স্পোর্টস ডেস্ক(৩ জানুয়ারী):ইংরেজি নববর্ষ উদ্যাপনের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত জায়গা সম্ভবত সিডনি। প্রতিবছর সিডনি হারবারে চোখ ধাঁধানো আতশবাজি দেখতে ভিড় জমান লাখো পর্যটক। ক্রিকেটেও নতুন বছরের প্রতিশব্দ হয়ে উঠেছে সিডনি। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে টেস্ট ম্যাচ হয় অনেক জায়গাতেই। ‘নিউ ইয়ার টেস্ট’ বলতে তবু সিডনি টেস্টকেই বোঝায়। ১৯৯১ সাল থেকে নিয়ম করে হয়ে আসছে, ২০০৬ থেকে এখানে শুধু নববর্ষ টেস্টই হয়। তবে ‘শুরুর মাঠের’ পাশাপাশি সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডকে কিন্তু এখন ‘শেষের মাঠও’ বলা যায়!
মার্ক টেলর, স্টিভ ওয়াহ, শেন ওয়ার্ন, গ্লেন ম্যাকগ্রা, জাস্টিন ল্যাঙ্গার, ম্যাথু হেইডেন…সাম্প্রতিক অতীতে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের অনেক রথী–মহারথী ক্যারিয়ারের ইতি টানার জন্য বেছে নিয়েছেন সিডনিকেই। সেই মিছিলে শামিল এবার মাইক হাসি। অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের স্বর্ণযুগ আর নতুন যুগের মাঝে সেতুবন্ধ হয়ে ছিলেন। এবার সেই বন্ধন কেটে যাচ্ছে। ব্যাগি গ্রিন মাথায় শেষবারের মতো মাঠে নামছেন ‘মিস্টার ক্রিকেট।’
হাসি থাকছেন চলে যাওয়ার জন্য। আর না থেকেও থাকছেন টনি গ্রেগ। দুজনকেই বিশেষভাবে সম্মান জানাবে সিডনি। প্রথম দুই টেস্টেই সিরিজের মীমাংসা হয়ে যাওয়ায় এমনিতে এই টেস্টকে ঘিরে আগ্রহের পারদ বেশ নিচে। হাসির বিদায়ের ঘোষণা আর গ্রেগের চিরবিদায় আরও আড়াল করে দিয়েছে মাঠের ক্রিকেটকে। সিডনির বাতাসে বরং আবেগটাই বেশি ঘুরে বেড়াবে।
তবে মাঠের ক্রিকেটেও এবার নতুন একটা মাত্রা পাচ্ছে সিডনি। এমনিতে সিডনি মানে অস্ট্রেলিয়ায় স্পিনারদের সবচেয়ে বড় মৃগয়া। শেন ওয়াটসনের চোটে তাই স্কোয়াডে ডাকা হয়েছিল স্পিনিং অলরাউন্ডার গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে। ধারণা করা হচ্ছিল, নাথান লায়নের সঙ্গে খেলানো হবে তাঁকেও। কিন্তু এবারের সিডনি চমকে দিয়েছে অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ককে, ‘এসসিজির উইকেটে বিস্ময়কর রকমের ঘাস।’ ম্যাক্সওয়েল নন, একাদশে এসেছেন তাই মিচেল স্টার্ক। সঙ্গে জনসন–সিডল–বার্ড, ৫৮ বছরের মধ্যে প্রথম সিডনিতে চার পেসার নিয়ে নামছে অস্ট্রেলিয়া!
পাঁচ বোলার–পাঁচ ব্যাটসম্যান নিয়ে খেলাও অনেক দিন পর। ৬ নম্বরে ব্যাট করবেন উইকেটকিপার ম্যাথু ওয়েড, এর পর মিচেল জনসন। গত টেস্টেই অপরাজিত ৯২ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেছেন জনসন। যা দেখে ক্লার্ক আশা করছেন, ক্যারিয়ারের শুরুতে অলরাউন্ডার হয়ে ওঠার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন জনসন, সেটি এবার পূরণ হবে।
শেষের একটা ইঙ্গিত আছে শ্রীলঙ্কা শিবিরেও। বাতাসে ভাসছে এই সিরিজ শেষেই সাদা পোশাক ছাড়তে পারেন তিলকরত্নে দিলশান। নিশ্চিতভাবেই অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে এটা শেষ টেস্ট জয়াবর্ধনে–সামারাবীরার। তবে এই আবেগের চেয়ে তাঁদের ভাবনা বেশি মান বাঁচানো নিয়ে। লঙ্কানদের এখন ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’ অবস্থা। সিরিজ তো হেরে বসেই আছে, তার ওপর আবার চোটের কারণে পাচ্ছে না কুমার সাঙ্গাকারা ও চানাকা ভেলেগেদারাকে। অনিশ্চিত প্রসন্ন জয়াবর্ধনে ও নুয়ান কুলাসেকেরাও। হোয়াইটওয়াশ এড়াতে পারলে সেটাই হবে বিস্ময়ের।
তবে ‘ডেড রাবার’ অনেক সময়ই উপহার দেয় চমকপ্রদ ফল। এটিকেই মনে হচ্ছে শ্রীলঙ্কার একমাত্র ভরসা!
নিউজরুম