ঢাকা (১ জানুয়ারী) : সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনিসহ সকল সাংবাদিক হত্যার বিচার করতে না পারলে ২০ জানুয়ারি পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তার পদে থাকতে পারবেন না বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন সাংবাদিক নেতারা। মঙ্গলবার দুপুরে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অংশ হিসেবে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচি করতে গিয়ে সাংবাদিক নেতারা এ হুশিয়ারি দেন।
‘মন্ত্রণালয় ঘেরাও করে বিচার পাওয়া যাবে না’-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের তী্র্ব প্রতিবাদ করে তারা বলেন, ‘‘সাংবাদিকদের আন্দোলন সম্পর্কে আপনার ধারণা নেই বলেই আবোল-তাবোল বলছেন। আগামীতে এমন কর্মসূচি দেওয়া হবে, যে কর্মসূচিতে কার গদি থাকবে আর কার গদি থাকবে না তা সময়েই দেখা যাবে।’’
বেলা পৌনে ১২টায় জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে বিক্ষোভ মিছিল সহকারে সচিবালয়ের দুই নম্বর গেটের সামনের রাস্তা অবরোধ করে ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেন সাংবাদিকরা। এ সময় রাস্তায় তীব্র যানজট তৈরি হয়।
দেড় ঘণ্টাব্যাপী এ ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে), ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে), জাতীয় প্রেসক্লাব ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি। এ সময় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক নেতারা।
‘মন্ত্রণালয় ঘেরাও করে দাবি আদায় হবে না’ এমন বক্তব্য দিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দায়িত্ত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন বলে মন্তব্য করে বিএফইউজের সভাপতি ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, ‘‘সাংবাদিকদের চাপ এখনও দেখেননি। যেদিন দেখবেন, সেদিন আর পদে থাকতে পারবেন না। তাই ২০ জানুয়ারির মধ্যে আমাদের দাবি মেনে নিন। না হয় এমন কর্মসূচি দেবো যে, আপনি আর পদে থাকতে পারবেন না।’’
‘‘প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচিতে প্রধানমন্ত্রী আমাদের নিয়ে মন্তব্য করেননি। অথচ তার মন্ত্রিসভার একজন মন্ত্রী কিভাব আমাদের কর্মসূচি নিয়ে কট্যক্ষ করেন? তিনি এতো সাহস কোথায় পেয়েছেন, তা আমরা
জানতে চাই।’’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে ইকবাল সোবহান আরো বলেন, ‘‘আপনার লাগামহীন বক্তব্য বন্ধ না করলে এমন সময় আসবে, যেদিন আপনাদের কথা কাভার করতে আর কোনো ক্যামেরা-রিপোর্টার যাবে না।’’
সাগর-রুনি হত্যার পরিপ্রেক্ষিতে সাংবাদিকদের মধ্যে যে ঐক্য হয়েছে, তা কোনো দিন বিচ্ছিন্ন হবে না বলেও প্রত্যয় ব্যক্ত করেন এই সাংবাদিক নেতা।
তিনি বলেন, ‘‘২০ জানুয়ারির মধ্য সাগর-রুনির প্রকৃত খুনিদের আইনের আওতায় না আনা হলে আরো কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো।’’
বিএফইউজের অপর অংশের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী বলেন, ‘‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের চাপ অনুভব করতে পারছেন না। তাই আবোল-তাবোল বলছেন। ২০ জানুয়ারির পর বুঝবেন, আমরা কি চাপ দিতে পারি।’’
সাংবাদিকদের সঙ্গে টালবাহানা করে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে পারবেন না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
রুহুল আমিন গাজী বলেন, ‘‘সৌদি দূতাবাস কর্মকর্তা খালাফ হত্যা মামলার দ্রুত তদন্ত করে বিচার করতে পারলে জাতির বিবেক নাড়া দেওয়া সাগর-রুনি হত্যার বিচার করতে পারবেন না কেন? তাহলে কি আমরা বুঝে নেবো, এর পেছনে গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে।’’
বিএফইউজের একাংশের মহাসচিব আবদুল জলিল ভূঁইয়া বলেন, ‘‘এর আগেও অনেক সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু কোনো হত্যাকাণ্ডেরই সুষ্ঠু বিচার হয়নি। কিন্তু সাগর-রুনি তাদের মৃত্যুর মাধ্যমে গোটা সাংবাদিক
সমাজকে আজ ঐক্যবদ্ধ করে গেছেন। আমরা আমাদের আন্দোলনের মাধ্যমে সহকর্মীদের রক্তের শোধ নেবো।’’
জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ বলেন, সাংবাদিকদের নিয়ে যারা কটাক্ষ করেন, তাদের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।’’
ডিইউজের একাংশের সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, সাগর-রুনি হত্যার বিচার দাবির আন্দোলনকে অনেকে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন হিসেবে চিহ্নিত করতে চাচ্ছেন, এটা ঠিক না।’’
তিনি বলেন, ‘‘আজ হোক, দশ বছর পরে হোক এ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার হবেই।’’
ডিইউজের অপর অংশের সভাপতি সভাপতি আব্দুস শহীদ বলেন, ‘‘এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে ডিবি, র্যাব, স্বরাষ্ট্র ও তথ্যমন্ত্রী ব্যর্থ হয়েছেন। তাই আন্দোলন ছাড়া সাগর-রুনির হত্যাকারীদের বিচার পাওয়া যাবে না।’’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে ডিইউজের একাংশের সাধারণ সম্পাদক শাবান মাহমুদ বলেন, ‘‘আপনার ব্যর্থতা সরকারের ওপর চাপিয়ে দিতে পারেন না। ২০ জানুয়ারির আগে প্রকৃত খুনিদের হাজির করুন। না হলে আপনার বিপদ আছে।’’
‘‘যদি সাংবাদিকদের শক্তি সম্পর্কে ধারণা না থাকে, তাহলে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করুন, আমরা কি করতে পারি?’’
ডিআরইউ’র সভাপতি শাহেদ চৌধুরী সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘‘আমাদেরকে প্রতিপক্ষ ভাববেন না। এখনও সময় আছে, সাগর-রুনির প্রকৃত খুনিদের গ্রেফতার করুন। না হলে কিভাবে দাবি আদায় করতে হয়, তা আমাদের জানা আছে।’’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচি পরিচালনা করে
ডিআরইউ’র সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান।
সাগরু-রুনিসহ সকল সাংবাদিক হত্যার বিচার, সাংবাদিকদের নিরাপত্তা, মুক্ত সংবাদ মাধ্যম প্রতিষ্ঠাসহ কয়েকটি দাবিতে আগামী ২০ জানুয়ারি ঢাকায় মহাসমাবেশ কর্মসূচি পালন করবে সাংবাদিক সংগঠনগুলো।
এর আগে ২৩ ডিসেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের গণ অনশন কর্মসূচি থেকে ১ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাও ও ২০ জানুয়ারি ঢাকায় মহাসমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ইকবাল সোবহান চৌধুরী।
উল্লেখ্য, ১১ ফেব্রুয়ারি ভোররাতে রাজধানীর রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় খুন হয় মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সারওয়ার ও এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার মেহেরুন রুনি।
চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার প্রায় ১১ মাস পেরিয়ে গেলেও হত্যার প্রকৃত খুনিদের এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
ডিবি ব্যর্থ হলে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ৠাবকে। নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসার পর সন্দেহজনকভাবে ছয়জনকে এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আটক করা হয়েছে বলে মিডিয়াকে জানান।
প্রকৃত খুনিদের গ্রেফতারের দাবিতে গত ফেব্রুয়ারি থেকে আন্দোলন করে আসছেন সাংবাদিকরা।