ইউক্যালিপটাস গাছ রোপণে হুমকিতে পরিবেশ

0
284
Print Friendly, PDF & Email

কৃষি ডেস্ক(৬ জানুয়ারী):পরিণামের তোয়াক্কা না করে রায়গঞ্জে ব্যাপকহারে ইউক্যালিপটাস গাছ রোপণ করা হচ্ছে। এই গাছ লাগানোর সর্বনাশা উদ্যোগে বসতবাড়ি, রাস্তার দুপাশ, জমির আইল ফলের বাগান কোথাও বাদ রাখা হয়নি। দ্রুত নগদ অর্থ লাভের আশায় এলাকায় পাল্লা দিয়ে এই গাছ রোপণের হিড়িক পড়ে গেছে। ফলে এর বিষবাতাসে পরিবেশ এখন হুমকির মুখে। বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে প্রকৃতি। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বিষবৃক্ষ রোপণে বাধা দেয়ার কেউ নেই।
রায়গঞ্জে আবাদি জমির পরিমাণ প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর। এসব জমির আইল ছোট বড় ফলের প্রায় দেড় হাজার বাগানের ৬০ শতাংশ জায়গা এরই মধ্যে দখল করে নিয়েছে ইউক্যালিপটাস। থেকে বছর বয়সী ইউক্যালিপটাস গাছের সংখ্যা প্রায় কোটি এবং থেকে বছরের অধিক বয়সী ইউক্যালিপটাস গাছের সংখ্যা প্রায় কোটি বলে এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে।
ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসের উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা জানান, একটি পূর্ণবয়স্ক ইউক্যালিপটাস গাছ ২৪ ঘণ্টায় ভূগর্ভ হতে প্রায় ৯০ লিটার পানি শোষণ করে। মাটিকে নিরস শুষ্ক করে ফেলে। এলাকার ইউক্যালিপটাস গাছগুলো প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৪৫০ কোটি লিটার পানি শোষণ করছে ভূগর্ভ থেকে। সাধারণত গাছ নাইট্রোজেন গ্রহণ করে আর অক্সিজেন সরবরাহ করে পরিবেশ নির্মল প্রাণীকূলের স্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাসে সহায়তা করে। অথচ ইউক্যালিপটাস গাছ অক্সিজেন গ্রহণ করে এবং নাইট্রোজেন নির্গমন করে। ফলে গাছের শাখায় পাখি বসতে পারে না। এমনকি যে বসতবাড়িতে অধিক পরিমাণে ইউক্যালিপটাস গাছ আছে সেসব বাড়ির শিশু বৃদ্ধদের শ্বাসকষ্ট হতে পারে। যে ফলের বাগানে গাছের সংখ্যা বেশি সেখানে ফল কম ধরতে পারে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দ্রুত নিচে নেমে যাওয়ার ক্ষেত্রেও এর আগ্রাসী ভূমিকা কম নয়।
দাথিয়াদিগর গ্রামের সৌখিন আমবাগানের মালিক আমজাদ হোসেন জানান, তিনি প্রতিবেশীদের দেখাদেখি তার বাগানের চারধারে দ্রুত বর্ধনশীল এই ইউক্যালিপটাস গাছ রোপণ করেছিলেন। তার বাগানে আমের ফলন কমে যাওয়ায় তিনি ওইসব গাছ কেটে ফেলেছেন।
চান্দাইকোনা অনার্স কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ মুহা. শামসুল হক জানান, তার নারিকেল বাগানে কিছু ইউক্যালিপটাস গাছ বেড়ে ওঠার পর নারিকেল গাছের ডাবনারিকেল গুটিতেই ঝরে যাচ্ছিল। ইউক্যাপলিপটাস গাছগুলো কেটে ফেলার পর এখন স্বাভাবিকভাবেই নারিকেল টিকছে। তিনি বিষবৃক্ষ থেকে পরিবেশকে রক্ষা করতে জনমত সৃষ্টির জন্য কাজ করছেন বলে জানান।
রায়গঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসের এসএপিপিও রেজাউল করিম জানান, ইউক্যালিপটাস গাছ অস্ট্রেলিয়ায় পশুখাদ্য হিসেবে চাষ হয়। তবে সেখানে গাছ বড় হতে দেয়া হয় না কচি অবস্থায়ই গবাদি পশু দিয়ে খাওয়ানো হয়। প্রায় ২৫ বছর আগে সম্ভবত ওই দেশ থেকেই গাছের প্রজাতি আমাদের দেশে এসেছে।
যমুনা ইকোপার্কের ফরেস্টার রোকন উদ্দিন জানান, সরকারিভাবে গাছটি রোপণে একাধিকবার নিরুত্সাহিত করা সত্ত্বেও অল্পদিনে গাছ থেকে আয় আসে বলে এর রোপণ বন্ধ হচ্ছে না। এর ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চালানো দরকার। প্রয়োজনে কঠোর আইন করা যেতে পারে বলে তিনি জানান

 

নিউজরুম

 

শেয়ার করুন