৫ জানুয়ারি, ২০১৩
জাতীয় সমস্যা-সঙ্কট অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়-আশয়কে আড়ালে ঠেলে দেয়। অথচ সেসব বিষয় কোনোভাবেই উপেক্ষার নয়। বাংলাদেশ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। এই লীলাভূমি খ্যাতির নেপথ্যে রয়েছে আঞ্চলিকভাবে প্রাকৃতিক নিয়মে গড়ে ওঠা পর্যটন কেন্দ্রগুলো। জাতীয় সমস্যার ডামাডোলে এসব পর্যটনকেন্দ্র প্রায়ই উপেক্ষিত হয়ে পড়ে থাকে।
দেশের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র জাফলং প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের অন্যতম লীলাভূমি। মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে প্রকৃতিকন্যা হিসেবে খ্যাত জাফলংয়ের মনোমুগ্ধকর রূপ দেখতে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিনিয়ত ছুটে আসেন ভ্রমণপিপাসু হাজার হাজার পর্যটক। অথচ সময়ের বিবর্তনে আর মানুষের নিষ্ঠুরতায় প্রকৃতিকন্যা জাফলং হারিয়ে ফেলছে তার রূপলাবণ্য। একশ্রেণীর অসাধু পাথর ব্যবসায়ীর অত্যাচারে আজ ক্ষতবিক্ষত প্রকৃতিকন্যা জাফলং। পরিবেশ প্রতিবেশের তোয়াক্কা না করেই ব্যক্তিমালিকানাধীন এ জায়গায় পরিবেশ অধিদফতরের কাছে মৎস্যখামার করার অনুমতি নিয়ে মৎস্য ফিশারি না করে সবার চোখে ধুলা দিয়ে পাথর উত্তোলন করছে একটি চক্র।
তা ছাড়া সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপো করে জুম এলাকায় জুম কেটে মাটি সরিয়ে পাথর উত্তোলন করে জাফলংয়ের মনোমুগ্ধকর পরিবেশ নষ্ট করছে একটি কুচক্রী মহল। ফলে ডাউকি নদী গতিপথ পরিবর্তন করে পূর্ব দিকে বিস্তৃত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। তা ছাড়া নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে গোয়াইনঘাট উপজেলার সাতটি গ্রাম। সিলেট-জাফলং মহাসড়ক, জাফলং বাজার, একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি এফডব্লিউসি ও পূর্ব জাফলং ইউনিয়ন পরিষদ ভবনও সময়ের ব্যবধানে বিলীন হয়ে যেতে পারে। এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদফতরের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও প্রশাসনের প থেকে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। বাছবিচার ছাড়া পাথর উত্তোলনের ফলে নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে কয়েকটি বাগান, ফসলি জমি ও আবাসস্থল। মোটা অঙ্কের ঘুষের বিনিময়ে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে জুমপাড় এলাকা থেকেও পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। এ বিষয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসী প্রশাসনের কাছে কয়েক দফা স্মারকলিপি দিয়েও কোনো প্রতিকার পাননি। জাফলং এলাকায় নির্বিচারে বৃনিধন ও ভূমি উজাড় করে পাথর উত্তোলন বন্ধের জন্য সংসদ সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও প্রশাসন বরাবর কয়েক দফায় লিখিতভাবে অভিযোগপত্র পাঠিয়েও জনগণ কোনো সমাধান পাননি। জুম কেটে পাথর উত্তোলনের কথা অবগত রয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। অবশ্য পাথর উত্তোলন বন্ধে উপজেলা প্রশাসনের প থেকে ইতোমধ্যে নিষেধাজ্ঞাও জারি করা হয়েছে। শোনা যাচ্ছে, টাস্কফোর্স দিয়ে অভিযানও পরিচালনা করা হবে।
জনগণ মনে করেন, নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই কুচক্রী মহল কাজ করছে। অভিযান পরিচালনা সম্পর্কেও জনগণ আস্থাশীল হতে পারছেন না। আমরা মনে করি, বিষয়টি যতটা গুরুত্বের সাথে নেয়া প্রয়োজন প্রশাসন ততটা নেয়নি। আমরা আশা করি, কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কার্যকর আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি জাফলং রক্ষায় এগিয়ে আসবে।