৪ জানুয়ারি, ২০১৩
রাজধানীর সৌন্দর্য বাড়ানো আর যানজট নিরসনে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে হাতিরঝিল প্রকল্প বাস্তবায়ন চলছে। তৈরী করা হয়েছে বৃত্তাকার মসৃণ সড়ক, সুন্দর ফুটপাথ ও দৃষ্টিনন্দন কয়েকটি সেতু। রাস্তার দুই পাশে লাগানো হয়েছে সবুজ ঘাস ও হরেক রকম ফুলগাছ। ইটপাথরের রাজধানীতে এই প্রকল্প সাধারণ মানুষের কাছে ছিল আগ্রহের বিষয়। কারণ ঝিলের স্বচ্ছ পানির জন্য বিনোদন স্থানে পরিণত করেছে এই প্রকল্প এলাকা। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে যাদের জন্য এই আয়োজন, সেই সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত নয় এই প্রকল্প এলাকা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহাসমারোহে এই প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন। নগরবাসীর জন্য এটি তার সরকারের উপহার বলে উল্লেখ করেছেন। এই প্রকল্প বাস্তবায়নকাজ করেছে আমাদের সেনাবাহিনী। প্রধানমন্ত্রী তাদের প্রশংসা করেছেন। নিশ্চয়ই বিদেশী সহায়তা ও কনসালট্যান্ট ছাড়া এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারায় সেনাবাহিনী অভিনন্দন পাওয়ার যোগ্য। তবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম পদ্মা সেতু নির্মাণে সেনাবাহিনীকে নকশা প্রণয়ন করতে বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী নাকি এ নির্দেশ দিয়েছেন। হাতিরঝিলের মতো একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন আর পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন এক বিষয় নয়। ব্যয়, আকার ও কর্মযজ্ঞের পরিধির মধ্যে আকাশ-পাতাল ব্যবধান। সেনাবাহিনীকে নিয়ে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী এমন বক্তব্য না দিলে ভালো করতেন। কারণ পদ্মা সেতু নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক হয়েছে। নিজেদের অর্থে পদ্মা সেতু করার ঘোষণাও দেয়া হয়েছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হয়েছে। এখন সেনাবাহিনীকে দিয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হবে, এমন বালখিল্য বক্তব্য নতুন করে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবে।
হাতিরঝিল প্রকল্পের উদ্বোধন নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বলা হয়েছে, এই প্রকল্পের কাজ এখনো শেষ হয়নি। পুরো কাজ শেষ হতে আরো কত দিন লাগবে, তা নিয়ে এখনো সুস্পষ্ট কিছু বলতে পারেনি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পরও জনগণের চলাচলে রাস্তাগুলো খুলে দেয়া হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর এ কেমন উপহার। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে এই প্রকল্প উদ্বোধন করার এমন কী বাধ্যবাধকতা ছিল? এখন অনেক মানুষ প্রকল্প এলাকায় যাচ্ছেন, কিন্তু রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে পারছেন না। ফলে বিরক্ত হয়ে ফিরে আসছেন। আমরা লক্ষ করছি, সরকারের শেষ সময়ে জনসম্পৃক্ত উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর ফিতা কাটার জন্য মন্ত্রীরা ব্যস্ত হয়ে ওঠেন। আমরা আশা করব, শুধু প্রকল্প উদ্বোধন নয়, কাজ দ্রুত শেষ করে জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে।