শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক সঙ্কট অবসানে বিএনপির সাথে আলোচনায় আগ্রহের কথা জানিয়েছেন মতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। তিনি গতকাল মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে বলেছেন, বিএনপির সাড়া পেলে আগামী নির্বাচন নিয়ে শিগগিরই আলোচনায় বসতে চান তারা। সমাধানের একমাত্র পথ আলোচনা, বিকল্প কোনো পথ নেই। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আলোচনা যেন শুরু হয়। যত তাড়াতাড়ি এর সুরাহা হয়, গণতন্ত্র ও জাতির জন্য তা তত মঙ্গলজনক। সৈয়দ আশরাফ এটাও বলেছেন, আলোচনা যে চলছে না, তাও না। আলোচনা রাজনীতির একটি চলমান প্রক্রিয়া। রাজনৈতিক দলের সাথে রাজনৈতিক দলের সব সময় কথা হয়, শুধু আনুষ্ঠানিকভাবে বসা হয়নি। আশা করি, অচিরেই সাড়া পাব, আর সাড়া পেলে আনুষ্ঠানিক আলোচনায় বসব। সৈয়দ আশরাফ রাজনৈতিক দলের কাছে রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান করার আহ্বান জানিয়ে আরো বলেছেনÑ এখানে আকবর আলি খান যদি কোনো সহযোগী ভূমিকা পালন করেন, তাহলে তাকে স্বাগত জানাব। এর আগে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারপদ্ধতি পুনর্বহালে সরকারের সাথে আলোচনা করতে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া তাদের প থেকে আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। বিরোধী দল আলোচনার সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব আশা করে বলেছে, নির্দলীয় সরকার পুনর্বহালের দাবি মেনে নিলে তারা আলোচনায় বসবেন।
সরকারের দুই নাম্বার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত এলজিআরডি মন্ত্রী ও সরকারি দলের পুনর্নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বিরোধী দলের সাথে যে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছেন তা কতটুকু আন্তরিকভাবে দেয়া হয়েছে, সে বিষয়ে নিশ্চিত করে বলার সময় এখনো আসেনি। তিনি সরকারের নীতিনির্ধারণী অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে যেমন এর আগে কথা বলেছেন, তেমনিভাবে তার কথাকে সরকার মোটেই আমলে নেয়নি এমনটিও হয়েছে। তবে ক্যাবিনেটের বৈঠক থেকে বেরিয়ে তিনি যে সময়ে এবং যেভাবে কথা বলেছেন, তাতে সরকারের সর্বোচ্চ ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রীর এ প্রস্তাবে সম্মতি রয়েছে বলে মনে হয়। আগামী নির্বাচন প্রশ্নে রাজনৈতিক বিরোধ নিরসনে দুই পক্ষের সমঝোতার সময় যে দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে, তা উপলব্ধি না করাটা মোটেই দূরদৃষ্টির পরিচায়ক নয়। ওয়ান-ইলেভেনের জরুরি সরকার থেকে নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক ক্ষমতা পরিবর্তন-প্রক্রিয়ার সাথে সৈয়দ আশরাফ জড়িত ছিলেন । ফলে তিনি কোথায় কী হচ্ছে, রাজনৈতিক সমঝোতা না হলে কী ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া হতে পারে, তা নিশ্চয়ই উপলব্ধি করতে পারছেন। আরেক ওয়ান-ইলেভেন ধরনের অনাকাক্সিত পরিবর্তন হলে অতীতের রেওয়াজ অনুযায়ী আগের ক্ষমতাসীন দল হিসেবে আওয়ামী লীগই যে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, সেটি সরকারি দলের অনেক গুরুত্বপূর্র্ণ নেতার মুখ থেকেই শোনা যাচ্ছে। আর ক্ষমতায় থেকে আরেকবার ক্ষমতায় যাওয়ার ব্যবস্থা পোক্ত করতে চাইলে কী পরিণতি হয় সেই নজিরও আমাদের সামনে রয়েছে। এ অবস্থায় নির্দলীয় নিরপেক্ষ বা সমঝোতার মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য অন্য কোনো সরকারের বাইরে আগামী নির্বাচন একতরফা অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা নিয়ে আগানো যে অসম্ভব, সেটি ক্রমেই পরিষ্কার হচ্ছে। এর সাথে সরকারি দলের আলোচনার প্রস্তাবে ইতিবাচক সাড়া দেয়ার সম্পর্র্ক থাকতে পারে।
আমরা মনে করি, আলোচনার জন্য প্রস্তাবে সব পক্ষের আন্তরিক ও কার্যকরভাবে সাড়া দেয়া উচিত। তবে গ্রামগঞ্জ থেকে শুরু করে দলের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল পর্যন্ত বিরোধী নেতাকর্মীদের পাইকারিভাবে মামলা দিয়ে জেলে বন্দী রেখে কার্যকর আলোচনা সম্ভব নয়। আর জাতির জন্য সংসদ অবশ্যই আলোচনার সর্বোচ্চ ফোরাম; কিন্তু এটি আলোচনা শুরুর কোনো জায়গা নয়। গোপনে বা প্রকাশ্যে রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে একটি সমঝোতা হওয়ার পর সে প্রস্তাবের আনুষ্ঠানিক বাস্তবায়নের জন্য অবশ্যই সংসদে যেতে হবে সব পক্ষকে। এসব ব্যাপারে কোনো পক্ষেরই একগুঁয়েমি ভূমিকা পালনের অবকাশ নেই। আমরা আরো মনে করি, সমঝোতার আলোচনা দুই পক্ষের মধ্যে সরাসরি হওয়াই ভালো। তা না হলে সুশীলসমাজ বা ব্যবসায়ী নেতারা যদি এতে কোনো ভূমিকা রাখতে চান তাকেও স্বাগত জানানো যেতে পারে। এমনকি পরোক্ষ অনুঘটকের ভূমিকা যদি কোনো কূটনৈতিক অংশীদারের নেয়ার প্রয়োজন হয়, তাতেও আপত্তি জানানোর কারণ থাকতে পারে না।