ফিরে দেখা ব্যাংকিং খাত চার বছরে দেড় হাজার নতুন শাখা

0
149
Print Friendly, PDF & Email

ঢাকা (০৭ জানুয়ারী) : ২০০৯ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত চার বছরে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এক হাজার ৪৪০টি নতুন শাখা চালু করেছে। এ পদক্ষেপের মাধ্যমে দেশের ব্যাংকিং খাতকে অনেকটাই তৃণমূল পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

নতুন শাখা সম্প্রসারিত হওয়ার ফলে এতদিন ব্যাংকিং সেবার বাইরে থাকা দেশের একটি বিরাট জনগোষ্ঠী বর্তমানে ব্যাংকিং সেবার আওতায় এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে দেশে ৪৭টি ব্যাংকের মোট শাখার সংখ্যা পৌঁছেছে ৮ হাজার ১১৮টিতে।

গত ৪ বছরে নতুন শাখা খোলার ব্যাপারে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো পিছিয়ে পড়েছে। তবে সরকারের গত চার বছরে সবচেয়ে বেশি শাখা সম্প্রসারিত করেছে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো।  

বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী বর্তমান সরকারের মেয়াদের প্রথম চার বছরে বাংলাদেশ ব্যাংক যে পরিমাণ নতুন শাখা খোলার অনুমতি দিয়েছে, এর আগে কোনো সরকারের মেয়াদে এতো বেশি পরিমাণ শাখা খোলার অনুমতি দেওয়া হয়নি।

নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, বিগত চার বছরের মধ্যে ২০১০ সালে সবচেয়ে বেশি নতুন শাখা খোলার অনুমতি পায় ব্যাংকগুলো। এ সময় মোট ৪৭১টি শাখা খোলা হয়। এছাড়া দেশে কর্মকাণ্ড পরিচালনারত ৪৭টি তফসিলি ব্যাংকের আওতায় ২০০৯ সালে ৩০১ টি, ২০১১ সালে ৩০৩ টি এবং ২০১২ সালে ৩৫৬টি শাখা খোলা হয়েছে।

জানা গেছে, চার বছরে রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক সোনালী, জনতা, অগ্রণী এবং রূপালী ব্যাংক মোট ৯৪টি নতুন শাখা চালু করেছে।

অপরদিকে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো খুলেছে এক হাজার ২৪৬টি নতুন শাখা।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, এই চার বিশেষায়িত ব্যাংকের শাখা খোলার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৯টি। আর ৯ বিদেশি ব্যাংক চার বছরে খুলেছে ১১টি নতুন শাখা।  

তথ্য মতে, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসে ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে। সরকারের মেয়াদের প্রথম কয়েক মাস বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের দায়িত্বে ছিলেন ড. ফরাসউদ্দিন আহমদ। এর পরে এপ্রিলে বর্তমান গভর্নর ড. আতিউর রহমানকে নিয়োগ দেয় সরকার। তিনি মে মাসের ২ তারিখে আনুষ্ঠানিক ভাবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই ব্যাংকিং খাতকে আরও মানবিক ও তৃণমূল বান্ধব করে গড়ে তোলার কাজ শুরু করেন তিনি।

জানা গেছে, গত বছরের ২২ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে শাখা খোলার ব্যাপারে একটি মাইলফলক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এতে বলা হয়, শহর এলাকার পাশাপাশি ব্যাংকিং সেবার বাইরে থাকা পশ্চা‍ৎপদ জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকিং সেবার মধ্যে আনতে সকল বাণিজ্যিক ব্যাংককে একটি শাখা শহরে এবং একটি শাখা গ্রামে, এ অনুপাতে খুলতে হবে।

সূত্র জানায়, ২০০৯ সালে ৪৭টি ব্যাংক মোট ৩০১টি শাখা খুলতে পেরেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শাখা খুলেছে ৩০টি বাণিজ্যিক ব্যাংক, তারা মোট ২৯২টি শাখা খুলেছে। একই সময়ে র‍াষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ৪টি, রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংক ৩টি এবং বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংক ২টি শাখা খুলেছে।

সূত্র মতে, ২০১০ সালে গত চার বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শাখা খোলার অনুমতি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ বছর মোট ৪৭১টি শাখা খোলা হয়। এর ৪৩৬টি খোলে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। অপরদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক এবং বিশেষায়িত ব্যাংক যথাক্রমে ১৪ এবং ১৭টি শাখা খোলে। আর বিদেশি ব্যাংকগুলো খোলে ৪টি শাখা।

এরই ধারাবাহিকতায় ২০১১ সালে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো দেশে মোট ২৪৫টি নতুন শাখা খোলে। একই বছরে ৩৩টি নতুন শাখা খোলে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো। রাষ্ট্রায়াত্ত বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো খোলে ২৪ টি শাখা। তবে মাত্র ওই বছর মাত্র একটি শাখা খোলে একটি বিদেশি ব্যাংক। সব মিলিয়ে ২০১১ সালে মোট ৩০৩ টি নতুন শাখা চালু হয়।  

বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্র মতে,  সদ্য সমাপ্ত ২০১২ সালে মোট ৩৬৫টি শাখা খোলার অনুমতি পেয়েছিলো ৪৭টি তফসিলি ব্যাংক। এর মধ্যে ২৭৩টি শাখা খুলেছে ৩০টি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক, রাষ্ট্রায়ত্ত চার বাণিজ্যিক ব্যাংক ৪৩টি, রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত চার ব্যাংক ৪৫টি এবং বিদেশি ব্যাংক ৪টি নতুন শাখা খোলার অনুমতি নিয়েছিলো। তবে চূড়ান্তভাবে কোন ব্যাংক কয়টি শাখা খুলেছে তা জানা যাবে চলতি বছরের জানুয়ারির শেষ দিকে।

সূত্র জানায়, একই সময়ে কৃষি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের (এসএমই) জন্য মোট ২৫৩টি কৃষি এবং এসএমই শাখা খোলার অনুমতি পেয়েছে আগ্রহী ব্যাংকগুলো। ইতোপূর্বে এ ধরনের শাখা খোলার অনুমোদন দেয়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।  

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক কে এম আব্দুল ওয়াদুদ জানান, “বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের ব্যাংকিং সেবার বাইরে থাকা জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকিং সেবার মধ্যে নিয়ে আসতে কাজ করে যাচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে গত চার বছরে আমরা ব্যাংকগুলোর সক্ষমতা বিবেচনা করে রেকর্ড সংখ্যক শাখা খোলার অনুমতি দিয়েছি। ফলে এতদিন ব্যাংকিং সেবার বাইরে থাকা বিরাট জনগোষ্ঠী নতুন করে সেবার আওতায় এসেছে।”

নিউজরুম

শেয়ার করুন