বিনোদন ডেস্ক(৪ জানুয়ারী):
সুধী–দর্শকের দৃষ্টি কেড়েছে
ধুঁকতে ধুঁকতে আমাদের চলচ্চিত্রের পিঠ যখন দেয়ালে, ঘুরে দাঁড়ানোর আভাস এলো তখনই। নতুন করেই যেন শুরু হচ্ছে দেশের চলচ্চিত্রের পথচলা। ২০১২ সালটা তাই মন্দের ভালো এই অঙ্গনের জন্য। লিখেছেন সোহেল অটলশাকিব খান দেশীয় চলচ্চিত্রের একমাত্র নায়কÑ ক’দিন আগেও এটাই ছিল চলচ্চিত্রের সর্বোচ্চ সত্য। দিন যেন বদলে গেছে কিছুটা। শাকিবই এখন ওয়ান অ্যান্ড অনলি নন। বেশ কিছু নতুন অভিনেতার আত্মপ্রকাশ, তাদের সাফল্য এবং নির্মাতাদের শাকিববিরোধী কৌশলের কারণে ঢাকাই ছবির কিং খান এখন কুপোকাত। তবে খাদের কিনার থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর সব ধরনের কৌশল, অপকৌশল শাকিবের জানা আছে। বছরের শেষ দিকে পূর্বশত্রু জাজ মাল্টিমিডিয়ার সাথে হাত মেলানোটা তেমনই আভাস দিচ্ছে। এতে অবশ্য তার শেষ রক্ষা হবে কি না, সময়ই তা বলে দেবে।
২০১২ সালে মুক্তি পেয়েছে ৫০টি ছবি। এর আগে ২০১১ সালে ৪৮টি, ২০১০ সালে ৫৭টি, ২০০৯ সালে ৬৩টি ও ২০০৮ সালে ৬৭টি ছবি মুক্তি পেয়েছিল। ২০০৮ থেকে ২০১১ পর্যন্ত ছবি মুক্তির সংখ্যা কমেছে। কেবল ২০১২ সালে বেড়েছে। আশা করা হচ্ছে, ২০১৩ সালে এই সংখ্যা আরো বাড়বে। বর্তমানে মুক্তির অপোয় এবং নির্মাণের শেষ পর্যায়ে থাকা ছবির সংখ্যা শতাধিক। বছরের শেষ দিকে দেশীয় চলচ্চিত্রে যুক্ত হয়েছে নতুন প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তির সূচনা হয়েছে শাহীন সুমনের ভালোবাসার রঙ ছবির মধ্য দিয়ে। ছবিটির সফলতা দেখে অন্যান্য পরিচালকও এখন ডিজিটাল ছবি নির্মাণের দিকে ঝুঁকেছেন। যার ফলে ২০১৩ সালে বিগত কয়েক বছরের চেয়ে বেশি ছবি মুক্তির সম্ভাবনা ল করা যাচ্ছে। বর্তমানে এই প্রযুক্তির সুবিধা নিয়ে প্রায় শতাধিক ছবি নির্মাণাধীন। ডিজিটাল ফরমেটে ছবি নির্মাণ ও মুক্তি দেয়ার ব্যাপারে নির্মাতাদের আগ্রহের কারণে নতুন ছবির নির্মাণসংখ্যা বাড়বে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ছবি মুক্তির সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। এ ছাড়া বছরের শেষ দিকে মুক্তি পাওয়া রেদোয়ান রনির চোরাবালি দর্শকের কাছে প্রশংসিত হয়ে ইন্ডাস্ট্রির ঘুরে দাঁড়ানোর আভাসই দিচ্ছে।
গত বছর বেশ কিছু ছবির নির্মাণ শেষ হয়েছে। আরো কিছু ছবির কাজ চলছে। এর সংখ্যা এক শ’র বেশি বৈ কম নয়। ছবিগুলো হচ্ছেÑ দেবদাস, সৌভাগ্য, এ দেশ তোমার আমার, জোর করে ভালোবাসা হয় না, জজ ব্যারিস্টার, পুলিশ কমিশনার, দুই পৃথিবী, অপমানের জ্বালা, এই তো প্রেম, পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেমের কাহিনী, স্বপ্নের বিদেশ, বিচার আমি করবো, মাই নেম ইজ খান, মনের ঠিকানা, জান তুমি প্রাণ তুমি, লোভে পাপ পাপে মৃত্যু, নিঃস্বার্থ ভালোবাসা, দেহরী, ইভটিজিং, এক কাপ চা, জলরঙ, আদরের ভাই, এক জবানের জমিদার হেরে গেলেন এইবার, জান, অবুঝ ভালোবাসা, পুত্র এখন পয়সাওয়ালা, এমনও তো প্রেম হয়, এই তো ভালোবাসা, দুখু মিয়া, লীলামন্থন, এলিয়েন এখন ঢাকায়, পৌষ মাসের পিরিতি, শর্টকাটে বড় লোক, শিরি–ফরহাদ, কাছের শত্রু, নষ্ট ছেলে, বউপাগল, ছলনাময়ী নারী, কেন আমি সন্ত্রাসী, টু বি কন্টিনিউড, কালো বিড়াল, তুষের আগুন,পাগলের বিয়ে, লড়াকু সন্তান, ট্রাম কার্ড, কাঁকন দাসী, মন যারে চায়, কাটা দাগ, মিশন সিআইডি, সাহসী কন্যা, নমুনা, পাগল তোর জন্য রে, কমিশনার, জনতার ডাক, মাটির পিঞ্জিরা, কষ্ট আমার দুনিয়া, আদম, নীলাঞ্জনা, তোমার মাঝে আমি, সুন্দরী গুলবাহার, শোয়াচান পাখি, অনিশ্চিত যাত্রা, হ্যালো অমিত, সূচনা রেখার দিকে, রূপগাওয়াল, সবুজ কেন অপরাধী, ছোট্ট একটা ভালোবাসা, মুক্তি, ছায়া–ছবি, ভালোবাসার রঙধনু, পারলে ঠেকা, এ কেমন প্রেমের গল্প, অল্প স্বল্প প্রেমের গল্প, জটিল প্রেম, ােভ, পদ্মপাতার জল, শিখণ্ডী কথা, জোনাকির আলো, আয়না কাহিনী, কিস্তির জ্বালা, না মানুষ, প্রেম মানেই পাগলামি, হেডমাস্টার, পোড়া মন, জোর করে ভালোবাসা যায় না, মায়ের মতো বোন, ১০১ দিনের চ্যালেঞ্জ, রক্তাক্ত প্রেম, প্রেমের নদী, প্রতিবাদী সন্তান, মন খোঁজে বন্ধন, লাবু এলো শহরে, অন্তরে প্রেমের আগুন, কাছে এসে ভালোবাসো, বিয়ে হলো বাসর হলো না, পাগল প্রেমিক, নষ্ট হওয়ার কষ্ট, পরবাসিনী, আসবো না ফিরে, টিম বাংলাদেশ, লাভ ইউ প্রিয়া, তবুও তুমি আমার, সংগ্রাম, না বলা ভালোবাসা,আমি তুমি সে এবং এই তো সময় ভালোবাসার।
গত বছর এ দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির জন্য আমদানি করা হয়েছে কিছু ভারতীয় চলচ্চিত্র। এগুলো হচ্ছেÑশোলে, থ্রি ইডিয়টস, তারে জামিন পার, কাভি খুশি কাভি গাম, কুচকুক হোতা হ্যায়, ওয়ান্টেড, দিল তো পাগল হ্যায়, দিলওয়ালে দুলহানিয়া লেজায়েঙ্গে ও ধুম টু। সংস্কৃতিকর্মীদের আন্দোলনের মুখে ভারতীয় হিন্দি চলচ্চিত্রগুলো এ দেশের প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শনের সুযোগ পাননি আমদানিকারকেরা। তবে যেহেতু পয়সা খরচ করে ছবিগুলো এনছেন, যেকোনো সময় ঝোপ বুঝে কোপ মারতে তারা প্রস্তুত রয়েছেন।
ডিজিটাল ক্যামেরায় ছবি নির্মাণের হিড়িক পড়েছে গত বছরের শেষের দিকে এসে। সেই বিবেচনায় প্রস্তুত এক শ’ ছবি মুক্তির আগেই নির্মিত হয়ে যাবে আরো অনেক ছবি। ফলে আশা বাড়ছে চার দিকে। এই আশার বাস্তব প্রতিফলন ঘটলেই চলচ্চিত্র শিল্পের চেহারা পাল্টে যাবে। আশা করা হচ্ছে, আবারো ঘুরে দাঁড়াবে চলচ্চিত্র শিল্প। ফিরে পাবে তার হারানো দর্শক, গৌরব ও ঐতিহ্য।
নিউজরুম