৮ জানুয়ারি, ২০১৩।।
বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের গুম ও খুনের তালিকা ক্রমশ দীর্ঘ হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে একের পর এক গুমের ঘটনা ঘটলেও সরকার নির্বিকার ভূমিকা পালন করে আসছে। মাঠপর্যায়ের রাজনীতিতে সক্রিয়, বিরোধী দলের রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা এখন মামলা, গ্রেফতার, গুম ও খুনের টার্গেটে পরিণত হয়েছেন। এই তালিকায় সর্বশেষ যোগ হলেন ঢাকা মহানগরী ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম। কুষ্টিয়ার কুমারখালী থেকে হাতকড়া পরা অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। র্যাবের পরিচয় দিয়ে তার শ্বশুরবাড়ি ঝিনাইদহের শৈলকূপা থেকে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় শনিবার। এর পরদিন তার লাশ উদ্ধার করা হয়।
নিহতের পরিবার দাবি করছেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণেই তাকে হত্যা করা হয়েছে। এর আগে একই ওয়ার্ডের বিএনপি নেতা ও ঢাকার সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার চৌধুরী আলমকেও গুম করা হয়েছে। আড়াই বছর আগে তিনি রাজধানী থেকে নিখোঁজ হলেও এখনো তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। রফিকুল স্থানীয়পর্যায়ে সরকারবিরোধী আন্দোলনে অত্যন্ত সক্রিয় ছিলেন। গণতান্ত্রিক রাজনীতি করতে গিয়ে সাহসী ভূমিকাই খুব সম্ভবত তার জীবনের জন্য কাল হলো।
বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের এভাবে গুমের পর খুনের অধন্য সংস্কৃতি বর্তমান সরকারের আমলে ব্যাপকভাবে চালু হয়েছে। এটা আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। সেই সাথে ুণœ হচ্ছে দেশের মর্যাদা। এর আগে বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতা ইলিয়াস আলী গুম হয়েছেন। যশোরের একজন মাঠপর্যায়ের বিএনপি নেতা নাজমুল হককেও গুম করে পরে হত্যা করা হয়। আতঙ্কের বিষয় হলো, এসব গুম-খুনের ঘটনার সাথে সরাসরি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু পুলিশ, র্যাব বা গোয়েন্দা সংস্থা এসব ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করছে বরাবরই। কিন্তু তারা একটি ঘটনারও রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি। কারা এসব ঘটনায় জড়িত তাদের গ্রেফতার করা দূরের কথা। ফলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এসব গুম-খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার দায় কোনোভাবেই এড়াতে পারে না।
একের পর এক বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের নির্যাতন, গ্রেফতার, গুম ও খুনের ঘটনা দেশে রাষ্ট্রীয় মদদে ভয়াবহ রাজনৈতিক সন্ত্রাসের প্রমাণ বহন করছে। রাষ্ট্রযন্ত্রের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণ করে, দেশে গণতান্ত্রিক রাজনীতির পরিবেশ এখন কার্যত নেই। বাস্তবে দেশ পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত বাহিনী ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। এ অবস্থা দেশের ভয়াবহ ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দেয়। দেশে কোনো মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নেই। প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে কিংবা বিরোধী রাজনৈতিক দলকে দমনের জন্য খুনের পথ বেছে নেয়া হচ্ছে নির্দ্বিধায়। আমরা মনে করি, প্রতিটি খুন ও গুমের দায়দায়িত্ব সরকারকে বহন করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি এ ঘটনায় জড়িত না থাকে, তাহলে এই গুম ও খুনের সাথে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে বিশ্বাসযোগ্যভাবে প্রমাণ করতে হবে যে, এসব ঘটনায় তারা জড়িত নয়। না হলে সরকারের বিভিন্ন বাহিনীর পোশাক পরে এভাবে একের পর এক মানুষ গুম বা খুন করা হবে; আর সাথে সাথে তার দায় অস্বীকার করা হবে, তা জনগণের কাছে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। মন্ত্রীরা প্রায়ই বলেন, দেশকে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে তারা বের করে আনতে চান। তাদেরই আমলের এসব গুম-খুনের বিচার হচ্ছে না কেন? কাদের ওপর এর দায় বর্তাবে? আমরা আশা করব, রফিকুল ইসলাম খুনের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে শিগগিরই আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।