ঢাকা (৩ জানুয়ারী) : সরকারি ও বিরোধী দলের তর্ক-বিতর্ক সংসদের সৌন্দর্য হলেও প্রায় বিরোধী দলবিহীন আরো একটি বছর পার করলো নবম জাতীয় সংসদ। ২০১২ সালে জাতীয় সংসদের ইতিহাসে সংসদ বর্জনের রেকর্ড গড়ে চারদলীয় জোট।
সংসদ ও আদালতের এখতিয়ার নিয়ে বিতর্ক বিদায়ী বছর সংসদে অন্যতম একটি আলোচনার বিষয় ছিলো। এছাড়া বিভিন্ন সময় সরকারি দলের এমপিরাই কালো টাকা সাদা করা, হলমার্ক কেলেঙ্কারির পর অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য, পদ্মাসেতুসহ বিভিন্ন ইস্যু সংসদকে প্রাণবন্ত করে রেখেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের বেতন-ভাতা ও পারিতোষিক করের আওতায় আনতে পৃথক পৃথক বিল পাসসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিল পাস হয় এ বছরের চারটি অধিবেশনে। সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের সময় এবং প্রশাসকের দায়িত্বকাল ৯০ দিনের পরিবর্তে ১৮০ দিন করতেও একটি বিল পাস হয় এ বছর। এছাড়া চলতি ২০১২-১৩ অর্থবছরের বাজেটও পাস হয় এ বছর।
২০১২ সালে সংসদের চারটি অধিবেশনে মোট কার্যদিবস ছিলো ৮৩। আর এর মধ্যে প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ চারদলীয় জোটের সদস্যরা সংসদে ছিলেন মাত্র তিন কার্যদিবস।
সংসদ বর্জনের রেকর্ড
২০১২ সালে সংসদে প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ চারদলীয় জোটের উপস্থিতি ছিলো নামমাত্র। আর এ বছরই সংসদ বর্জনে নতুন রেকর্ড গড়ে তারা। সংসদের স্পিকার আবদুল হামিদ অ্যাডভোকেট এবং সরকারি দলের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে সংসদে যোগ দিতে তাদের আহ্বান জানানো হলেও আসেনি বিরোধী দল।
সংসদ সচিবালয়ের তথ্য মতে, প্রায় ৮৩ কার্যদিবস অনুপস্থিত থেকে দলীয় সদস্য পদ রক্ষায় গত ১৮ মার্চ সংসদে যোগ দেন চারদলীয় জোটের সদস্যরা। তিন কার্যদিবস উপস্থিত থেকে ২০ মার্চের পর থেকে আর সংসদে ফেরেননি তারা। বিরোধী দল অধিবেশনে যোগ দেওয়ার পর গত ২০ মার্চ বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়া ১ ঘণ্টা ৫৭ মিনিট বক্তব্য রাখেন।
তবে বিরোধী দল বছরের চারটি অধিবেশনে মাত্র তিন কার্যদিবস সংসদে থাকলেও ওই কয়দিন সংসদ ছিলো জমজমাট। অশালীন বক্তব্য দেওয়ায় স্পিকারের সমালোচনাও শুনতে হয়েছে বিরোধী জোটের এমপিদের।
সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি নবম জাতীয় সংসদের ১৫টি অধিবেশনে মোট কার্যদিবস ছিলো ৩৩৭টি। আর এর মধ্যে বিএনপির সংসদ সদস্যরা এসেছেন মাত্র ৫৪ কার্যদিবস।
সংসদ সচিবালয়ের তথ্য মতে, দেশে সংসদীয় ব্যবস্থা পুন:প্রবর্তনের পর ৫ম জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগ ১৩৫ দিন সংসদের বাইরে ছিলো। ওই সংসদের কার্যদিবস ছিলো ২৬৫। ৭ম সংসদের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ২১৯ কার্যদিবসের মধ্যে ১৬৩ কার্যদিবস সংসদের বাইরে ছিলো। আর ৮ম সংসদের প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী সংসদ বর্জন করে ২২৩ দিন। ওই সংসদের মোট কার্যদিবস ছিলো ৩৭৩। চলতি ৯ম জাতীয় সংসদের ১২তম অধিবেশনেই সংসদ বর্জনে নতুন রেকর্ড গড়ে বিএনপি।
সংসদ আদালত বিতর্ক ও স্পিকারের রুলিং
২০১২ সালে সংসদে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিলো সংসদ-আদালত বিতর্ক। বাজেট অধিবেশনের বেশ কিছু দিন আলোচনার শীর্ষে ছিলো বিষয়টি। ২৯ মে সড়ক ভবন বিষয়ে আদালতে রায় নিয়ে সংসদে উচ্চ আদালতের সমালোচনা করেন এমপিরা। স্পিকারও এ বিষয়ে কিছু মন্তব্য করেন। পরে হাইকোর্টের একজন বিচারপতির স্পিকারকে কটাক্ষ করে কিছু মন্তব্য করলে ওই বিচারপতিকে অপসারণের দাবিতে সংসদে ঝড় তোলেন মহাজোটের সদস্যরা। ১৮ জুন স্পিকার তার রুলিংয়ের মাধ্যমে জুডিশিয়াল কাউন্সিল করে ওই বিচারপতিকে অপসারণের দাবি নাকচ করে দিয়ে বিষয়টির সন্তোষজনক সমাধানের দায়িত্ব দেন প্রধান বিচারপতির কাছে।
পরবর্তীতে ওই রুলিংয়ের বিষয়ে আদালতের রায় নিয়ে ৪ সেপ্টেম্বর ১৪তম অধিবেশনের শুরুর দিনই আবার উত্তপ্ত হয় সংসদ।
৪৯টি বিল পাস
প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের বেতন-ভাতা এবং পারিতোষিক করের আওতায় আনাসহ মোট ৪৯টি বিল পাস হয়েছে ২০১২ সালে। হিন্দু ধর্মের বিবাহ নিবন্ধন বিল, মূসক বিল, পুঁজিবাজার সংক্রান্ত দু’টি বিলসহ আরো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিল পাস হয়েছে এ বছরের চারটি অধিবেশনে। এছাড়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান মামলাগুলো দ্রæত নিষ্পত্তিতে আপিলের সময় কমিয়ে একটি বিলও পাস হয়।
প্রশ্নোত্তর
এছাড়া বিরোধী দলবিহীন এ সংসদে প্রধানমন্ত্রীর উত্তর দেওয়ার জন্য মোট ৫৭২টি প্রশ্ন জমা দেন এমপিরা। এর মধ্যে ২১৭টি প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। অন্যান্য মন্ত্রীদের উত্তর দেওয়ার জন্য প্রশ্ন ছিলো ১০ হাজার ৯০৩টি। আর মন্ত্রীরা জবাব দেন ছয় হাজার ৩১৩টির।
এছাড়া ২০১২-১৩ অর্থবছরের বাজেটের ওপর ২১৩ জন সংসদ সদস্য ৪৬ ঘণ্টা ৩০ মিনিট বক্তব্য রাখেন। অন্যদিকে বছরের শুরুর অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর ২১১ জন এমপি আলোচনায় অংশ নেন। সব মিলিয়ে তারা ৫০ ঘণ্টা ২৬ মিনিট আলোচনা করেন।
নিউজরুম