ময়মনসিংহ (৪ জানুয়ারী) : দিনবদলের পানসিতে চড়ে ক্ষমতায় আসার ৪ বছরের মাথায় বৃহস্পতিবার প্রথমবারের মতো ইতিহাস, ঐতিহ্যের প্রাচীন জনপদ এবং শিক্ষা ও সংস্কৃতির নগরী ময়মনসিংহে এসে এ অঞ্চলের মানুষকে রীতিমতো হতাশ করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বিভাগ বাস্তবায়নের দাবিটি এবারও এড়িয়ে গেলেন তিনি। প্রতিশ্রুতি দিয়ে বললেন, আগামীবার ক্ষমতায় গেলে ময়মনসিংহ পৌরসভাকে সিটি কর্পোরেশন করা হবে। তারাকান্দা থানাকে দ্রুত সময়ের মধ্যে করা হবে পূর্ণাঙ্গ উপজেলা।
প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে প্রাপ্তির খেরোখাতা শূন্য হওয়ায় এক বুক হতাশা নিয়ে জনসভা মাঠ ছাড়ে এলাকাবাসী।
তবে, এ ঘটনার মধ্যে দিয়ে ময়মনসিংহকে বিভাগ করার বদলে সিটি কর্পোরেশন ঘোষণার দাবিদার নেতারাও ফাটা বেলুনের মতো চুপসে গেছেন।
‘নো ডিভিশন নো ভোট’ প্রধানমন্ত্রীর ময়মনসিংহ জনসভাকে সামনে রেখে পাবলিক সেন্টিমেন্ট ছিল এমন। অসংখ্য ব্যানার-পোস্টারে এ দাবি জোরালোভাবে উচ্চারিত হয়েছে। ময়মনসিংহ জেলা নাগরিক আন্দোলন প্রায় ৩ দশক ধরে এ দাবিতে ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন করে যাচ্ছে।
সাধারণের প্রত্যাশা ছিল, নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে। ময়মনসিংহের মানুষকে খুশি করতেই হয়তো প্রধানমন্ত্রী বিভাগ উপহার দিয়ে যাবেন। এক্ষেত্রে বিভাগ প্রত্যাশী ময়মনসিংহের আম-জনতার যুক্তি ছিল, নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বৃহত্তর ময়মনসিংহের ৩৯টি আসনই শেখ হাসিনাকে উপহার দিয়েছিল মযমনসিংহের ৬ জেলার মানুষ। পাওনা ছিল ফিরতি উপহার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও প্রায় আধা ঘণ্টার নাতিদীর্ঘ বক্তব্যে সেই উপহারের জন্য কৃতজ্ঞ ও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেছে ময়মনসিংহের মানুষকে। ওই সময়েও ময়মনসিংহবাসী তথা জনসভাস্থলে উপস্থিত জনতার রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা ছিল, প্রধানমন্ত্রী হয়তো বিভাগ ঘোষণা করবেন।
মনের মধ্যে পুষে থাকা অনেকদিনের লালায়িত স্বপ্ন পূরণ করবেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী যখন নিজের মুখেই বললেন, উন্নয়নের জন্য দাবি লাগবে না। আগামীতে ক্ষমতায় গেলে ময়মনসিংহকে সিটি কর্পোরেশন করা হবে।
ঠিক সেই সময়ে জনসভাস্থলেই হতাশার সুর ভেসে ওঠে অনেকের কণ্ঠে।
এর মধ্যে বেশ কয়েকজন তৃণমূল আওয়ামী লীগ নেতা নিজেদের পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বলেন, “ময়মনসিংহ অঞ্চল আওয়ামী লীগের দুর্ভেদ্য ঘাটি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী ময়মনসিংহবাসীকে কিছুই দিয়ে যাননি। এ বিষয়টি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ অঞ্চলে বড় ধরনের ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াবে।”
বিশ্লেষকদের মতে, ২০১১ সালের ২৭ অক্টোবর বিএনপি চেয়ারপার্সন ও বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়া এ ঐতিহাসিক সার্কিট হাউজ মাঠেই ময়মনসিংহের উন্নয়নে একগুচ্ছ প্রতিশ্রুতি দেন। এর অগ্রভাগে ছিল ময়মনসিংহ বিভাগ দাবিটির বাস্তবায়ন।
এখন সামনের নির্বাচনে যদি বিএনপি এ সুযোগটি কাজে লাগায় এবং তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে ময়মনসিংহ বিভাগ দাবিটি যোগ করে, তবে এ ইস্যুটি হবে দলটির জন্য সাপেবর। এতে আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংকে চিড় ধরবে। ক্ষমতাসীনদের ভুলের খেসারত হিসেবে ভোটের ফসল উঠতে পারে বিএনপি’র ঘরে।
ময়মনসিংহ বিভাগ দাবিটি এড়িয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে ময়মনসিংহ জেলা নাগরিক আন্দোলনের সভাপতি অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান খান বলেন, “ময়মনসিংহবাসীর প্রত্যাশা ছিল প্রধানমন্ত্রী ময়মনসিংহের জনসভা থেকে বিভাগ দিয়ে যাবেন। তিনি অতীতে নিজেও এর গুরুত্ব স্বীকার করেছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী ময়মনসিংহ বিভাগের ঘোষণা না দিয়ে আমাদের মর্মাহত করেছেন।’
নিউজরুম