রুপসীবাংলা, স্পোর্টস ডেস্ক: একটু সাবধানী হওয়া উচিৎ ছিলো স্যামি। তুমিই তো ছেলেগুলোকে তাতিয়ে দিয়েছো। কেন যে বলতে গিয়েছিলে সিরিজটা ৫-০ তে জিততে চাও। তোমার বোঝা উচিৎ ছিলো এই দলটা ক্ষেপে গেলে কেউ পার পায় না। কেন, দেখনি নিউজিল্যান্ডকে কিভাবে ধবলধোলাই করেছে। এশিয়া কাপের কথাই ধর, ভারত এবং শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে ফাইনালে খেলেছে। ওহ, তোমরা বোধহয় এখনও বিশ্বকাপের সেই ৫৮ রানের কথা ভুলতে পারনি। কিন্তু বিশ্বকাপের পরেই তো টি-টোয়েন্টি এবং ওয়ানডেতে তাদের কাছে পরাজয়ের স্বাদ নিয়েছো।
বাংলাদেশ: ২৯২/৬ (৫০ ওভার)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ১৩২/১০ (৩১.১ ওভার)
ফল: বাংলাদেশ ১৬০ রানে জয়ী
টাইগার নামকরণ তো এমনি এমনি হয়নি। এই জাতির সংসারে আজ যে সন্তান এসেছে, সেও কিন্তু টাইগার। খুলনা থেকে ঢাকা ফেরার আগে তোমরা বরং ধবলধোলাইয়ের প্রস্তুতি নিয়ে ফেল। এই বিচ্ছুগুলোকে তো বিশ্বাস নেই, কখন কি করে ফেলে। আব্দুর রাজ্জাক তো মুখের ওপর বলেই দিলেন, তারা মুখে খেলেন না, মাঠে খেলেন। দেখে নিও, এবার তারা তোমাদের বাংলাওয়াশ করবেই।
রাজ্জাক কেন, তামিম ইকবাল, নাসির হোসেন, এনামুল হক বিজয়ও তো বললেন, তারা কাজে বিশ্বাসী। এই যে তোমরা হাসতে পারছো না, তা ওই ১১টা ছেলের জন্যই। ‘গেমস এন্ড স্পোর্টস’ এমনই, অনেক বড় সাফল্যকেও আড়াল করে দেয় পরের ব্যর্থতা। তোমাদের টেস্ট সিরিজ জয়ের আনন্দও বিবর্ণ করে দিয়েছে এই হার।
প্রথম ওয়ানডে হারের পর প্রবল প্রতিপক্ষ হয়ে ফিরতে চেয়েছিলে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে। দম্ভভরে বলেছিলে, ম্যাচটা তোমরাই জিতবে। বাংলাদেশ ক্রিকেট দল তোমাদের উল্টো রথ দেখালো। প্রতিপক্ষকে বিপদে ফেলার জন্য টস জিতে ফিল্ডিং নিয়েও সুফল পাওনি। ওসব থাক, বরং বাংলাদেশের অভূতপূর্ব সাফল্যের গল্পটা বলি।
শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামের কিউরেটর জাহিদ রেজা শনিবার গল্পে গল্পে বলেছিলেন, দ্বিতীয় ওয়ানডের উইকেটও স্লো এবং লো হবে। এধরণের পিচে স্পিন নির্ভর বাংলাদেশ দল খুব ভালো খেলে। রোববারও দারুণ ক্রিকেট খেলেছে। ২১ রানে তামিম ইকবাল এবং নাঈম ইসলামকে হারিয়েও ব্যাটসম্যানরা কক্ষচ্যুত হয়নি। ওপেনার এনামুল এবং মুশফিকুর রহিম ১৭৪ রানের জুটি গড়েছেন। তৃতীয় উইকেটে এটাই দেশের পক্ষে সবচেয়ে বেশি আর যে কোন জুটিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। রাজিন সালেহ এবং হাবিবুল বাশার ২০০৬ সালে কেনিয়ার বিপক্ষে চতুর্থ উইকেটে অবিচ্ছিন্ন ১৭৫ রান করেছিলেন। ১৩ মাস পর ১১তম ওয়ানডে হাফসেঞ্চুরিরটা পেলেন মুশফিক। ৭৯ রানে রবি রামপলের বলে ক্যাচ তুলে লেন্ডল সিমন্সের হাতে ধরা পড়েন অধিনায়ক। ২০১১ সালের ১৫ অক্টোবর এই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেই ৬৯ রানের ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। ওটা ছিলো তাঁর ১০ম হাফসেঞ্চুরি।
মুশফিকের পর নাসির হোসেন, মমিনুল হক এবং এনামুল রামপলের শিকার হয়েছেন। তার আগেই যা হওয়ার হয়ে গেছে। এনামুল ১২০ রানের ইনিংস খেলেছেন ১৪৫ বলে। তাঁর এই অভিষেক সেঞ্চুরিটি ১৩টি চার এবং একটি ছয় দিয়ে সাজানো। এত কম ওয়ানডে খেলে এর আগে কোন বাংলাদেশি ক্রিকেটার এটা করতে পারেননি। প্রথম ওয়ানডেতে ৪১ রান পাওয়া এই ব্যাটসম্যান দ্বিতীয় ম্যাচে সেঞ্চুরি হাঁকাবেন সেটা কেউ স্বপ্নেও ভাবেনি। কিন্তু তিনি এই সেঞ্চুরি পেতে যে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছেন, তা এখনও সাকিব আল হাসান, নাসির হোসেন এবং তামিম ইকবাল পরেননি। যেই না ৯০ এর ঘরে গেলেন অমনি স্লো ব্যাটিং দিয়ে এগুলেন। ১০ রান করলেন ২৩ বলে। শেষদিকে তা পুষিয়েও দিয়েছেন আন্দ্রে রাসেলের ওভারে ২০ রান নিয়ে। ৪৮তম ওই ওভার থেকে দলের স্কোরে যোগ হয়েছে ২১ রান।
এই ম্যাচের শেষদিকে নেমে ২৯ বলে ৩১ রান করেছেন। মাশরাফি বিন মুর্তজা ছয় বলে করেন ১৮ রান। সব মিলে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছয় উইকেটে ২৯২ রান।
খেলার আগের দিন জাতীয় দলের প্রতিনিধি হয়ে মাশরাফি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, জয়ের জন্য একটা ভালো শুরু প্রয়োজন। ব্যাটিংয়ের পর বোলিংয়ের শুরুটাও ভালো হয়েছে। ফিল্ডিংটাকে বাদ দিবেন কি করে। ওটাও অসাধারণ ছিলো। ৪.৪ ওভারে সোহাগ গাজী ব্রেক থ্রু দেন সিমন্সকে ফিরিয়ে। সিমন্সের ক্যাচটা নিয়েছেন তামিম। ক্রিস গেইলকে মাশরাফি উইকেটের পেছনে ক্যাচ বানিয়েছেন ব্যক্তিগত ১৫ রানে। ৩২ রানে গুরুত্বপূর্ণ দুই ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে ব্যাকফুটে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পরে যা হয়েছে তা প্রথম ম্যাচেরই প্রতিচ্ছবি। দুই স্পিনার রাজ্জাক এবং সোহাগ গাজী ছয় উইকেট নিয়ে সফরকারী দলের পরাজয় ত্বরান্বিত করেন। রাজ্জাক পাঁচ ওভারে ১৯ রানে তিনটি এবং সোহাগ ৭.১ ওভারে ২১ রানে তিন ব্যাটসম্যানকে আউট করেন। মাশরাফি ছয় ওভারে ২৬ রান দিয়ে একটি, নাঈম সাত ওভারে ২৮ রানে একটি এবং মাহমুদউল্লাহ পাঁচ ওভারে ২৭ রানে একটি উইকেট নেন। সাইড স্ট্রেইনের জন্য আবুল হাসান রাজু এক ওভার বল করে ড্রেসিংরুমে ফিরে গেছেন। বদলি ফিল্ডার নিয়ে খেলার বাকিটা চালিয়েছেন মুশফিক।
৩১.১ ওভারে অলআউট হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এতেই বোঝা যায় কি বোলিং-ফিল্ডিং হয়েছে। এরচেয়ে ভালো বোলিং এবং ফিল্ডিং হতে পারে না। যে তামিমের ফিল্ডিং নিয়ে সবসময় প্রশ্ন থাকে, তিনি পর্যন্ত কোন ক্যাচ মিস করেননি। শুরুর এবং শেষ ক্যাচ তার হাতে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যানদের কে কত করেছে তা না বললেও চলবে। তাদের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ড্যারেন ব্রাভোর ২৮ রান। অতএব বুঝতেই পারছেন কেন বলার প্রয়োজন নেই।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশের এটি টানা তৃতীয় জয়। ২০১১ সালে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচটি চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ স্টেডিয়ামে জিতেছিলো স্বাগতিকরা। ১৬০ রানের রোমাঞ্চকর এই জয়টি সবচেয়ে বড়। আগের বড় জয়ের একটি ২০০৬ সালে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ১৪৬ রানের, পরেরটি একই মৌসুমে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১০১ রানের।
নিউজরুম