রুপসীবাংলা, কৃষি ডেস্ক (০৮জানুয়ারী) : ৬০০ কোটি টাকা উৎপাদন ঘাটতির আশঙ্কা নিয়ে যশোরের কৃষকেরা বোরো আবাদ শুরু করেছেন। ডিজেল ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি উৎপাদন খরচের তুলনায় ধানের দাম না বাড়ায় এ লোকসান হবে। কৃষকদের অন্য কোনো অবলম্বন না থাকায় লোকসান হবে জেনেও তারা চাষাবাদ করছেন বলে জানিয়েছেন।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এবার যশোর জেলায় এক লাখ ৫০ হাজার হেক্টর একরে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। ধান রোপণের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। তবে কৃষকদের স্বতঃস্ফূর্ততার যথেষ্ট অভাব লক্ষ করা গেছে। কারণ হিসেবে তারা জানিয়েছেন, এবার বোরো আবাদে বিঘাপ্রতি পাঁচ-ছয় হাজার টাকা লোকসান হবে। ডিজেলের দাম লিটারপ্রতি সাত টাকা বাড়িয়ে দেয়ায় এবার এক বিঘা বোরো আবাদে সেচ খরচ ধরা হয়েছে ছয় হাজার টাকা। গত বছর ডিজেলের দাম ছিল প্রতি লিটার ৬২ টাকা। বিঘায় সেচ খরচ দিতে হয়েছিল পাঁচ হাজার টাকা। শোনা যাচ্ছে সরকার এ মাসের যেকোনো সময় বিদ্যুতের দামও বাড়াবে। ডিজেল বিদ্যুতের দাম বাড়ার পাশাপাশি মজুর ও চাষ খরচসহ সব কিছুর দাম বেড়েছে। আগে এক বিঘা জমি রোপণের কাজে মজুর খরচ ছিল এক হাজার টাকা। এবার এক হাজার ২০০ টাকা থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা হয়েছে। চাষ খরচও বেড়ে ৭০০ টাকা থেকে এক হাজার টাকায় উঠেছে। এ ছাড়া রয়েছে ক্ষেত পরিচর্যা, সার, কীটনাশক, ফসল কাটা, মাড়াই প্রভৃতি অত্যাবশ্যকীয় খরচ। সবমিলিয়ে এবার এক বিঘায় বোরো চাষে খরচ পড়বে ১৪ হাজার টাকার ওপরে।
কৃষকেরা অভিযোগ করেছেন, সেচ খরচ বাবদ সরকার প্রতি বছর কিছু ভর্তুকি দেয়। কিন্তু এ টাকা কোনো কৃষক পান না। সেচ মেশিন মালিকেরা ভর্তুকির সুফল ভোগ করেন। উৎপাদনকারী কৃষকেরা এর কিছু অংশ পেলে তারা সামান্য হলেও আর্থিক সাশ্রয় পেতেন।
ঝিকরগাছা উপজেলার নওদাপাড়া গ্রামের কৃষক ওসমান গনি জানান, ভর্তুকির টাকা কৃষকদের দিলে তারা বিঘায় অন্তত ৫০০ টাকা সাশ্রয় পেতেন।
এক বিঘা জমিতে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত উৎপাদন খরচ হয় ১৪ হাজার টাকা। কৃষি বিভাগ ও কৃষকেরা জানিয়েছেন, এক বিঘায় সাধারণত ১৬ মণ করে বোরো ধান উৎপাদন হয়। বর্তমানে ধানের গড় দাম মণপ্রতি ৭০০ টাকা। ধানের বাজার মূল্যের অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, বোরো ফসল উঠলে এ দাম প্রতি মণে ২০০ টাকা কমে দাঁড়াবে ৫০০ টাকায়। কৃষকেরা তাদের প্রয়োজনে ওই সময় কম মূল্যে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হবেন। এতে এক বিঘার ১৬ মণ ধান বিক্রি করে তারা পাবেন মাত্র আট হাজার টাকা। অর্থাৎ বিঘায় ঘাটতি ছয় হাজার টাকা, যা হেক্টরে দাঁড়ায় ৩৭ হাজার ৫০০ টাকা। এ হিসাবে দেড় লাখ হেক্টরে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ৬০০ কোটি টাকারও বেশি।
শার্শা উপজেলার বোরোচাষি আবদুল মান্নœান জানান, ধানের দাম কমে যাওয়ায় বোরো চাষের প্রতি কৃষকদের আগ্রহ কমে গেছে। কৃষিকাজ ছাড়া তাদের অন্য কোনো অবলম্বন নেই বলে তারা বাধ্য হয়ে লোকসান জেনেও বোরো আবাদ করছেন। নতুবা তাদের হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকা ছাড়া পথ নেই।
নিউজরুম