রুপসীবাংলা ডেস্ক (৩ জানুয়ারী) : ২০১২ সালে বগুড়া ও বৃহত্তর ফরিদপুর জেলাসহ রাজশাহী, রংপুর, বরিশাল ও খুলনা বিভাগের ৩৬টি জেলায় ৬৮৪টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহত হয়েছেন ৫৬৩ জন এবং আহত হয়েছেন ১ হাজার ৩২৭ জন। এরমধ্যে গুরুতর আহত হয়েছেন ৪৪০ জন এবং অপেক্ষাকৃত কম আহত হয়েছেন ৮৮৭ জন।
আর এতোগুলো দুর্ঘটনায় মামলা হয়েছে মাত্র ২২১ টি। হাইওয়ে পুলিশ (পশ্চিমাঞ্চল) বগুড়া কার্যালয় থেকে বাংলানিউজকে এসব তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
এছাড়া বগুড়ার সংশ্লিষ্ট ১২ থানার অফিসার ইনচার্জ, হাইওয়ে পুলিশ কন্ট্রোল রুমসহ বিভিন্ন সময়ে প্রতক্ষদর্শীদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত বগুড়া জেলায় মোট সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে ৮৭ টি। এসবে মারা যান ১০৪ জন এবং আহত হন ১৩৬ জন। তবে এসব ঘটনায় বিভিন্ন থানায় মামলা হয়েছে মাত্র ২৯ টি।
সূত্র জানায়, বগুড়া জেলায় জানুয়ারি ও মে মাসে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। জানুয়ারিতে ১৩ টি দুর্ঘটনায় প্রাণহানি হয়েছে ১৬ জনের এবং আহত হয়েছে ১৩ জন। মে মাসে ১২ টি সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি হয়েছে ১৬ জনের এবং আহত হয়েছে ২৫ জন।
এছাড়া ফেব্রুয়ারিতে ৮টি দুর্ঘটনায় নিহত ৮ ও আহত ৫, মার্চে ৯ দুর্ঘটনায় নিহত ১১ ও আহত ১০, এপ্রিলে ৩ দুর্ঘটনায় ৩ জন নিহত ও ৫ জন আহত, জুনে ৯ দুর্ঘটনায় ৮ জন নিহত ও ১২ জন আহত, জুলাইয়ে ৮ দুর্ঘটনায় ৯ জন নিহত ও ১২ জন আহত, আগস্টে ৪ দুর্ঘটনায় ৬ জন নিহত ও ৯ জন আহত, সেপ্টেম্বরে ৫ দুর্ঘটনায় ৭ জন নিহত ও ৮ জন আহত, অক্টোবরে ৪ দুর্ঘটনায় নিহত ৫ ও আহত ১৩, নভেম্বরে ৫ দুর্ঘটনায় ৭ জন নিহত ও ১২ জন আহত এবং ডিসেম্বরে ৭ দুর্ঘটনায় ৮ জন নিহত ও ১২ জন আহত হয়েছেন।
হাউওয়ে পুলিশের (পশ্চিমাঞ্চল) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইনামুল হক জানান, ধীর গতিতে হলেও ক্রমান্বয়ে আগের চেয়ে কিছু ক্ষেত্রে সড়ক দুর্ঘটনা কিছুটা কমেছে। আর যেসব স্থানে দুর্ঘটনা বেড়েছে, তারা আইন না মেনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালিয়েছেন। তবে সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে হলে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগে কঠোর হতে হবে।
তবে ভুক্তভোগীরা মনে করেন, একথা দু:খজনক হলেও সত্য যে, দুর্ঘটনায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মামলা হলেও শ্রমিক সংগঠনের দৌরাত্ম ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের উদাসীনতাসহ দুর্নীতির কারণে অভিযুক্ত চালক ও ত্রুটিপূর্ণ অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে তেমন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
দুর্ঘটনায় দোষীদের সাজা নিয়ে কথা হয় স্কুল-কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, রাজনীতিবিদ, আইনজীবী ও ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের সঙ্গে।
বাংলানিউজকে তারা জানান, স্বল্প শিক্ষিত বা অসচেতন অথবা আইন সম্পর্কে নূন্যতম ধারণা নেই এমন ব্যক্তিরা সড়ক দুর্ঘটনায় বিচার না পাওয়ার জন্য আদালতকে দায়ী করলেও উপযুক্ত সাক্ষ্য প্রমাণ ও প্রচলিত আইনের কিছু ক্ষেত্রে জটিলতার কারণে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অভিযুক্ত ও দায়ীরা অব্যহতি পেয়ে যান। তাছাড়া এসব সড়ক দুর্ঘটনার জন্য সরকার বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে কখনও যদি তদন্ত কমিটি গঠন হয়েও থাকে, রাজনৈতিক ও উর্দ্ধতন কর্মকর্তার চাপসহ কমিটির অসততা ও অমোনোযোগিতার কারণে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেসব তদন্ত কোন কাজে আসেনি।
উল্লেখ্য, চার বিভাগে ২০১১ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন ১৩৪ জন। সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা ও পুলিশসদস্যসহ আহত হন কমপক্ষে ১২১ জন। বিগত বছরের দুর্ঘটনার সংখ্যা খুব একটা না কমলেও নিহতের সংখ্যা কিছুটা কমেছে।
নিউজরুম