ঢাকা (১ জানুয়ারী) : রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে ১৮তম আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শনিবার সকালে দেশি-বিদেশি প্যাভেলিয়ন-স্টলের অংশগ্রহণে মাসব্যাপী এ মেলা শুরু হলো। বাংলাদেশ ছাড়াও এতে ১২টি দেশ অংশ নিয়েছে। মেলা চলবে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “১ জানুয়ারি নতুর বছর শুরু হলো। আর বিজয়ের মাস চলে গেল। স্বাধীনতার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের দায়িত্ব নেন। অসুস্থ মা যেভাবে তার সন্তানের দায়িত্ব নেন, সেভাবে তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। সেসময় শিল্প-কল-কারাখানা ছিল না বললেই চলে। এরপর বঙ্গবন্ধু দেশের ব্যবসায়ীদের সহায়তায় এগিয়ে আসেন।”
তিনি বলেন, “নতুন বিভাগ রংপুরসহ সাতটি বিভাগেই আমরা শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছি।”
তিনি বলেন, “১৯৯৪ সালে বিএনপি বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশ জুট অ্যাডজাস্টমেন্ট ক্রেডিট নামে একটি চুক্তি করে। এর ফলে, পাটশিল্প ধ্বংস হয়ে যায়। সেসময়ের বিএনপি সরকার, সেগুলো লুটপাট করে খেয়ে ফেলে । আদমজী জুটমিলসহ অসংখ্য কারখানা বন্ধ হয়ে যায়।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা দেশি-বিদেশি সব ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগে উৎসাহিত করছি। বিশেষ করে, দেশি ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করছি। তারা পণ্য উৎপাদন করে বিদেশে রফতানি করবেন, এতে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। এটাই আমাদের নীতি।”
শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশি পণ্য রফতানির জন্য নতুন নতুন দেশ খুঁজে বের করতে হবে। আমাদের সিরামিক জাতীয় পণ্যের বিদেশে চাহিদা রয়েছে। আমরা সিরামিক পণ্য বিদেশে রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারি।”
তিনি বলেন, “আমরা কৃষিজাত পণ্য রফতানি করে ৪০ কোটি ডলার আয় করেছি। আমরা এ পণ্য বাজারজাত করতে বিদেশে নতুন বাজার খুঁজে রফতানি আয় বাড়াতে পারি। এবিষয়ে আমাদের সবাইকে আরও নজর দিতে হবে।”
দেশে পণ্য পরিবহনে বর্তমান সরকার গুরুত্ব দিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “পণ্য বাজারজাত করতে আমরা নদীখনন অব্যাহত রেখেছি। এছাড়া কমখরচে পণ্য বহনে রেলের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।”
“সড়ক পথে পণ্যবহন খরচসাপেক্ষ বলে নদীপথ এবং রেলপথকে উন্মুক্ত করা হয়েছে। এজন্য আমরা নদীখনন এবং রেল যোগাযোগকে আরও উন্নত করার চেষ্টা করছি।”
তিনি বলেন, “পণ্য আমদানি-রফতানি বাড়াতে দুটি নদীবন্দরকে আরও আধুনিকায়ন করা হচ্ছে।”
বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরকারের সাফল্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদন তিন হাজার ২০০ মেগাওয়াট থেকে বৃদ্ধি করে ৬ হাজার ৩৫০ মেগাওয়াটে উন্নীত করেছি। এছাড়া আরও ২৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজ চলছে। এগুলো শেষ হলে আরও ৪ হাজার ৯২৭ মেগাওয়াট বৃদ্ধি করতে সক্ষম হবো।”
এছাড়াও রাশিয়ার সহযোগিতায় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে আরও এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে বলে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগের অর্থনৈতিক সাফল্য তুলে ধরে বলেন, “আমরা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার বৃ্দ্ধি করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা প্রবৃদ্ধির হার ৬ দশমিক ৫ শতাংশে উন্নীত করতে পেরেছি। দক্ষতার সঙ্গে দেশ পরিচালনা করতে পেরেছি বলে এটা সম্ভব হয়েছে।”
এর যৌক্তিকতা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি বলে অর্থনৈতিক প্রবৃ্দ্ধি বৃদ্ধি হয়েছে। এ জন্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হার বৃদ্ধির শীর্ষ দেশের মধ্যে পঞ্চম স্থান অর্জন করতে পেরেছি আমরা।”
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতির উদাহরণ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, “বর্তমানে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১৩ বিলিয়ন (১৩০০ কোটি) মার্কিন ডলার, যা আগের চেয়ে অনেক বেশি।”
আওয়ামী লীগের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার সাফল্য তুলে ধরে তিনি বলেন, “ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে আমরা থ্রিজি ইন্টারনেট ব্যবস্থা চালু করেছি। এর পর ফোর-জি চালু করবো।”
ডিজিটাল দেশ গঠনে বাংলাদেশের অগ্রগতি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, “এখন আর ঢাকায় বসে ব্যবসা করার প্রয়োজন হয় না। এজন্য অনলাইনেই বাজার দর জেনে ঢাকার বাইরে থেকেই অনেকেই ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন।”
অনুষ্ঠানে এর আগে বক্তব্য রাখেন বাণিজ্যমন্ত্রী জিএম কাদের।
এবারের ১৮তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় কিছু পরিবর্তন রয়েছে। মেলা প্রাঙ্গণকে ধূমপানমুক্ত রাখার জন্য আলাদা চারটি ধূমপান জোন করা হয়েছে। ব্যবসায়ীদের জন্য আলাদা জোন গঠন করা হয়েছে।
এছাড়া মেলার অভ্যন্তরীণ অবস্থা এবং স্টলগুলোর সঠিক তত্ত্বাবধানের জন্য মেলায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের বুথ রয়েছে। এবার মেলায় রয়েছে ৯৩টি প্যাভেলিয়ন, ৪৮টি মিনি প্যাভেলিয়ন ও ৩৬০টি স্টল।
মেলায় অংশ নেওয়া দেশগুলো হলো- দক্ষিণ কোরিয়া, হংকং, যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর, ভারত, তুরস্ক, পাকিস্তান, চীন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরান, জাপান ও থাইল্যান্ড।
মেলায় আসা ক্রেতাদের জন্য এবার ভেতরে থাকছে ৬টি রেস্তোরাঁ।
এবারের মেলায় টিকেটের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ টাকা। তবে পাঁচ বছরের কম বয়েসীদের জন্য ১০ টাকা টিকেটের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
নিউজরুম