কৃষি ডেস্ক(৫ জানুয়ারী): ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধিতে চলতি বোরো মওসুমে দক্ষিণাঞ্চলে প্রতি মণ ধানের উৎপাদন ব্যয় ৭০০ টাকার বেশি হবে বলে মনে করছেন কৃষিবিদেরা। ফলে এবার বরিশাল কৃষি অঞ্চলের ১১টি জেলায় ইরি–বোরো আবাদ ও উৎপাদনে বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন ওয়াকিবহাল মহল।
নতুন করে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি সমাজের সার্বিক বিষয়েই ইতিবাচক প্রভাব ফেললেও কৃষি ও কৃষকের জন্য তা ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হবে বলে মনে করছে মহলটি। ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের কৃষকেরা চরম হতাশ ও ুব্ধ। আগৈলঝাড়ার কৃষক বাবু প্রশ্ন করেন, ‘সরকার আর কী চায়? চার বছরে কৃষকের জন্য তারা কিছ্ ুকরার পারল না, ধানের ন্যায্য দামটাও দিলো না; অথচ বোরোর সময় আইলেই ডিজেলের দাম বাড়ায়।’
গত চার বছরে বিদ্যুতের দাম প্রায় আড়াই গুণ, ডিজেলের দাম দ্বিগুণ ও ইউরিয়া তিন গুণ বৃদ্ধির পর মওসুমের শুরুতেই নতুন করে ডিজেলের মূল্য আরেক দফা বাড়ানোয় বরিশাল কৃষি অঞ্চলের ১১টি জেলায় ইরি–বোরো আবাদে চরম সঙ্কটের আশঙ্কা করছেন কৃষক ও কৃষিবিদেরা। দুই বছর ধরে সারা দেশের মতো দক্ষিণাঞ্চলেও সব ধরনের ধানের মূল্য পড়তির দিকে। বিগত সেচ মওসুমে যেখানে প্রতি মণ ইরি–বোরো আবাদ ও উৎপাাদন ব্যয় ছিল ৬২৫ থেকে ৬৫০ টাকা, সেখানে কৃষকেরা উৎপাদিত ফসল বিক্রি করেছে ৬০০ টাকারও নিচে। গত বছর সেচ মওসুমে দক্ষিণাঞ্চলে হ্রাসকৃত লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করলেও এর আগের বছরের চেয়ে কিছু কম জমিতে ইরি–বোরার আবাদ হয়।
গত বছর সেচ মওসুমে আগের বছরের চেয়ে ইউরিয়ার দাম প্রায় দ্বিগুণ, ডিজেলের দাম এর আগের দুই বছরের চেয়ে প্রায় ৩৯ শতাংশ ও বিদ্যুতের দাম ২৫ শতাংশ বৃদ্ধিতে ইরি–বোরো আবাদে উৎপাদন ব্যয় ৪০–৪৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। এর সাথে বর্তমান সরকার আমলে ডিজেল ভর্তুকি বন্ধ করে দেয়ায় দক্ষিণাঞ্চলে ইরি–বোরো আবাদে সঙ্কট আরো বেড়েছে। এ অঞ্চলে ইরি–বোরো আবাদের বেশির ভাগই আগাগোড়া ডিজেলচালিত সেচযন্ত্র নির্ভর। ফলে উৎপাদন ব্যয় দেশের অন্য যেকোনো এলাকার চেয়ে সব সময়ই বেশি।
অথচ সেচযন্ত্রে ব্যবহৃত বিদ্যুতের ক্ষেত্রে সরকার ২০০৩ সাল থেকে ২৫ শতাংশ ভর্তুকি দিয়ে আসছে। অথচ ডিজেলে সেচ ব্যয় প্রায় ৩৫ শতাংশ বেশি হওয়ার পরও তাতে কোনো ভর্তুকি নেই। ২০০৫–০৬ সালে তৎকালীন সরকার সেচযন্ত্রে ডিজেল ব্যবহারে কৃষকদের সরাসরি নগদ ভর্তুকি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এরই আলোকে ২০০৭–০৮ সালে যেসব জমিতে ডিজেলচালিত যন্ত্রের সাহায্যে সেচ দেয়া হয়, তার কৃষকদের শতাংশপ্রতি ২৫০ টাকা করে নগদ ভর্তুকি দেয়া হয়েছিল। কিন্তু পরের বছর থেকেই সে ব্যবস্থা বিলুপ্ত করে বর্তমান সরকার। অথচ আমাদের দেশে এখনো ইরি–বোরো আবাদে সেচ ব্যয় মোট ফসল আবাদ ব্যয়ের প্রায় ৩২ শতাংশ।
চলতি রবি মওসুমে দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় তিন লাখ হেক্টরে ইরি–বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে; যার ৯০ শতাংশ জমিতেই সেচ দেয়া হবে ডিজেলচালিত যন্ত্রের সাহায্যে। গত বছরও বরিশাল কৃষি অঞ্চলের ১১টি জেলায় ইরি–বোরোসহ অন্যান্য ফসলের জন্য ব্যবহৃত এক লাখ ৫৯০টি সেচ যন্ত্রের মধ্যে প্রায় ৯০ হাজারই ছিল ডিজেলচালিত। অথচ এর আগের বছরের ৪৪ টাকা লিটারের ডিজেল গত বছর ডিসেম্বরের শুরুতে ৬১ টাকায় বৃদ্ধি করে সরকার। এবারো সেচ মওসুম শুরুর প্রাক্কালে ৬১ টাকার ডিজেল ৬৮ টাকায় বৃদ্ধি করা হলো। অন্য দিকে এক–এগারোর পরের তত্ত্বাবধায়ক সরকার সাত টাকা কেজির ইউরিয়া ১১ টাকায় বৃদ্ধি করার পর বর্তমান সরকার তা ২১ টাকায় বৃদ্ধি করেছে। ফলে গত তিন বছরে উৎপাদন ব্যয় প্রায় আড়াই গুণ বৃদ্ধি পেলেও ধানের মূল্য বাড়েনি। বরং অনেকটাই কমেছে বলে অভিযোগ কৃষকদের। গত বছর সেচ মওসুমেই এর আগের বছরের চেয়ে বোরো ধান উৎপাদন ব্যয় বেড়েছিল প্রায় ৪৫ শতাংশ।
বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে নতুন করে ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধিতে এ ব্যয় আরো ১০–১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছেন কৃষিবিদেরা।
নিউজরুম