ব্যবসা ও অর্থনীতিডেস্ক(৫ জানুয়ারী):বিশ্বজুড়ে মেধাস্বত্ব (আইপি) আবেদন দাখিলের হার ২০১১ সালে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশি আবেদনও বেড়েছে।
যদিও বাংলাদেশি উৎসের প্যাটেন্ট আবেদন দাখিলের পরিমাণ কমেছে। তবে বেড়েছে ট্রেডমার্ক ও শিল্প নকশার আবেদনের পরিমাণ।
বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছ থেকে ২০১০ সালে যেখানে ৬৯টি প্যাটেন্ট আবেদন জমা পড়েছিল (বাংলাদেশের প্যাটেন্ট ডিজাইন ও ট্রেডমার্ক অধিদপ্তরে এবং বিভিন্ন দেশের প্যাটেন্ট নিবন্ধন কার্যালয়ে), সেখানে ২০১১ সালে তা নেমে এসেছে ৩৬টিতে।
তবে একই সময়ে ট্রেডমার্কের আবেদন সাত হাজার ৮৮২টি থেকে বেড়ে হয়েছে আট হাজার ৭৮৭টি। আর শিল্প নকশার আবেদন ৮৫৪ থেকে বেড়ে হয়েছে এক হাজার ১৬৭টি।
এসব তথ্য জেনেভাভিত্তিক ওয়ার্ল্ড ইনটেলেকচুয়াল প্রোপার্টি অফিসের (ডব্লিউআইপিও)। গত ডিসেম্বর মাসে ডব্লিউআইপিও যে বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
ডব্লিউআইপিও নিবাসী (বাংলাদেশে বসবাসকারী নাগরিক) ও বিদেশি (ভিনদেশে বসবাসকারী বাংলাদেশি নাগরিক)—এই দুই ধরনের ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশি উৎস ধরে তাদের কাছ থেকে পাওয়া মেধাস্বত্ব আবেদন বিবেচনায় নিয়ে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে। আবার অনিবাসীদের (বাংলাদেশে বসবাসকারী বিদেশি নাগরিক) কাছ থেকে পাওয়া প্যাটেন্ট আবেদনও সংস্থাটি আলাদা করে উল্লেখ করেছে। প্রতিটি দেশের ক্ষেত্রেই এই সূত্র অনুসরণ করা হয়েছে।
ডব্লিউআইপিওর প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশে অনিবাসীদের (বিদেশি নাগরিক ও প্রতিষ্ঠান) বাংলাদেশের প্যাটেন্ট ডিজাইন ও ট্রেডমার্ক অধিদপ্তরে ২০১১ সালে প্যাটেন্ট আবেদন পড়েছে মোট ৩০৬টি। ট্রেডমার্কের আবেদন জমা পড়েছে ১১ হাজার ৬৪৫টি। আর শিল্প নকশার আবেদন পড়েছে এক হাজার ২৯৭টি।
বাংলাদেশের চিত্র: ডব্লিউআইপিওর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্যাটেন্ট অধিদপ্তরের ২০১১ সালে যত প্যাটেন্ট আবেদন জমা পড়েছে তার ৮৯ দশমিক ৫ শতাংশই বাংলাদেশে বসবাসকারী ভিনদেশিদের করা। আর অধিদপ্তর যত প্যাটেন্ট অনুমোদন করেছে তার ৯২ দশমিক ৯ শতাংশই ভিনদেশিরা পেয়েছেন।
ডব্লিউআইপিও বলছে, বাংলাদেশের প্যাটেন্ট অধিদপ্তর ২০১১ সালে ৮৫টি প্যাটেন্ট আবেদন অনুমোদন করেছে। এর মধ্যে দেশীয় আবেদনকারীর আবেদন ছিল মাত্র ছয়টি। ভিনদেশি নাগরিকদের ৭৯টি প্যাটেন্ট আবেদনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, বেশির ভাগ প্যাটেন্ট আবেদনই ওষুধকেন্দ্রিক। এর বাইরে বিভিন্ন ধরনের পদার্থ ও ধাতুবিদ্যাসংক্রান্ত, পরিবেশগত প্রযুক্তি, বায়োটেকনোলজি, অপটিকস, টেলিযোগাযোগসহ বিভিন্ন উদ্ভাবনের জন্য প্যাটেন্ট নিবন্ধনের আবেদন করা হয়।
ডব্লিউআইপিও বলছে, ১৯৯৭ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে যত প্যাটেন্ট আবেদন হয়েছে তার মধ্যে ওষুধ, পদার্থ ও ধাতুবিদ্যাসংক্রান্ত এবং পরিবেশগত প্রযুক্তিসংক্রান্ত আবেদন পড়েছে সাড়ে ১৭ শতাংশ করে। অপটিকস আর বায়োটেকনোলজির আবেদন পড়ে প্রায় ৯ শতাংশ করে।
প্যাটেন্ট ডিজাইন ও ট্রেডমার্ক অধিদপ্তরে অধিদপ্তরের একজন সহকারী নিবন্ধক প্রথম আলোকে বলেন, পাঁচ বছর ধরেই প্যাটেন্ট আবেদনের পরিমাণ সাড়ে তিন শয়ের মধ্যে থাকে। কিন্তু ২০১১ সালে তা কিছুটা কমে যায়। সে বছর যত আবেদন এসেছিল তার অর্ধেকই আসে ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে। যদিও ডব্লিউআইপিওর নির্দেশনা অনুযায়ী, ২০১৬ সালের ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত অধিদপ্তর ওষুধের প্যাটেন্টের নিবন্ধন দেওয়া বন্ধ রেখেছে।
অধিদপ্তরের একটি সূত্র জানায়, প্যাটেন্ট নিবন্ধনের বেশির ভাগ আবেদনই আসে বিদেশিদের কাছ থেকে। দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে প্যাটেন্ট নিবন্ধনের বিষয়ে এক ধরনের অনীহা রয়েছে।
ডব্লিউআইপিওর প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ, কলম্বিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনামের মতো দেশে বেশির ভাগ ট্রেডমার্ক আবেদন আসে দেশীয় প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছ থেকে। বাংলাদেশে এ হার সবচেয়ে বেশি। দেশটিতে প্রতি চারটি ট্রেডমার্ক আবেদনের তিনটিই করেন সে দেশের ব্যক্তিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ, ভারত, মেক্সিকো, পাকিস্তান, ফিলিপাইন ও তুরস্কের মতো মধ্যম আয়ের দেশে প্রতিবছরই শিল্প নকশার আবেদন জমা পড়ার প্রবৃদ্ধি চোখে পড়ার মতো।
বৈশ্বিক চিত্র: ডব্লিউআইপিও বলছে, ২০১০ সালের তুলনায় ২০১১ সালে মেধাস্বত্ব আবেদন দাখিল বেড়েছে ৭ দশমিক ৮০ শতাংশ।
ডব্লিউআইপিওর প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্যাটেন্ট নিবন্ধনের আবেদন পাওয়ার দিক থেকে ২০১১ সালে চীনের প্যাটেন্ট কার্যালয় বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্যাটেন্ট কার্যালয়ে পরিণত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে চীনের স্টেট ইনটেলেকচুয়াল প্রোপার্টি অফিস (এসআইপিও) ছাড়িয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্যাটেন্ট ও ট্রেডমার্ক অফিসকে (ইউএসপিটিও)। এর আগে ২০১০ সালে এসআইপিও জাপান প্যাটেন্ট অফিসকে (জেপিও) অতিক্রম করে।
ডব্লিউআইপিওর প্রতিবেদনের তথ্য
বাংলাদেশে ট্রেডমার্ক ও শিল্প নকশার আবেদন বাড়ছে
প্যাটেন্ট হলো সার্বভৌম রাষ্ট্র কর্তৃক কোনো উদ্ভাবককে তার উদ্ভাবনী পণ্য বা সেবাকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত (সাধারণত ২০ বছর) তা এককভাবে নির্মাণ, বিতরণ ও সংরক্ষণ করার অধিকার সনদ। এর ফলে অন্য কেউ ওই বস্তু বা সেবা প্রস্তুত করলে আইনত তা স্বীকৃত হবে না এবং নকল হিসেবে চিহ্নিত হবে।
ট্রেডমার্ক হলো কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের স্বাতন্ত্র্যসূচক চিহ্ন, যা ওই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পণ্য–সেবাকে
সমজাতীয় অন্যান্য পণ্য–সেবা থেকে পৃথক করে। এটি কোনো নাম বা অক্ষর বা শব্দ বা প্রতীক বা ছবি বা এসবের সমন্বয়ে হতে পারে। মার্সিডিজ বেঞ্জের লেখাসংবলিত নকশা হলো তার ট্রেডমার্ক।
শিল্প নকশা হলো বিশেষ পেশাগত সেবা, যা কোনো পণ্য বা ব্যবস্থার কাজ, মূল্য ও দৃষ্টিগোচরতা প্রস্তুতকারক ও ব্যবহারকারী উভয়ের সমসুবিধার জন্য তৈরি ও উন্নয়ন ঘটানো হয়ে থাকে। সহজভাবে বললে, হাতে বা যন্ত্রে প্রস্তুতকৃত দৃশ্যমান নকশা, যা কিনা কোনো প্রস্তুত পণ্যে ব্যবহার করা যায়। হাল আমলে আইপড বা আইফোনের নকশা হলো বিশ্বের অন্যতম সুন্দর শিল্প নকশা
নিউজরুম