজ চলার কারণে সে দেশের আদালত আপাতত ডায়রি দেবে কি না, তা নিয়েও সংশয় আছে।”

তিনি আরো বলেন, “এছাড়া বিশ্বব্যাংক দ্বিতীয়বারের সফরের সময় বলেছিল, মামলা-পরবর্তী সময়ে তদন্ত কাজে পর্যাপ্ত সহায়তা করবে। কিন্তু কার্যত তা দেখছে না দুদক।“ এখন আসামিদের কম্পিউটার ও ই-মেইল থেকে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের আলামত উদ্ধার করতে না পারলে দুদকের তদন্ত বেকায়দায়ও পড়তে পারে বলে মত প্রকাশ করেন ওই কর্মকর্তা

নিউজরুম

শেয়ার করুন