ঢাকা (১ জানুয়ারী) : চলতি নবম জাতীয় সংসদের অধিকাংশ সময় প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ চারদলীয় জোটের সদস্যরা অনুপস্থিত থাকলেও বিভিন্ন ইস্যুতে সরকারের তুমুল সমালোচনা করেছেন মহাজোটের সংসদ সদস্যরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিরোধী দল বিহীন সংসদে এ ঘটনা ‘স্বাস্থ্যকর’। সরকারের উচিত, এসব আলোচনাকে গুরুত্ব দেওয়া।
শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, হলমার্ক ঋণ কেলেঙ্কারি, স্কুল এমপিওভুক্তকরণ, মন্ত্রীদের সংসদে অনুপস্থিতি, আদালত-সংসদ বিতর্ক, বিদ্যুত পরিস্থিতি, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, রাস্তা-ঘাটের বেহাল দশা, ছাত্রলীগের টেন্ডার বাণিজ্য, খাদ্যে ভেজালসহ বিভিন্ন ইস্যুতে সংসদ উত্তপ্ত করেছেন তারা। এমনকি বিভিন্ন সময়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের পদত্যাগের দাবিও উঠেছে সংসদে। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাদের নিয়েও সমালোচনা হয়েছে অনেক।
সংসদে বিভিন্ন সময়ে মন্ত্রীদের সমালোচনাতেও পিছপা হননি ক্ষমতাসীন মহাজোটের এমপিরা। সংসদ অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডার, প্রশ্নোত্তর পর্ব, রাষ্ট্রপতির ভাষণ ও বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা এসব ইস্যুতে সংসদ উত্তপ্ত করেন। এসব বিষয়ে অনির্ধারিত আলোচনাও করেছেন এমপিরা।
প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালের ২৫ জানুয়ারি যাত্রা শুরু করে চলতি নবম জাতীয় সংসদ। আগামী ২৫ জানুয়ারি চার বছর পূরণ হচ্ছে এ সংসদের। গত ২৯ নভেম্বর শেষ হওয়া ১৫তম অধিবেশন পর্যন্ত মোট ৩৩৭ কার্যদিবস চলেছে সংসদের বৈঠক। আর এ সময়ের মধ্যে মাত্র ৫৪ দিন সংসদে গিয়েছেন প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ চারদলীয় জোটের সদস্যরা।
সংসদ বিষয়ক গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক নিজাম উদ্দীন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘‘স্বাস্থ্যকর সংসদের জন্য এ ধরনের আলোচনা খুব দরকার। ৯ম সংসদে বিরোধী দল না থাকলেও সরকারি দল ও শরিক দলগুলোর সংসদ সদস্যরা সরকারের সমালোচনা করেছেন। এটা ব্যতিক্রমধর্মী একটি বিষয়। এতে সরকারের কোনো ক্ষতি হয় না।’’
তিনি জানান, ৫ম সংসদে এ ধরনের আলোচনা হলেও ৭ম ও ৮ম সংসদে তা অনুপস্থিত ছিলো।
পুঁজিবাজার ইস্যুতে মহাজোট এমপিদের ব্যাপক সমালোচনায় পড়েন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। যোগাযোগ ব্যবস্থার বেহাল দশা নিয়ে তুলোধুনো হন সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন।
সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের বিষয়ে সংসদে সবচেয়ে সরব ছিলেন আওয়ামী লীগের শেখ ফজলুল করিম সেলিম, তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, ফজলে রাব্বি মিয়া, আব্দুল মান্নান, জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু, হাফিজ আহমেদ মজুমদার, জাসদের মইন উদ্দীন খান বাদল, ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন প্রমুখ।
গত বছরের ১৮ আগস্ট যোগাযোগ ব্যবস্থার বেহাল দশা নিয়ে সংসদ উত্তপ্ত করেন মহাজোটের এমপিরা। ওই দিন পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে রাশেদ খান মেনন আলোচনার সূত্রপাত করেন। পরে আলোচনায় অংশ নেন আরো অনেকে। ওই আলোচনায় তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রীর পদত্যাগও দাবিও ওঠে।
রাশেদ খান মেনন বাংলানিউজকে বলেন, ‘‘সরকারি দলসহ শরিক দলগুলোর সংসদ সদস্যরা বিভিন্ন ইস্যুতে সরকারের সমালোচনা করেছেন বলেই সংসদ কার্যকর থেকেছে। এ ধরনের আলোচনা হয়েছে বলেই বিরোধী দলবিহীন সংসদ প্রাণবন্ত ছিলো।’’
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি মেনন আরো বলেন, ‘‘সংসদ সদস্যদের আলোচনার মধ্য দিয়েই ‘অথরিটি অব পার্লামেন্ট’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।’’
গত বছরের ২৩ মে পুঁজিবাজার কেলেঙ্কারি নিয়ে সংসদে তোপের মুখে পড়েন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। ওই দিন সরকারি দলের সিনিয়র সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নুসহ আরো বেশ কয়েকজন পুঁজিবাজার কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় সরকার ও অর্থমন্ত্রীর ব্যাপক সমালোচনা করেন।
এদিকে চলতি বছরের ৩০ মে সংসদ সদস্যদের তোপের মুখে পড়েন পানিসম্পদ মন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন। হাওড় ও নদী ভাঙ্গন এলাকার বিভিন্ন প্রকল্পের অগ্রগতি না হওয়ায় মহাজোটের সংসদ সদস্যদের তীব্র অসন্তোষের মুখে পড়েন তিনি।
এছাড়া বিভিন্ন সময়ে নিজ এলাকার বিদ্যুৎ পরিস্থিতি নিয়ে এমপিদের প্রশ্নবাণে জর্জরিত হয়েছেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী এনামুল হক। এছাড়া এমপিওভুক্তি নিয়ে এমপিদের অসন্তোষের মুখে পড়েন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
জাতীয় পার্টির প্রভাবশালী সংসদ সদস্য ও হুইপ মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘‘সরকারের অংশ হয়েও জনস্বার্থে এবং বিবেকের তাড়নায় বিভিন্ন সময়ে সরকারি সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছি।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘সরকারের কিছু সিদ্ধান্ত অগ্রহণযোগ্য ও বিতর্কিত হওয়ায় আলোচনা করেছি। এতে বিরোধী দল না থাকলেও সংসদ প্রাণবন্ত ছিলো।’’