ঢাকা ( ৪ জানুয়ারী) : রোববার ১৮ দলের হরতালে জোটের ব্যানার কাজে লাগিয়ে সহিংসতার প্রস্তুতি নিচ্ছে জামায়াত- শিবির ক্যাডাররা। বিএনপির ঘারে ভর দিয়ে নিজেদের দাবি আদায়ের সুযোগ তৈরির ষড়যন্ত্র করছে দলটি। সূত্র জানিয়েছে, এবারের হরতালে সহিংস কর্মকাণ্ডে দলের প্রশিক্ষিত বাহিনীকে মাঠে নামানোর সব প্রস্তুতিও সম্পন্ন করেছে শিবির।
সূত্রটি জানায়, যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আটক জামায়াত নেতাদের পুনরায় বিচারের আবেদন ট্রাইব্যুনাল খারিজ করে দেওয়ায় ক্রুদ্ধ শিবির ক্যাডাররা প্রতিশোধ নিতে সহিংস পথই বেছে নিচ্ছে। আর জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদের আড়ালে জামাত-শিবির যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধের দাবিকেই সামনে নিয়ে আসবে এই হরতালেও।
অতীতেও দেখা গেছে, যে দাবিতেই বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট হরতাল দিক না কেনো জামাত-শিবিরের হাতে থাকে যুদ্ধাপরাধের বিচার বানচালের স্লোগান দেওয়া ব্যানার ফেস্টুন।
গত ২৬ ডিসেম্বরের পথসভার কর্মসূচি এবং তারও আগে ৯ ডিসেম্বরের অবরোধ কর্মসূচিতে শিবিরকেই দেখা গেছে সবচেয়ে সক্রিয়। পথসভার কর্মসূচিতে শিবির প্রকাশ্যে ‘রক্ত খাওয়া’র হুমকি দিয়ে স্লোগান দিয়েছে যা অনেকেরই কানে বেজেছে।
খালেদা জিয়ার জনসভাগুলোতেও দেখা যায় বিএনপিসহ অন্য শরিকদলগুলোর ভূমিকা ক্ষীণ। সবচেয়ে জঙ্গিরূপ দেখা যায় জামায়াতে ইসলামির শক্তির প্রধান উৎস শিবিরের উপস্থিতি ও আচরণে।তবে অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে এবারের হরতালে শিবিরের সবচেয়ে সহিংস রূপ দেখা যাবে বলেই ধারনা দিচ্ছে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো।
বিশেষ করে ঢাকা মহানগরীর কমিটির গুলোর সভাপতি সেক্রেটারি জেনারেলদের কৌশলে গোয়েন্দা পুলিশ আটক করে নেওয়ার পর এই সহিংসতার পথকেই শিবির তার একমাত্র কৌশল হিসেবে দেখছে।
শিবিরের এক নেতা জানান, যদিও জামায়াতসহ ১৮ দলকে নিয়ে বিএনপি হরতাল ডেকেছে, তবু জামায়াত তাদের নিজস্ব অঘোষিত ইস্যুতেই এই কর্মসূচি পালন করবে। হরতাল পালন করবে তারা একদমই নিজেদের মতো করে।
তিনি জানান, এবারের হরতালে সহিংসতার জন্য শিবিরের বিশেষ ক্যাডার বাহিনীকে নামানো হবে। এই বাহিনীর ‘আলাদা প্রশিক্ষণ’ রয়েছে। এ ক্যাডাররা শুধু সহিংসতার জন্যই বেতন পায়।
তিনি বলেন, এই বাহিনীকে কোনো অনুষ্ঠান বা নিরীহ কর্মসূচিতে মাঠে নামানো হয় না। তাদের মূল কাজ পুলিশের ওপর হামলা এবং গাড়ি ভাংচুর।
হরতালের সুযোগ কতোটা ভালোভাবে কাজে লাগানো যায়, সে ব্যাপারে বৃহস্পতিবার রাত থেকেই নেতাকর্মীদের মধ্যে শলা-পরামর্শ চলছে বলে এই নেতা জানান।
ভিন্ন সূত্র জানায়, জামায়াতের আন্দোলনের মূল ইস্যু তাদের নেতাদের মুক্তি। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আটকদের পূনর্বিচারের আবেদন খারিজ হওয়ায় কঠোর ও সহিংস আন্দোলনে নামার সুযোগ খুঁজছিলো দলটি। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা মিছিল করে, ভাংচুর করে, আগুন জ্বালিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে আসছে গত তিন দিন ধরেই। তবে পুলিশের সতর্কতায় ও একক কর্মসূচিতে তেমন সুবিধা করতে পারছিল না জামায়াত-শিবির।
আর এ কারণেই হরতাল কর্মসূচিকে বড় সুযোগ হিসেবে কাজে লাগাতে চায় তারা।
শিবিরের অপর নেতা এক জানান, রোববারের হরতালে জামায়াত যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রলম্বিত করতে আরো ইস্যু তৈরির চেষ্টা করবে। এদিন সহিংস কর্মকান্ড যাই হবে, তার দোষ স্বাভাবিকভাবেই বিএনপিসহ ১৮ দলের ওপর বর্তাবে। তাই কিছুটা চাপমুক্ত থাকবে জামায়াত।
সূত্রমতে, দলের বেশিরভাগ কেন্দ্রীয় নেতারা জেলে। জামায়াতের নেতৃত্ব দেয়ার মতো নেতা এখন উল্লেখযোগ্য কেউ নেই। সর্বশেষ আবদুল্লাহ মো. তাহের আটক হয়েছেন, হামিদুর রহমান আযাদও পলাতক। এ অবস্থায় শিবির মনে করছে সহিংস পথ ছাড়া অন্য কোনো পথ তাদের সামনে নেই। শিবিরের ওই নেতা বলেন, “প্রতিশোধের এই সুযোগ ষোলোআনা কাজে লাগানো হবে।”
এদিকে অপর একটি সূত্র জানায়, এবার হরতালে বাধা দিলে বা নেতাদের আটক করলে আন্দোলনের নতুন ইস্যু পেয়ে যাবে ১৮ দলীয় জোট। ফলে জামায়াত নেতাদের বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হবে। এটাই তাদের প্রত্যাশা। রোববারের হরতালে ১৮ দলের ব্যানারে নিজেদের উপস্থিতি জানান দেবে শিবির ক্যাডাররা। সরকারকে আবারো মনে করিয়ে দেবে ‘জামায়াতের মূল দাবি দলের নেতাদের মুক্তি।’