স্পোর্টস ডেস্ক(৫ জানুয়ারী):এই কদিন আগেই অনেক দিনের পরিচিত এক সাংবাদিককে হাবিবুল বাশার প্রশ্ন করেছিলেন, ‘আশরাফুলের কী হলো, বলেন তো!’ যতটা না প্রশ্ন, তার চেয়ে বেশি বিস্ময় মিশে ছিল কথাটায়। তার চেয়েও বেশি বোধ হয় আক্ষেপ। মোহাম্মদ আশরাফুল কী করতে পারেন, তা হাবিবুল বাশারের চেয়ে ভালো আর কে জানেন! ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই দেখে আসছেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আশরাফুলের বেশির ভাগ বিখ্যাত ইনিংসও হাবিবুলের অধিনায়কত্বের সময়েই। হাবিবুলের আক্ষেপটা ছিল সেই আশরাফুল কোথায় হারালেন ভেবেই!
হাবিবুল বাশার সেই আশরাফুলকে আবার আশরাফুলের রূপে ফিরতে দেখলেন মাঠে বসেই। নির্বাচকের ভূমিকায় বগুড়ায় শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে সেঞ্চুরি করতে দেখলেন আশরাফুলকে। এমনিতে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে একটা সেঞ্চুরি এত ঘটা করে বলার মতো কিছু নয়। শুধু তো আশরাফুল নন, বগুড়ায় কাল বিসিবি উত্তরাঞ্চলের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছেন ওয়ালটন মধ্যাঞ্চলেরই আরেক ব্যাটসম্যান মেহরাব হোসেন জুনিয়রও। তার পরও আশরাফুলের সেঞ্চুরিটা এত আলোচিত মাঝখানে তিনি ব্যাটিং ‘ভুলে’ গিয়েছিলেন বলে! প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে সর্বশেষ ২০ ইনিংসে কোনো সেঞ্চুরি নেই, সর্বশেষ হাফ সেঞ্চুরিও ১১ ইনিংস আগে। কালকের সেঞ্চুরির আগে এই মৌসুমে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে ১১ ইনিংসে মোট রান ছিল ১২৯, গড় মাত্র ১১.৭২। সর্বোচ্চ ২২।
রানসংখ্যাতেই দুর্দশাটা পরিষ্কার। ব্যাটিং দেখেও আশরাফুলকে চেনার কোনো উপায় ছিল না। কালকের ১৯০ বলে ১৩৩ রানের ইনিংসটি দেখার পর হাবিবুল বাশার আশরাফুলকে গিয়ে বলেছেন, ‘আজ এমন কিছু শট খেলেছিস, যেগুলো তুই চার–পাঁচ বছর আগে খেলতি।’ নির্বাচক বলে মুগ্ধতার প্রকাশে একটু রাশ টেনে ধরতে হয়। তুলে রাখতে হয় নিরপেক্ষতার ঝান্ডাও। আশরাফুলের ইনিংসটি নিয়ে কথা বলার আগে হাবিবুল তাই ‘মেহরাবও ভালো ব্যাটিং করেছে’ বলে নিলেন। এই মৌসুমে আশরাফুলকে ফর্মে ফিরতে দেখার তৃপ্তিটা অবশ্য গোপন থাকল না, ‘অনেক দিন পর আশরাফুলকে আশরাফুলের মতো ব্যাটিং করতে দেখলাম। পুরোনো আশরাফুল বলব না, কথাটা আমার ঠিক মনে হয় না, সবার খেলাই সময়ের সঙ্গে বদলায়। তবে আজ ও এমন কিছু শট খেলেছে, যা চোখে লেগে থাকার মতো।’
৯৪ বলে ফিফটিতে পৌঁছানোর পর দ্বিতীয় ফিফটি মাত্র ৬৩ বলে। সেঞ্চুরিতে চার ছিল ১৭টি, সেঞ্চুরির পর মেরেছেন আর ৬টি। শট খেলায় আশরাফুলের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারেননি। তবে রানসংখ্যায় মাত্র ২ রান পেছনে থাকলেন মেহরাব জুনিয়র। আশরাফুলের মতো সেঞ্চুরির জন্য হাহাকারও ছিল না তাঁর। এ মৌসুমে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে মেহরাবের এটি তৃতীয় সেঞ্চুরি, যেটি এসেছে ২৬৩ বলে। সেঞ্চুরির পরও সেভাবে হাত খুলে মারেননি। ৩৪৫ বলে ১৩১ রানের ইনিংসে চার ১৫টি, যার মাত্র দুটি সেঞ্চুরি হয়ে যাওয়ার পর।
আশরাফুল ও মেহরাবের সেঞ্চুরি নিয়েই এত কথা বলে ফেলার কারণ, এই ম্যাচে আসলে রোমাঞ্চ বলতে কিছু নেই। তিন দিনে দুই দলের প্রথম ইনিংসই শেষ হয়নি। পঞ্চম উইকেটে দুই সেঞ্চুরিয়ানের ২২৮ রানের জুটিতে (আশরাফুলের অবদান ১৩১, মেহরাবের ৯১) মধ্যাঞ্চল ৮ উইকেটে ৪৩৪। লিড ৭৩ রানের। মহানাটকীয় কিছু না ঘটলে ম্যাচের ললাটে ড্র কথাটা রীতিমতো জ্বলজ্বল করছে।
সং ক্ষি প্ত স্কো র
প্রাইম ব্যাংক দক্ষিণাঞ্চল–ইসলামী ব্যাংক পূর্বাঞ্চল, মিরপুর
প্রাইম ব্যাংক দক্ষিণাঞ্চল: ২৪৮ ও ৯১ ওভারে ২৪৮ (ইমরুল ১২, সৌম্য ৪৮, এনামুল ৭৩, তাপস ঘোষ ৪, মিঠুন ২০, তুষার ৩৮, জিয়াউর ২৩, সোহাগ ৯, রাজ্জাক ২, কামরুল ৫*, রবিউল ৭; তাপস বৈশ্য ৩/২৫, জায়েদ ০/২১, ইয়াসিন ০/৪২, নাবিল ৬/৮১, অলক ০/২৩, ফয়সাল ১/৫৪)। ইসলামী ব্যাংক পূর্বাঞ্চল: ২৩২ ও ৪২ ওভারে ১৩৮/২ (শাহরিয়ার ২৩, নাফিস ৬৩, রাজিন ৩৬*, মমিনুল ৫*; রবিউল ১/৪০, সোহাগ ১/৪৫, রাজ্জাক ০/২৭, তাপস ঘোষ ০/১৮, কামরুল ০/০)।
বিসিবি উত্তরাঞ্চল–ওয়াল্টন মধ্যাঞ্চল, বগুড়া
বিসিবি উত্তরাঞ্চল ১ম ইনিংস: ৩৬১।
ওয়ালটন মধ্যাঞ্চল ১ম ইনিংস: ১৫৬ ওভারে ৪৩৪/৮ (শুভাগত ৫, শামসুর ১৫, রকিবুল ২৬, মার্শাল ৪০, আশরাফুল ১৩৩, মেহরাব ১৩১, মোশাররফ ৩৮, নুরুল ৭, সানি ১৫*, শরীফ ১৬*; শফিউল ১/৪৪, ফরহাদ রেজা ০/৬২, সাজেদুল ৩/১০১, সাকলাইন ২/৯৮, সোহরাওয়ার্দী ০/৫০, নাসির ০/২৭, নাঈম ১/২২, মুশফিক ১/২৩)।
নিউজরুম