কৃষি ডেস্ক(৪ জানুয়ারী): দেশে সরকারি ভাণ্ডারে চাল–গমের মজুদ কমছে। মাত্র এক বছরের মাথায় মজুদের পরিমাণ কমেছে এক লাখ ৮৩ হাজার টন।
এ দিকে আউশ–আমন চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন কৃষক। এ ছাড়া এ বছর বোরো ধান আবাদের মওসুমে প্রায় ৩০ হাজার সেচ গ্রাহক কৃষক নতুন করে বিদ্যুৎ সংযোগ পাবেন না। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্য অনুযায়ী ২০১১ সালে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকারের গুদামগুলোতে চাল–গমের মজুদ ছিল ১৪ লাখ ৯৮ হাজার টন। এরমধ্যে চাল ছিল ১১ লাখ ৬৫ হাজার ও গম তিন লাখ ৩৩ হাজার টন। অন্য দিকে ২০১২ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত মজুদের পরিমাণ ১৩ লাখ ১৫ হাজার টন। এরমধ্যে চাল ১০ লাখ ৯০ হাজার টন ও গম দুই লাখ ২৫ হাজার টন। ধান–চালের বাজারের নিয়ন্ত্রণ মধ্যস্বত্বভোগীদের হাতে চলে যাওয়ায় সরকারি গুদামে মজুদ কমছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
তারা জানান, প্রতি বছর সরকার সরাসরি ধান–চাল সংগ্রহের ঘোষণা দিলেও প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষক নানা সমস্যায় সরকারি ক্রয় কেন্দ্রে পৌঁছতে পারেন না। মধ্যস্বত্বভোগীদের তৎপরতা থাকে চোখে পড়ার মতো। কৃষকের কাছ থেকে কিছু কেনা হলেও ল্যমাত্রার প্রায় ৯৯ ভাগই কেনা হয় মিলারদের কাছ থেকে। মধ্যস্বত্বভোগী এসব ফড়িয়া ও মিল মালিকেরা কৃষকের কাছ থেকে কম দামে ধান কিনে নিজস্ব মিলে চাল করে তা সরকারের কাছে বেশি দামে বিক্রি করছেন। ফলে সরকারের দেয়া প্রণোদনার পুরোটাই যাচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীদের পকেটে। এর ফলে কৃষকের কোনো উন্নয়ন হচ্ছে না।
চলতি আমন সংগ্রহ মওসুমেও একই চিত্র। চলতি মওসুমে ১ জানুয়ারি পর্যন্ত সরকারি ক্রয় কেন্দ্রে ছয় হাজার ৭৩২ টন ধান–চাল সংগ্রহ হয়েছে। গত ৯ ডিসেম্বর থেকে আমন সংগ্রহ মওসুম শুরু হয়েছে।
ওদিকে কৃষকেরা আউশ–আমন চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। তারা জানান, আউশ ও আমন মওসুমে উচ্চ ফলনশীল ও বন্যাসহিষ্ণু ধানের জাতের অভাবের পাশাপাশি ধানের ভালো দাম না পাওয়ার কারণে আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষক। এভাবে ফি–বছর আউশ ও আমনের আবাদি জমির এলাকা কমে যাচ্ছে। আউশ–আমনের বদলে কৃষক ঝুঁকছেন তামাকসহ অন্যান্য লাভজনক ফসল চাষের দিকে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমানে বাজারে ধান–চাল ও পাটসহ কৃষিপণ্যের দাম উৎপাদন খরচের চেয়ে কম থাকায় কৃষিতে কৃষকদের অনীহা ক্রমেই বাড়ছে। এ নিয়ে কৃষকদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। এ পরিস্থিতির উত্তরণ না ঘটলে আগামীতে দেশের প্রধান প্রধান ফসলসহ কৃষিপণ্যের উৎপাদন অনেকাংশেই কমে যাবে। ইতোমধ্যে কৃষিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এসব কারণে বোরো মওসুমে কৃষকেরা বোরোর বীজ কেনার আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। সারা দেশে বোরোর আগাম বীজ বিক্রি গত বছরের তুলনায় অনেকাংশেই কমে গেছে বলে জানিয়েছেন তারা। এর ফলে আগামীতে বোরোর উৎপাদন কমে যেতে পারে।
ওদিকে এ বছর বোরো ধান আবাদের মওসুমে প্রায় ৩০ হাজার সেচগ্রাহক কৃষক নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ পাচ্ছেন না। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, চাহিদার তুলনায় বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে। এ ছাড়া বেশির ভাগ বিতরণ উপকেন্দ্র ও লাইন পুরনো এবং মতার চেয়ে বেশি বিতরণের ভারে নাজুক। এ বছর প্রায় ৪৮ লাখ একর জমিতে বোরো চাষ হবে। সেচযন্ত্র ব্যবহৃত হবে প্রায় ১৫ লাখ। এর মধ্যে আড়াই লাখের মতো বিদ্যুতচালিত।
সেচ প্রসঙ্গে পিডিবির একজন কর্মকর্তা জানান, রাত ১১টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত সেচের জন্য দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বরাদ্দ করা সম্ভব। কিন্তু বিতরণব্যবস্থার কারণে তা গ্রাহকপর্যায়ে সুষ্ঠুভাবে সরবরাহ করা সম্ভব হবে না। এর ফলে সেচগ্রাহকদের নতুন সংযোগ দিলেও কোনো লাভ হবে না। সেচের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া, সেচ মওসুমে বিদ্যুতের সম্ভাব্য উৎপাদন ও সরবরাহ, বোরো ক্ষেতে পানির ব্যবহার সম্পর্কিত এক নির্দেশনায় মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বরেন্দ্র ও কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের সেচযন্ত্রচালিত এলাকায় বিতরণব্যবস্থার ধারণমতা থাকলে সংযোগ দেয়া যেতে পারে।
অন্য দিকে শিগগির প্রায় চার মাসের জন্য সেচ মওসুমে বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থাপনা করা হবে গত বছরের মতোই। রাত ৮টায় খাদ্য ও ওষুধ ছাড়া সব দোকানপাট ও বিপণিবিতান বন্ধ রাখতে হবে। সন্ধ্যাকালীন সর্বোচ্চ চাহিদার সময় (সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত) শিল্প কারখানা জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারবে না। পানির পাম্পসহ ভারী বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারও এ সময় বন্ধ রাখতে হবে।
সপ্তাহের একেক দিন একেক এলাকার দোকানপাট ও শিল্প কারখানায় ছুটি অব্যাহত থাকবে। সেচযন্ত্র চালানো যাবে রাত ১১টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত। তবে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী এ সময় কোনো ফিডারে বিশেষ কারণে কোনো দিন বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকলে পরদিন দিনের বেলায় সেই নির্দিষ্ট ফিডারের গ্রাহকেরা সেচযন্ত্র চালাতে পারবেন।
নিউজরুম