কৃষি ডেস্ক(৭ জানুয়ারী): চলতি মৌসুমে বোরো চাষের শুরুতেই জ্বালানি তেল ডিজেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। একারণে এবার জয়পুরহাট জেলার বোরো চাষিদের গত বছরের তুলনায় ডিজেল বাবদঅতিরিক্ত প্রায় সাত কোটি টাকা গুনতে হবে। এ নিয়ে জেলার বোরো চাষিদের মাঝেক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। কারণ পর পর গত দুই বছর ধানের দাম না পেয়ে লোকসানগুনতে হয়েছে তাঁদের।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলার পাঁচটি উপজেলায় চলতি মৌসুুমে ৬৯ হাজার ১৯৯ হেক্টর জমিতে বোরো চাষেরলক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ডিজেলচালিত গভীর ও অগভীরনলকূপের মাধ্যমে ২৪ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দিয়ে বোরো আবাদ করা হবে। বাকি৪৫ হাজার ১৯৯ হেক্টর জমি বিদ্যুৎচালিত গভীর ও অগভীর নলকূপের মাধ্যমে সেচদিয়ে বোরো চাষ করা হবে। জেলায় ডিজেলচালিত গভীর নলকূপ রয়েছে ২২৮টি ও অগভীরনলকূপ রয়েছে নয় হাজার ৪৫৭টি। এসব নলকূপে ডিজেল ব্যবহার হয় ৯৭ লাখ ৮৩ হাজার৯০০ লিটার। ডিজেলের দাম লিটারপ্রতি সাত টাকা বাড়ানোয় চাষিদের অতিরিক্ত ছয়কোটি ৮৪ লাখ ৮৭ হাজার ৩০০ টাকা অতিরিক্ত খরচ করতে হবে।
চাষিদের সঙ্গেকথা বলে জানা গেছে, এক বিঘা জমিতে বোরো চাষ করতে ডিজেল লাগে গড়ে ৩৫ লিটার।লিটারে সাত টাকা দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষককে প্রতি বিঘা জমিতে ডিজেল তেলেঅতিরিক্ত খরচ করতে হবে ২৪৫ টাকা। এ ছাড়া শহরে পাম্প ও এজেন্টরা ৬৮ টাকাদামে তেল বিক্রি করলেও বিভিন্ন গ্রামে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেএলাকাভেদে ৭০-৭২ টাকায় কিনতে হয়। ডিজেলচালিত অগভীর নলকূপের মালিক ক্ষেতলালউপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের রেজাউল ইসলাম জানান, তাঁদের স্থানীয় বাজার থেকেইডিজেল কিনতে হয়। এ জন্য সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে দু-চার টাকালিটারপ্রতি বেশি দাম দিতে হয়। গত বছর ডিজেলচালিত অগভীর নলকূপে সেচ বাবদবিঘাপ্রতি নেওয়া হয়েছিল দুই হাজার ৫০০ টাকা। এবার তিন হাজার টাকা থেকে তিনহাজার ২০০ টাকার কমে সেচ দেওয়া সম্ভব নয় বলে নলকূপের মালিকেরা দাবি করছেন।
জয়পুরহাটসদর উপজেলার জামালপুর পালপাড়া গ্রামের প্রান্তিক কৃষক তোফাজ্জল হোসেনজানান, তাঁর নিজের কোনো জমি নেই। প্রতিবছর অন্যের জমি বর্গা করে বোরোর আবাদকরেন। গত বছর সাড়ে তিন বিঘায় চাষ করে তাঁর লোকসান হয়েছে বিঘাপ্রতি তিনহাজার টাকা। এবার তেলের দাম বেশি হওয়ায় খরচ বেশি হবে। সরকার কৃষকের দিকেতাকালে তেলের দাম বাড়াত না।
কৃষক বেলাল হোসেন জানান, তেলের দাম বাড়ারসঙ্গে সঙ্গে নলকূপের মালিকেরা চার-পাঁচ শ টাকা বিঘাপ্রতি সেচের দাম বেশিনেবেন বলে এখন থেকে প্রচার শুরু করেছেন। গত বছরের মতো যদি বোরো ধান ৫০০টাকা মণ দরে বেচতে হয়, তাহলে এবার আরও বেশি লোকসান গুনতে হবে। তাঁর দাবি, সরকার যেন ধানের দাম প্রতিমণ ৯০০ টাকা নির্ধারণ করে।
জয়পুরহাট জেলা কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. দেলবর হোসেন জানান, তেলের দাম বেড়েযাওয়ায় উৎপাদনের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না। তেলের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায়কৃষকদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হলেও কোনো কৃষক জমি অনাবাদী রাখবেন না। তবেগতবারের তুলনায় এবার উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে।
নিউজরুম